Advertisement
Advertisement

Breaking News

নাতি-নাতনি

মন গলল দাদুর, হোম থেকে অসহায় নাতি-নাতনিদের বাড়ি ফিরিয়ে আনলেন

দুই খুদের বাবাকে খুনের দায়ে মা জেলবন্দি৷

Grandfather brings back his orphan grandchildren in Katwa
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 1, 2019 8:22 pm
  • Updated:August 1, 2019 8:22 pm

ধীমান রায়, কাটোয়া: বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কের জেরে মায়ের হাতে খুন হয়েছেন বাবা। প্রেমিক-সহ মা জেল হেফাজতে। এই পরিস্থিতিতে কাটোয়ার বিজয়নগর গ্রামে দুই অসহায় নাবালক-নাবালিকা ভাইবোনের দায়িত্ব তাদের মামাবাড়ির লোকজন নিতে চাননি। কয়েকদিন পুলিশ হেফাজতে কাটানোর পর তেরো বছরের সুদীপ্ত মণ্ডল এবং বছর দশের সুদীপ্তাকে যেতে হয়েছিল হোমে। তবে অবশেষে হোমের জীবন থেকে মুক্ত হয়েছে দুই ভাইবোন৷ মন গলেছে দাদু জ্যোতিষচন্দ্র মণ্ডলের। নাতি,নাতনিকে নিজের কাছে রাখতে মনস্থির হয়েছেন তিনি৷ দাদুর হাত ধরে সুদীপ্ত আর সুদীপ্তা ফিরে এসেছে বাড়িতে।

[আরও পড়ুন: বিদ্যাসাগরের পর রবীন্দ্রনাথ, বনগাঁর কলেজে মূর্তি ভাঙচুরে নাম জড়াল বিজেপির]

বাবা, মা কেউ নেই। বাড়ি ফাঁকা। তবু হোম থেকে বাড়ি ফিরতে পেরে কিছুটা স্বস্তিতে সুদীপ্ত,সুদীপ্তা। বৃহস্পতিবার থেকে তারা স্কুলে যাওয়া শুরু করেছে। নিদারুণ বিপর্যয়ের স্মৃতি ভুলে নতুন করে জীবন শুরু করতে চায় সুদীপ্ত,সুদীপ্তা। তারা গ্রামে ফেরার পর খুশি প্রতিবেশীরাও। গ্রামবাসীরাও দরিদ্র অসহায় ভাইবোনের খবর নিচ্ছেন। শুধু দাদুই নয়, সুদীপ্ত-সুদীপ্তার পাশে দাঁড়িয়েছেন বিজয়নগর হত্যাকাণ্ডের তদন্তকারী অফিসার পঙ্কজ নস্করও। পঙ্কজবাবু জানিয়েছেন, সুদীপ্ত ও সুদীপ্তার পড়াশোনার যাবতীয় খরচ তিনি বহন করবেন। আর ‘পুলিশকাকু’ কে পাশে পেয়ে মনে জোর পেয়েছে সুদীপ্ত,সুদীপ্তা।

Advertisement

দিনটা ছিল ১৮ জুলাই৷ সুদীপ্ত,সুদীপ্তার বাবা সুজিত মণ্ডলের দেহ উদ্ধার হয় নিজেদের ঘর থেকে। ওই ঘটনায় নিহতের বাবা জ্যোতিষচন্দ্র তাঁর পুত্রবধূর বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নেমে নিহতের স্ত্রী শম্পা মণ্ডল ও প্রতিবেশী যুবক নয়ন পালকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ধৃতরা জেরায় স্বীকার করে, বিবাহ বহির্ভূত  সম্পর্কের জেরেই শম্পা ও নয়ন শ্বাসরোধ করে সুজিতকে খুন করেছে।

Advertisement

বাবার মৃত্যু ও মায়ের কারাবন্দি অবস্থা থেকে সুদীপ্ত,সুদীপ্তার খোঁজ নেয়নি মামারবাড়ির কেউ। দাদু জ্যোতিষচন্দ্রও প্রথমদিকে নাতি,নাতনিকে নিজের কাছে রাখতে অস্বীকার করেন। ফলে পুলিশ দু’জনকে পাঠিয়েছিল সরকারি হোমে। সুদীপ্ত বহরমপুরের একটি হোমে ছিল। সুদীপ্তাকে পাঠানো হয়েছিল বর্ধমানেরই একটি সরকারি হোমে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার তাদের দাদু জ্যোতিষচন্দ্র নাতি-নাতনিকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেন আদালতে৷ বিচারক তা মঞ্জুর করার পর পুলিশ হোম থেকে দু’জনকে নিয়ে এসে বুধবার সন্ধ্যায় দাদুর হাতে তুলে দেন।

[আরও পড়ুন: ক্রেডিট কার্ড যাচাইয়ের নামে প্রতারণা, লক্ষাধিক টাকা খোয়ালেন অবসরপ্রাপ্ত রেলকর্মী]

সুদীপ্ত সুদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। আর বোন সুদীপ্তা বিজয়নগর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। বৃহস্পতিবার সুদীপ্তর পরীক্ষা ছিল। বাড়ি ফিরেই পরেরদিন স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দেয়। বোন সুদীপ্তাও স্কুলে গিয়েছিল। জ্যোতিষচন্দ্র বলেন, ‘আমি বাড়িতে একা থাকি। বয়স হয়েছে। দরিদ্র মানুষ। তাই নাতি-নাতনির ভরণপোষণের চিন্তা করে প্রথমে ওদের দায়িত্ব নিতে রাজি হইনি। পরে মন খারাপ হওয়ায় ঠিক করেছি, যতদিন বেঁচে আছি ওদের দেখাশোনা করব।’ কাটোয়া থানার এস আই পঙ্কজ নস্কর ওই মামলার তদন্তকারী অফিসার। তিনি এই তদন্তের জন্য সুদীপ্ত, সুদীপ্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় থেকেই স্নেহের বাঁধনে জড়িয়ে পড়েন। পঙ্কজবাবুর কথায়, ‘সুদীপ্ত আর সুদীপ্তা আমার সন্তানের মতই। ওদের পড়াশোনার সব খরচ বেতন থেকে বহন করব। কাটোয়া থেকে অন্যত্র পোস্টিং হয়ে গেলেও এই দায়িত্ব পালন করব।’ বাবাকে হারিয়ে, মায়ের থেকে দূরে সরে গিয়েও যে আরেক অভিভাবক পেল সুদীপ্ত আর সুদীপ্তা, তাতে বেশ খুশি দুই ভাইবোন৷

ছবি: জয়ন্ত দাস।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ