সৌরভ মাজি, বর্ধমান: জয়ের ব্যবধান বিশাল। আবার তৃণমূল প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের ১০ শতাংশও পায়নি বহু কেন্দ্রে। আবার অনেক কেন্দ্রে বিরোধীদের সম্মিলিতভাবে প্রাপ্ত ভোটও তৃণমূল প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোটের ২০ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছতে পারেনি। জেলা পরিষদের অনেক আসনেই বিরোধীদের প্রাপ্ত ভোট পাঁচ অঙ্কেও পৌঁছয়নি। চার অঙ্কে পৌঁছয়নি এমন কেন্দ্রও রয়েছে। পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের আসনগুলির ফলাফল পর্ষবেক্ষণ করে এমনই চিত্র দেখা গিয়েছে।
[প্রধান পদের লড়াইয়ে বাম ঘরে পদ্ম, তবুও হল না শেষরক্ষা]
বিরোধীদের এমন শোচনীয় পূর্ব বর্ধমান জেলাজুড়েই। আর এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ, তৃণমূল কীভাবে এই বিশাল ব্যবধানে জিতেছে তা তারা নিজেরাও জানে। মানুষের প্রকৃত রায় এটা নয়। গণতন্ত্রকে হত্যা করে, বিরোধীদের উপর হামলা করে, কারচুপি করে তৃণমূল জিতেছে বলে অভিযোগ করেছে বিরোধীরা। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের দাবি, উন্নয়নের পক্ষে জনতা রায় দিয়েছেন। এখন নাচতে না পেরে উঠোন বাঁকা তো বলবেই সিপিএম-বিজেপি। তৃণমূলের এক নেতার কথায়, রাম-বাম জোটকে মানুষ বরখাস্ত করেছেন এবারের নির্বাচনে। বিধানসভা ভোটে হাতের সঙ্গে মিলেছিল কাস্তে-হাতুরি, এবার পদ্মফুলে জুড়েছিল কাস্তে-হাতুরি। মানুষ এই অনৈতিক জোটকে প্রত্যাখ্যান করে বুঝিয়ে দিয়েছে তৃণমূলের বিকল্প তৃণমূলই।
[পেলেন না জয়ের খবর, হাসপাতালে মৃত্যু জখম তৃণমূল প্রার্থীর]
জেলা পরিষদে বিরোধীরা সর্বনিম্ন ভোট পেয়েছে খণ্ডঘোষ ব্লকে ৪ নম্বর আসনে। সেখানে বিজেপি প্রার্থী হরেকৃষ্ণ মণ্ডল ভোট পেয়েছে মাত্র ৯৫৬টি। সেখানে তৃণমূল প্রার্থী মহম্মদ অপার্থিব ইসলাম (ফাগুন) ভোট পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৮৬২টি। এখানে সিপিএমের কোনও প্রার্থী ছিল না। আউশগ্রাম-১ ব্লকের ৫৪ নম্বর জেলা পরিষদ আসনে বিরোধী প্রার্থী ছিলেন শুধুমাত্র এসইউসিআই-এর মনসা মেটে। তিনি ভোট পেয়েছেন মাত্র ১৭৪০টি। সেখানে তৃণমূলের বিউটি মাঝি পেয়েছেন ৩৪ হাজার ২২৭ ভোট। কালনা-১ ব্লকের ২২ নম্বর জেলা পরিষদ আসনে একমাত্র বিরোধী প্রার্থী বিজেপির মিতালি হাঁসদার প্রাপ্ত ভোট ২০৫১টি। তৃণমূল প্রার্থী সেখানে ভোট পেয়েছেন ৩০ হাজার ৬১৭টি। বিরোধীদের প্রাপ্ত ভোট তুলনায় মন্দের ভাল পূর্বস্থলীর দুটি ব্লকে। বিরোধী প্রার্থী হিসেবে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন পূর্বস্থলী-১ ব্লকের ৩৫ নম্বর আসনের বিজেপি প্রার্থী সঞ্চিতা সরকার। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ১২ হাজার ৭২টি। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন পূর্বস্থলী-২ ব্লকের ৪০ নম্বর জেলা পরিষদে বিজেপির মিন্টু সাহা। তিনি ১১৬৯২ ভোট পেয়েছেন।
[২০ বছরের পুরনো পঞ্চায়েত বেদখল, দুধকুমারের নেতৃত্ব নিয়ে উঠছে প্রশ্ন]
বহু কেন্দ্রেই বিরোধীদের প্রাপ্ত ভোট ১০ হাজার পেরোয়নি। কেন এমন হাল?
সিপিএম জেলা সম্পাদক অচিন্ত্য মল্লিক জানান, এটা কোনও ভোট হয়নি। প্রশাসনের একাংশ আর তৃণমূল মিলে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে নির্বাচনের নামে। বিজেপির জেলা সভাপতি সন্দীপ নন্দীও একই অভিযোগ করেছেন। তৃণমূল জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেছেন, মানুষ রায় দিয়েছেন। সেটাও ওদের মানতে কষ্ট। জনবিচ্ছিন্ন দুটি দল হাত মিলিয়েছিল তৃণমূলকে হারাতে। মানুষ তার যোগ্য জবাব দিয়েছে। এর পর কী করবে বিরোধীরা তারও প্রস্তুতি অবশ্য শুরু করেছে তারা। তাদের দাবি, তৃণমূলের আসল পরীক্ষা সামনের লোকসভা নির্বাচনে। সেখানে বোঝা যাবে কার দৌড় কতটা। সেই লক্ষ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা।