সন্দীপ মজুমদার: শিব-দুর্গা-কালী সকলেই মন্দিরে থাকেন। কিন্তু সরস্বতী? না, বাগদেবীর জন্য মন্দিরের চল এ রাজ্যে খুব বেশি নেই। তাঁর আরাধনা স্কুলে স্কুলে। কখনওবা বাড়িতে। ইদানীং ক্লাবে বা পাড়াতেও আয়োজন করে সরস্বতী পুজো করা হয়। কিন্তু সরস্বতীর জন্য মন্দিরের নমুনা খুঁজেও তেমন চোখে পড়ে না। অথচ হাত বাড়ালেই আছে সে দৃষ্টান্ত। এই হাওড়ার উদয়নারায়ণপুরে আছে সরস্বতীর মন্দির। বাগদেবীর আরাধনা নিয়ে সেখানে ইতিমধ্যে শুরু উত্তেজনা।
[ সামান্য ইরেজার দিয়ে সরস্বতী বানিয়ে নজির বাংলার এই শিল্পীর ]
প্রায় ৪০ ফুট উঁচু শ্বেতপাথরের মন্দির। ৩ ফুট উঁচু বিগ্রহ। নিত্যদিনের আরাধনা। মাঘের পঞ্চমীতে সেখানে সাজো সাজো রব। সাধারণত অন্যান্য দেবদেবীর মন্দির দেখা যায় বাংলার সর্বত্র। শীতলা থেকে মনসা বা বিশালাক্ষ্মীও মন্দিরে থাকেন। কিন্তু বাগদেবী যেন অনেকাংশে ব্রাত্যই। ব্যতিক্রম উদয়নারায়ণপুরের খেমপুর গ্রাম। এবং মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা সন্তোষ কুমার জানা। পেশায় চায়ের ব্যবসায়ী। কিন্তু এলাকার বাসিন্দারা তাঁকে চেনেন অন্য পরিচয়ে। সকলের কাছেই তিনি আদ্যন্তে একজন শিক্ষানুরাগী। বরাবরই ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। কৃতীদের হাতে পুরস্কার তুলে দিয়ে উৎসাহ দিয়েছে। এবার অর্থের অভাবে কোনও পড়ুয়া পড়াশোনায় ইতি টানতে চাইলে তিনিই এগিয়ে এসেছে। সবরকম সাহায্য করে পড়াশোনা চালানোর ব্যবস্থা করেছেন। এভাবেই চলছিল। আচমকাই একদিন মেলে স্বপ্নাদেশ। সন্তোষবাবু স্বপ্ন দেখেন, মা সরস্বতী স্বপ্নে এসে তাঁকে মূর্তি স্থাপন করে পুজো-আচ্চার নির্দেশ দেন। তখনই পরিবারের সদস্যদের সে কথা জানান তিনি। তাঁরাও নারাজ হননি। তৈরি হয় মন্দির তৈরির কাজ। ২০১৬ সাল থেকেই মন্দির প্রতিষ্ঠা করে নিত্য পুজোর আয়োজন করা হয়।
[ তালপাতার সরস্বতী, রানিনগরে বাগদেবীর আরাধনায় চমক ]
সন্তোষবাবুর ভাইপো প্রবীর জানার দাবি, রাজ্যে এটাই একমাত্র সরস্বতী মন্দির। সে কারণে জেলার বাইরে থেকেও এই মন্দির নিয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন মানুষ। সাধারণত এ ধরনের মন্দিরের কথা প্রায় শোনাই যায় না। পুজো উপলক্ষে এই মুহূর্তে সাজো সাজো রব খেমপুরে। অল্পদিনেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে এই পুজো। এখন প্রায় ১০০০ থেকে ১২০০ লোক পাত পেড়ে খান এই পুজোয়। তাদের মধ্যে যেমন আছে পড়ুয়ারা, তেমন তাদের অভিভাবকরাও। সন্তোষবাবুর এই উদ্যোগে খুশি উদয়নারায়ণপুরের বিধায়ক সমীর পাঁজাও। তিনি জানাচ্ছেন, “অল্পদিনের মধ্যেই দারুণ একটা মিলনক্ষেত্র হয়ে উঠেছে এই মন্দির। বহু মানুষের সমাগম হয়। হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকলে এক হয়ে বাগদেবীর আরাধনায় রত হন। সম্প্রীতির নিদর্শন হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করেছে এই মন্দির।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.