জ্যোতি চক্রবর্তী, বনগাঁ: মিড-ডে-মিল রান্নার বরাত পাওয়া স্বনির্ভর গোষ্ঠীর এক সদস্য এইডস আক্রান্ত। তা জানতে পেরে কার্যত জোর করেই তাঁকে রান্নার কাজ থেকে সরিয়ে দিলেন স্কুলপড়ুয়াদের অভিভাবকরা। তাঁদের বিরোধিতায় মুখ খুলতেই পারলেন না স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। এমনকী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা স্কুলে গিয়ে এইডস সম্পর্কে সকলকে সচেতন করার পরও জট কাটল না। উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার এক প্রাথমিক স্কুলের এই ঘটনা ঘিরে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে।
চলতি মাসের প্রথম দিন থেকে গাইঘাটা থানার আংড়াইল মানবতা বিদ্যাপীঠে প্রাথমিক বিভাগে মিড-ডে-মিল রান্নার দায়িত্ব পায় বাবা লোকনাথ স্বনির্ভর গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠীর সদস্য বীথিকা বসু HIV আক্রান্ত। সেকথা জানার পর থেকেই তাঁকে দিয়ে রান্নার কাজ করানো যাবে না, এই দাবিতে সরব হন অভিভাবকদের একটা বড় অংশ। বিরোধিতার মুখে পড়ে বীথিকা বসু বিডিও’র দ্বারস্থ হন এবং ‘উত্তর ২৪ পরগনা নেটওয়ার্ক ফর পিপল লিভিং উইথ HIV এইডস’ সংগঠনের কাছে সমাধানের জন্য আবেদন করেন।
[আরও পড়ুন: অর্জুন সিংয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ, সমবায় ব্যাংকে রাতভর তল্লাশি পুলিশের]
বৃহস্পতিবার বনগাঁ মহাকুমা লিগাল সার্ভিস, বনগাঁ হাসপাতালে আইসিটিসি কাউন্সিলর ও নেটওয়ার্ক ফর পিপল লিভিং উইথ HIV এইডস সংগঠনের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল অভিভাবকদের বোঝাতে স্কুলে যায়। তাঁরা বোঝানোর চেষ্টা করেন যে HIV আক্রান্ত মানুষের সঙ্গে মেলামেশা করলে, তাঁর হাতের রান্না খেলে কোনও সংক্রমণ হয় না। কিন্তু প্রধান শিক্ষিকাকে সামনে রেখে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেও কোনও ফল মেলে না। অভিভাবকদের দাবি, এইডস আক্রান্ত মহিলা রান্না করলে তাঁদের সন্তানরা সেই খাবার খাবে না। সংগঠনের সভাপতি সমীর বিশ্বাস বলেন, “আমরা স্কুলে এসে অভিভাবকদের বোঝালাম। তাঁরা কিছু বুঝতেই চাইছেন না। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে জানাব।”
বীথিকা দেবীকে নিয়ে অভিভাবক সুস্মিতা বাড়ুই বলছেন, “ওনাকে বসিয়ে টাকা দেওয়া হোক। ওনার হাত কেটে সেখান থেকে অন্যরা সংক্রমিত হতে পারে।” স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা প্রতিমা সরকারের বক্তব্য, “অভিভাবকরা যা চাইবেন, সেটাই আমাকে করতে হবে।অন্য কিছু আমার পক্ষে সম্ভব না।” ঘটনার খবর পৌঁছেছে গাইঘাটার বিডিওর কাছে। বিডিও বিব্রত বিশ্বাস বলেন, “ঘটনার কথা শুনেছি। ওই মহিলাকে কাজ করতে বাধা দেওয়া অনুচিত। আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
[আরও পড়ুন: ফের ট্রেনে মিলল কয়েক কোটি টাকার হাতির দাঁত, জালে ভিন রাজ্যের নাগরিক]
বীথিকা বসু ২০১৪ সাল থেকে HIV আক্রান্ত হওয়ার পরেই তাঁর স্বামীর সঙ্গে বিবাদ শুরু হয়। এরপরও দুই কন্যা সন্তান নিয়ে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। যোগ দিয়েছেন এই স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে। বীথিকা দেবীর কথায়, “গোষ্ঠীর মহিলারা ও কয়েকজন অভিভাবক ভুল বোঝাচ্ছেন। আমি চাই, মাথা উঁচু করে এখানেই কাজ করতে।” মানবতা বিদ্যাপীঠের এহেন অমানবিক ঘটনায় হতাশ স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থেকে প্রশাসনের আধিকারিক সকলেই।
শুনুন তাঁদের বক্তব্য: