শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: আর পাঁচটা দিনের মতো জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল চত্বরে ছিল রোগীর আত্মীয়দের উপচে পড়া ভিড়। কেউ দুপুরে সামান্য কিছু খেয়েছেন। কারও তাও হয়নি। তবে, দূরদূরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন রোগীর আত্মীয়পরিজনদের কাছে এদিন ছিল অপ্রত্যাশিত উপহার। দুপুর হতেই তাঁদের সামনে আচমকা হাজির ধোঁয়া ওঠা খিচুড়ি, সবজি। সঙ্গে নলেনগুড়ের পায়েস। সকলকে পেট পুরে খাইয়ে দাম্পত্য জীবনের ২৫তম বর্ষপূর্তির দিনটি এভাবে রোগীর আত্মীয়দের সঙ্গে উদযাপন করলেন জলপাইগুড়ির মহেশচন্দ্র মণ্ডল ও নূপুর মণ্ডল।
[তমলুকের বারুনি মেলায় নজির, দেহদানের অঙ্গীকার ২৫ জনের]
ছেলে-মেয়ের ইচ্ছে ছিল বিবাহিত জীবনের ২৫তম বর্ষপূর্তির দিনটি একটু অন্যভাবে কাটান তাঁদের বাবা-মা। ডুয়ার্সের বনপথ ঘুরে এসে সন্ধ্যায় শহরের বড় কোনও হোটেলে হোক ডিনার। এই ছিল ভাবনা। কিন্তু তাতে সায় দেননি মহেশচন্দ্র মণ্ডল ও নূপুর মণ্ডল। দু’জনেই জলপাইগুড়ি কৃষি বিভাগের কর্মী। দেখতে দেখতে কেটে গিয়েছে তাঁদের দাম্পত্য জীবনের ২৪ টা বছর। পঁচিশে পা দিয়ে অন্যরকম ভাবে দিনটি পালনের ইচ্ছে ছিল। বৃহস্পতিবার সেই ইচ্ছেই পূরণ করলেন মণ্ডল দম্পতি। সাতসকালে শহরের রায়কত পাড়ায় নিজেদের বাড়িতে রান্নার লোক এনে তিনশো জনের জন্য খিচুড়ি, সবজি রান্না করালেন। নিজের হাতে নলেন গুড়ের পায়েস বানালেন নূপুরদেবী। দুপুরে গামলায় ভরে এই আয়োজন নিয়ে দু’জনেই হাজির জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল চত্বরে। এমনিতে এই সময় রোগীর আত্মীয়দের ভিড় লেগেই থাকে এলাকায়। অনেকেই খুঁজে বেড়ান খাবারের দোকান। ডেকে ডেকে সকলকে খিচুড়ি, সবজি, পায়েস খাওয়ালেন মণ্ডল দম্পতি। তৃপ্তি সহকারে তা খেলেনও সকলে। অপ্রত্যাশিত ভাবে এভাবে খিচুড়ি খাওয়ানোর কারণ শুনে হতবাক অনেকেই। খাওয়া শেষে মণ্ডল দম্পতিকে আশীর্বাদও করলেন বেশ কয়েকজন বয়স্ক মানুষ। তাদেরই একজন নৃপেন রায়। শালবাড়ির এই বাসিন্দার স্ত্রী হাসপাতালে ভরতি। বাইরে প্রতীক্ষালয়ে তাঁর রাত কাটছে। ভালমতো খাওয়া হচ্ছিল না। এদিন পেটভরে খেয়ে তিনি বেশ তৃপ্ত।
[হকাররাও পেল পরিচয়, সিউড়ি সরকারি বাস ডিপোয় এবার চালু ইউনিফর্ম]
একই কথা শুনিয়েছেন মণ্ডলঘাট থেকে আসা এক রোগীর আত্মীয়। তাঁর পকেটে তেমন টাকাকড়ি নেই। চা খেয়েই দুপুরটা কাটিয়ে দেবেন ভেবেছিলেন। এমন সময় খাওয়ানোর জন্য দম্পতির আন্তরিক আবেদন ফেরাতে পারেননি। সবাই পেট পুরে খেয়েছেন আর দীর্ঘায়ু কামনা করেছেন দম্পতির। আর বৈবাহিক জীবনের ২৫তম বর্ষপূর্তির দিনটি এভাবে কাটাতে পেরে খুশি মণ্ডল দম্পতি। জানালেন, “জীবনে ভালমন্দ অনেক খাওয়া হয়েছে। ছেলে-মেয়ের জন্মদিন থেকে পারিবারিক অনুষ্ঠানে আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের ডেকে খাইয়েছেন বহুবার। কিন্তু আজ আত্মীয়স্বজনের চিকিৎসা করাতে এসে হাসপাতালের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা দীনদরিদ্র মানুষজনকে খাওয়াতে পেরে এক অন্যরকম অনুভূতি হল। যা দাম্পত্যের আগামী দিনগুলির কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.