Advertisement
Advertisement
HIV

রোগের ভয় তুচ্ছ করে প্রেমের জোয়ারে HIV পজিটিভ যুগল, সাত পাকে বাঁধা পড়লেন সুনীতা-সৌমিত্র

মনকে 'পজিটিভ' করেই তাঁরা গাইলেন জীবনের জয়গান।

HIV positive couple gets married avoiding social stigma at Sonarpur, all celebrate the special event | Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:February 12, 2023 8:34 pm
  • Updated:February 12, 2023 9:06 pm

দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: সকাল থেকে বাজছিল ‘বিসমিল্লার পাগলা সানাই’। রজনীগন্ধার মালায় ভরে উঠেছে প্যান্ডেল। আলোতে ঝলমল করছে চারিদিক। প্রস্তুত বিবাহ বাসর। অতিথি আপ্যায়ণ যে কোনও আর পাঁচটা বিয়েবাড়িকে ছাপিয়ে গিয়েছে। সে তো আর পাঁচটা বিয়েতেই হয়। তাহলে আর ঘটা করে বলার কী আছে? আছে বইকী। এই বিয়ের পাত্র-পাত্রী আর পাঁচজনের মতো নন, তাঁরা দু’জন ‘পজিটিভ’ মানুষ। শরীরে বয়ে চলেছেন এইচআইভি পজিটিভের (HIV Positive) অভিশাপ। অবশ্য তাকে হেলায় দূরে সরিয়ে দিয়ে মন থেকে তাঁরা সত্যিই ‘পজিটিভ’। এহেন দুই নরনারীর সাত পাকে বাঁধা পর্বের সাক্ষী রইল সোনারপুরের (Sonarpur) গোবিন্দপুর।

HIV
ছবি: বিশ্বজিৎ নস্কর।

মেদিনীপুরের (Midnapore) সুনীতা যাদব ও উত্তর ২৪ পরগনার (North 24 Parganas)সৌমিত্র গায়েন। দু’জনই এইআইভি পজিটিভ। তাঁদের বিয়েতে কোনওরকম কার্পণ্য করেননি উদ্যোক্তারা। কারণ, তাঁরাও মানসিকভাবে অত্যন্ত ‘পজিটিভ’। রবিবার অগ্নিসাক্ষী রেখে মালা বদল করেন ও সাত পাক ঘরেন পাত্র-পাত্রী। বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করেন মহিলা পুরোহিত। আর তাতেই গাট -ছড়া বাঁধলো দুটি নিষ্পাপ মনের মানুষ। আর তাকে সম্মতি দিল সমাজ।

Advertisement
HIV Marriage
ছবি: বিশ্বজিৎ নস্কর।

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার সোনারপুরের গোবিন্দপুরে ‘আনন্দ ঘর’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন এইচআইভি পজিটিভ শিশুদের নিয়ে। যে সমস্ত পিতা-মাতা এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান, তাঁদের বাচ্চাদের এই হোমে রেখে বড় করা হয়। সেরকমভাবেই এই হোমে উপস্থিত হয়েছিল মেদিনীপুরের সুনীতা যাদব। ছোটবেলা থেকেই বাবা-মাকে হারিয়ে এই হোম থেকেই পড়াশোনা করে সে। ‘আনন্দঘর’ হোমেই সে শৈশব-কৈশোর কাটিয়ে যৌবনে পা রাখে। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে এখন তিনি ‘কাফে পজিটিভ’ নামে একটি কফি শপে কর্মরতা। প্রতি মাসে তাঁকে মেডিক্যাল কলেজে যেতে হয় অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল থেরাপির জন্য।

Advertisement

[আরও পড়ুন: কোভিড কালে রানি এলিজাবেথের প্রশংসা পেয়েছিলেন, সেই ভারতীয়কে দেশ ছাড়ার নির্দেশ ব্রিটেনের]

সেখানেই তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় সৌমিত্র গায়েন নামে উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালির এক যুবকের। ছোটবেলায় বিড়ালের কামড়ের ইনজেকশন নিতে গিয়ে সিরিঞ্জ থেকে আক্রান্ত হন এইচআইভি পজিটিভে। সৌমিত্র সঙ্গে প্রথম দেখাতেই মন দেওয়া-নেওয়া। ঈশ্বর হয়ত চেয়েছিলেন, তাঁদের এই সম্পর্কের পরিণতি পাক। আর সেই সম্পর্ক গড়াল বিয়েতে। রবিবার সন্ধ্যায় সেই শুভক্ষণ হল সম্পন্ন। যে বিয়ে আর পাঁচটা অন্য সব বিয়েকে মলিন করে দিয়েছে সম্পর্কের ভালবাসায়। দু’জন এইচআইভি পজিটিভ রোগী হওয়ার সত্ত্বেও যেভাবে তাঁরা বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা সত্যি অকল্পনীয়। আর তাঁদের এই সিদ্ধান্তকে স্বীকৃতি দিতে কোনও অংশেই খামতি রাখেননি উদ্যোক্তা কাকুরা। বিয়ের কার্ড ছাপানো থেকে অতিথি আপ্যায়ণ সবই হয়েছে নিয়ম মেনে।

HIV Marriage 1
ছবি: বিশ্বজিৎ নস্কর।

তবে এ বিষয়ে সব থেকে উদ্যোগী হয়েছেন যে মানুষটি তিনি হলেন কলকাতা পৌরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী। অয়নবাবু বলেন, ”সমাজে এইচআইভি মানুষদের নিয়ে এখনো অনেকে বাঁকা চোখে দেখেন। আমরা সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে চাই। সঠিক চিকিৎসা দিলে এবং সমাজের মানুষের ভাল ব্যবহার পেলে এইচআইভি পজিটিভরা যে এগিয়ে যেতে পারে, সেটা আমরা বোঝাতে চেয়েছি। তারা সমাজে কোথাও যেন কোন রকম প্রতিবন্ধকতা স্বীকার না হন সেটাও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।”

[আরও পড়ুন: যোগীরাজ্যে গোহত্যা! ২৪টি গরুকে ঠেলে দেওয়া হল ট্রেনের সামনে, কাটা পড়ে মৃত ১১]

এই বিয়ের অনুষ্ঠানে পাত্রপক্ষের আংটি কেনা থেকে খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা সবই করেছেন সমাজের বেশ কয়েকজন সহৃদয় ব্যক্তি। আর তাঁরাই উদ্যোগী হয়েছেন এই বিয়েকে আরও বেশি মঙ্গলময় করে তুলতে। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে মৃণাল বিশ্বাস বলেন, ”সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি পেলে দুজন পজিটিভ এইচআইভি পিতা-মাতা সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে পারেন, এটা সম্ভব। আমরা চাই সমাজের প্রত্যেকটা মানুষ এগিয়ে এসে এইচআইভি পজিটিভ শিশুদের দায়িত্ব গ্রহণ করুক।”

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ