বাবুল হক, মালদহ: পায়ের হাড় ভেঙে আট টুকরো! কোনও কবিরাজি পদ্ধতিতে নয়, রিং ফিক্সেটরের মাধ্যমে মেশিনের সাহায্যে টুকরো হাড়গুলি জোড়া লাগানো হয়েছে। যাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ইলিজেরভ ফিক্সেশন পদ্ধতি। এবার সেই পদ্ধতি অবলম্বনে বিরল চিকিৎসা হল মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অস্থি বিভাগে। যা মালদহ মেডিক্যালে প্রথমও বটে।
[শহরে জন্ম রূপকথার ‘মৎস্যকন্যা’র, বিস্মিত চিকিৎসকমহল]
ভাঙা হাড় জোড়া লাগানোর কাজ প্রতিনিয়ত করে থাকেন অস্থি বিশেষজ্ঞরা। অস্ত্রোপচার করে প্লেট ফিক্সেটরের মাধ্যমে ভাঙা হাড় জোড়া লাগানো হয়। কিন্তু অস্ত্রোপচার ছাড়াই ভাঙা হাড় জোড়া লাগানো এবং তার চব্বিশ ঘণ্টা পরই ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাঁটানো। এমন চিকিৎসা ব্যবস্থা অত্যন্ত বিরল। চ্যালেঞ্জ নিয়ে সফলও হলেন মালদহ মেডিক্যালের চিকিৎসকরা। মেডিক্যাল সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূমের মুরারইয়ের বাসিন্দা জয়প্রকাশ সাহার সফল অপারেশন হয়। বছর তেত্রিশের জয়প্রকাশ দু’মাস আগে মোটর বাইক দুর্ঘটনায় ডান পা ভেঙে যায়। তাঁর দুই মেয়ে ছিলেন ঝাড়খণ্ডের এক আত্মীয়ের বাড়িতে। মেয়েদের নিয়ে মোটরবাইকে ফিরছিলেন। ঝাড়খণ্ডে অন্য একটি গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে তিনজনই বাইক থেকে ছিটকে পড়েন। মেয়েরা অক্ষত থাকলেও জয়প্রকাশবাবুর ডান পা ভেঙে যায়। পায়ের হাড় ভেঙে ৮ টুকরো হয়ে যায়। ঝাড়খণ্ডের এক নার্সিংহোমে চিকিৎসার জন্য ৭০ হাজার টাকা চাওয়ায় তিনি মালদহ মেডিক্যালে চলে আসেন। হাসপাতালের অস্থি বিশেষজ্ঞ বাপ্পাদিত্য ঘোষের অধীনে শুরু হয় চিকিৎসা।
[টাকা চাওয়ায় বাবাকে মার ছেলের, এয়ারগান থেকে গুলি বাবার]
অস্থি বিশেষজ্ঞ বাপ্পাদিত্য ঘোষ বলেন, ‘‘প্লেট ফিক্সেশনের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার করে হাড় জোড়া লাগানো যেত। কিন্তু পায়ে ক্ষতের সৃষ্টি হয়ে গিয়েছিল। তার উপর কাটা-ছেঁড়া করলে সংক্রমণ হতে পারে। তাই ওই প্রক্রিয়ায় সফল হওয়া যায় না। আমরা ইলিজেরভ ফিক্সেশন পদ্ধতি অবলম্বন করেছি।’’ মেডিক্যালের অস্থি বিশেষজ্ঞের সংযোজন, এই ইলিজেরভ বা রিং ফিক্সেটর পদ্ধতিতে কোনও রকম অস্ত্রোপচার ছাড়াই মেশিনের সাহায্যে হাড় জোড়া লাগানো হয়ে থাকে। যাতে মেশিনের মাধ্যমে রিং ফিক্সেটর বসানো হয়। এতে তেমন কোনও ঝুঁকি নেই। একদিন পরই রোগী ক্রাচে ভর দিয়ে দিব্যি হাঁটতে পারেন। আর দু’ সপ্তাহের মধ্যেই রীতিমতো হাঁটা চলা করতে পারবেন। মালদহে রিং ফিক্সেটর নেই। সেটি কলকাতা থেকে আনা হয়। প্রায় চার ঘণ্টার চেষ্টায় সফল হন মালদহ মেডিক্যালের চিকিৎসকরা। মালদহের ডাক্তারদের হাতযশে দ্রুত সুস্থ হতে পেরে বেজায় খুশি বীরভূমের জয়প্রকাশ সাহা। তাঁর আশা কয়েক দিনের মধ্যে ঠিকমতো হাঁটাচলা করতে পারবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.