Advertisement
Advertisement

Breaking News

জমির জন্য চাপ, না দেওয়ায় প্রতিবেশীর দরজায় পাঁচিল তুলে ‘শিক্ষা’

তালিবানি ফতোয়ার ছায়া হুগলির পান্ডুয়ায়। কার্যত বন্দিদশা কৃষক পরিবারের।

In Hooghly, family built up wall to stop neighbours entering into house
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:March 11, 2018 8:12 pm
  • Updated:September 12, 2019 3:34 pm

দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: জোর যার মুলুক তার। নিজের ১০০ শতক জমি প্রতিবেশীকে নিঃস্বার্থে দিতে হবে। আর না দিলে প্রাণনাশের হুমকি। তাতেও কাজ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত রীতিমতো তালিবানি কায়দায় বাড়ির সদর দরজার সামনে ৪ ফুট উঁচু পাঁচিল তুলে দিল প্রতিবেশী। এরপরও রেহাই নেই। হুগলির পান্ডুয়ার দ্বারবাসিনী এলাকার একটি পরিবার গত কয়েক দিন ধরে এভাবে কার্যত বন্দি অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।

[বাড়িতে ঢুকে যুবককে লক্ষ্য করে গুলি প্রতিবেশীর, চাঞ্চল্য রানাঘাটে]

Advertisement

ভুক্তভোগী পরিবার যে ৪ ফুটের পাঁচিল টপকে যাবেন তারও উপায় নেই। কারণ তাহলে প্রাণ সংশয় হতে পারে। পাঁচিলের ওপার থেকে যে ফতেয়া জারি করা হয়েছে। প্রতিবেশী ওই পরিবারের সদস্যরা সর্বক্ষণ কাটারি-কুড়ুল নিয়ে পাহারা দিচ্ছে। সদর দরজার সামনের পাঁচিল টপকালে ওই সব অস্ত্রের আঘাতে প্রাণ যেতে পারে। তাই নজর এড়াতে বাধ্য হয়ে বাড়ির পিছন দিকের সাড়ে ৬ ফুট উঁচু পাঁচিলে মই দিয়ে উঠে টপকে বাইরে যেতে হচ্ছে হরেকৃষ্ণ পালকে। শুনলে মনে হবে আফগানিস্তানে কোনও পরিবারের উপর তালিবানি ফতেয়া জারি করা হয়েছে। বর্তমানে হরেকৃষ্ণ পাল ও তাঁর স্ত্রী, দুই ছেলেমেয়ে ও অবিবাহিত এক দিদিকে নিয়ে গত দু’সপ্তাহ ধরে আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিন কাটাচ্ছেন। ক্রমশ মৃত্যুভয় গ্রাস করছে গোটা পরিবারকে। অথচ এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে অন্যান্য প্রতিবেশীরাও ঝামেলা এড়াতে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছেন। হরেকৃষ্ণ পাল পান্ডুয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করার পরও সমস্যার কোনও সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ। ভুক্তভোগী ওই পরিবার জানিয়েছে সমস্যার সমাধান না হলে মৃত্যুকে বেছে নেওয়া ছাড়া তাদের কাছে আর দ্বিতীয় কোনও পথ খোলা নেই।

Advertisement

EBHABEI PANCHIL TAPKE BARIR BAIRE JETE HOCHHE HAREKRISHNA PALKE

[ফের উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড, দাউ দাউ করে জ্বলছে বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল]

হরেকৃষ্ণবাবু পেশায় চাষি। বাড়িতে গরুও রয়েছে। হরেকৃষ্ণ বাবু জানান ২০১৭ সালে স্বাধীনতা দিবসের দিন থেকে প্রতিবেশী বিশ্বজিৎ পালের সঙ্গে জমি-জায়গা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে বিবাদের সূত্রপাত। ওই ব্যক্তির অভিযোগ তাঁর বড়ির সামনে ১০০ শতক জমি প্রতিবেশী বিশ্বজিৎ পাল নেওয়ার জন্য জোরাজুরি করে। কিন্তু তিনি অস্বীকার করায় পরিবারের উপর অত্যাচার শুরু হয়। এরপরই হরেকৃষ্ণ বাবু হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। উচ্চ আদালত এক্ষেত্রে ওই জমির উপর স্থগিতাদেশ জারি করে। অভিযোগ এরপরই বিশ্বজিতবাবু প্রতিবেশী হরেকৃষ্ণবাবুর বাড়ির সদর দরজার সামনে পাঁচিল তুলে দেন। হরেকৃষ্ণবাবুর পরিবার এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে তাঁর দিদি প্রতিমা পালকে মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তাঁকে ইট ছুড়ে মারা হয়। জখম দিদিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার জন্য তখন কেউ এগিয়ে আসেনি। বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে দিদিকে কাঁধে করে মই দিয়ে উঠে পাঁচিল টপকে হাসপাতালে নিয়ে যান ওই ব্যক্তি। বর্তমানে গোটা পরিবার এখন চরম অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে জীবন কাটাচ্ছে।

[স্কুলের গেট থেকে ৩ ছাত্রীকে অপহরণ, উঠছে পাচারের অভিযোগ]

হরেকৃষ্ণবাবুর স্ত্রী রেনুকা পাল জানান গত ১৫ দিন ধরে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারছে না। একপ্রকার সমাজ থেকে নির্বাসিত হয়ে জীবন কাটাচ্ছে গোটা পরিবার। রেণুকাদেবী কাঁদতে কাঁদতে জানান তাঁর পক্ষে পাঁচিল টপকানো সম্ভব নয়। তাই ছেলেমেয়েরা খেতে চাইলে বাইরে থেকে কিছু খাবার এনে তাদের মুখে তুলে দিতে পারছেন না। মা হয়ে ছেলেমেয়ে চোখের সামনে খিদের জ্বালায় কষ্ট পাচ্ছে। এ দৃশ্য আর দেখতে পারছেন না ওই বধূ। তাঁর অভিযোগ বাড়ির বাইরে বেরোলে ধারাল অস্ত্র নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকছে প্রতিবেশীরা। তাই প্রাণের দায়ে বাড়ির পিছন দিকে এক মানুষ সমান উঁচু পাঁচিল টপকে তাঁর স্বামীকে বাইরে যেতে হচ্ছে। যে কোনও সময় প্রতিবেশীর আক্রমণে তাঁদের প্রাণ চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা রেণুকাদেবীর। এই মুহূর্তে প্রশাসন হস্তক্ষেপ না করলে গোটা পরিবারের কাছে আত্মহত্যা করা ছাড়া কোনও পথ থাকবে না বলে জানান হরেকৃষ্ণ পাল। যদিও এবিষয়ে বিশ্বজিৎ পালের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

[রামপুরহাটে জাতীয় সড়কে দুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন অনুব্রত মণ্ডল]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ