অভিরূপ দাস: বনদপ্তরের কড়া নির্দেশ, নীলকন্ঠ পাখি ধরা যাবে না। কিন্তু কে শোনে সেই কথা! বনেদি বাড়ির খাঁচায় ইতিমধ্যেই আটকা পড়েছে নীলাভ পাখনা। কমতে কমতে যাদের সংখ্যা এ রাজ্যে এখন হাতেগোনা। সংরক্ষিত পশুপাখির তালিকার চতুর্থ তফসিলিভুক্ত নীলকণ্ঠ পাখি। কিন্তু, বিরল এই পাখিটিকে বাঁচাতে উদাসীন পুজোর বাড়ির কর্তারা। শুক্রবার দশমীতে বিসর্জনের আগে ইন্ডিয়ান রোলার উড়িয়ে দেওয়া হবে কৈলাসের দিকে। প্রতিবছরই পুজোর আগে বনে-জঙ্গলে ফাঁদ পাতেন পাখি শিকারি। মোটা টাকায় নীলকণ্ঠ পাখি বিক্রি হয়ে যায় শহর ও মফঃস্বলের বনেদি বাড়িগুলোয়।
[ কার্নিভালে আসবেন রেকর্ড বিদেশি, দূষণ-নিয়ন্ত্রণে সতর্ক পুলিশ ও পুরসভা]
মাঝে কয়েকবছর নীলকণ্ঠ পাখি বিক্রিতে ভাটা পড়লেও ফের কেনাবেচা বেড়েছে বলে জানতে পেরেছেন বনকর্তারা। তাতে রাশ টানতেই এবার উৎসবের মরশুম শুরুর পর থেকেই সক্রিয় হয়েছিল বনদপ্তর। জানা গিয়েছে, প্রত্যন্ত সুন্দরবন থেকে চোরা পথে এই পাখি ঢুকছে গালিফ স্ট্রিট-সহ কলকাতা ও লাগোয়া এলাকার পশুপাখির বাজারগুলিতে। সেখানেই তাই সাদা পোশাকে ফাঁদ পেতেছেন বনদপ্তরের আধিকারিকরা। যদি তাঁদের অভিমত, শুধু ধরপাকড় করে এই কারবারের লাগাম টানা যাবে না। সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোও জরুরি। রীতি অনুযায়ী, দশমীর দিন প্রতিমা বিসর্জনের আগে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানো হয়। পৌরাণিক মতে, নীলকণ্ঠ পাখি উড়ে গিয়ে কৈলাসে শিবের কাছে উমার ফিরে যাওয়ার বার্তা পৌঁছে দেবে। কলকাতা-সহ রাজ্যের বহু বনেদি বাড়িতেই দীর্ঘদিন ধরে এই রীতি চলে আসছে। জমিদারদের বংশধরেরা জানিয়েছেন, এখনও রীতি মেনে প্রজা থুড়ি বাড়ির ভৃত্য কিংবা স্থানীয়রাই কলার মোচার মতো দেখতে এই পাখির জোগান দেন। পাখিটির মাথার উপরে কিছুটা আর পালকের নিচের দিকটা নীল রঙের। আয়তন মোটে ২৫ সেন্টিমিটার থেকে ৩৫ সেন্টিমিটার লেজ সমেত। ওজন ৭০ গ্রাম থেকে ১০০ গ্রাম হয়। উজ্জ্বল নীল বর্ণ, বুকের দিকে হালকা বাদামি, চোখ ও ঠোঁট কালো। উড়ন্ত পাখির পাখনার নীলসাদা ছটা দেখলে চোখফেরানো মুশকিল।
পরিবেশবিদরা বলছেন, এই পাখি খোলা জায়গায় থাকতে ভালবাসে। ছোট খাঁচায় রাখলে বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ। পুজোর বাড়িতে কিন্তু আগে থাকতেই পাখি ধরে খাঁচায় রেখে দেওয়া হয়। ফি বছরই তাই দেখা যায় দশমীর দিন উড়িয়ে দেওয়ার পরেও অনেক পাখিই রাস্তায় মরে পড়ে রয়েছে। অন্য বড় পাখিরা তাদের ঠুকরে মেরে দেয়। এই পাখি বর্তমানে লুপ্তপ্রায় প্রজাতির সারণিতে। সে কারণেই নীলকন্ঠ পাখি ধরতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে বনদপ্তর। কিন্তু সে আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দিব্যি চলছে কেনাবেচা। বনদপ্তরের এক কর্তা জানিয়েছেন, বনেদি বাড়িতে পুজো চলাকালীন হানা দেওয়া ঠিক নয়। গ্রেপ্তারিও কার্যত অসম্ভব। তাই নীলকণ্ঠ বাঁচাতে সচেতনতার পথেই হাঁটতে চাইছেন বন্যপ্রাণ শাখার শীর্ষকর্তারা।
ছবি: অরিজিৎ সাহা
[ শহরের পুজোয় নয়া দৃষ্টান্ত, আংশিক দৃষ্টিহীন কুমারী পূজিতা হল সমাজসেবী সংঘে]