শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: বোরলিতে বিষতেলের গন্ধ। তাই ভোট জয়ের মহাভোজের মেনু বদলে গেল জলপাইগুড়ির তিস্তাপাড়ে। বোরলির বদলে ব্রয়লার। তা দিয়েই গ্রামের দেড় হাজার বাসিন্দার খাওয়া দাওয়ার আয়োজন। তবে দিনভর জমজমাটি এই আয়োজনের ফাকে বোরলি রক্ষায় হাতে হাত মিলিয়ে শপথ নিলেন বিজয়ী তৃণমূল প্রার্থী-সহ তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা। আগেভাগেই ঠিক ছিল কোন বিজয় মিছিল নয়। রাজনীতির রঙ ভুলে রবিবার ছুটির দিনে গ্রামের সব মানুষকে নিয়ে মহাভোজের আয়োজন করা হবে তিস্তাপাড়ে। গ্রামের সব মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে তৈরি করা হয়েছিল মেনু। ভাত, ডাল, ভাজা, আলু পটলের তরকারির পাশাপাশি ধরা ছিল তিস্তা নদীর সুস্বাদু বোরলি মাছের চচ্চরি আর মুরগির মাংস।
কিন্তু সাতসকালে নদীতে বোরলি মাছ মরে ভেসে ওঠার খবর বদলে দিল মেনুচার্ট। গ্রামবাসীদের দাবি, দুই নম্বর স্পার থেকে নাক বরাবর দু কিলোমিটার দূরে নদীর জলে বিষতেল ছিটিয়ে মারা হয়েছে বোরলির চারাপোনা। সকাল সকাল সেই মাছের একটা বড় অংশ চালান হয়ে গিয়েছে বাজারে। যেটুকু পড়েছিল সেটুকুও কুড়িয়ে কাচিয়ে নিয়ে গিয়েছেন আশপাশের মানুষজন। এই দৃশ্য দেখার পর আর ঝুঁকি নেননি তিস্তা পারের সারদাপল্লি গ্রামে জয়ী তৃণমূল প্রার্থী মিনু হাওলাদার। মেনু তালিকা থেকে বাদ করে দেন বোরলি মাছ। বদলে বাড়িয়ে দেওয়া হয় ব্রয়লারের মাংসের পরিমাণ। জানান, গ্রামবাসীদের স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করেই এই সিদ্ধান্ত। তবে এমন একটা আনন্দের দিনে এই খবরে তিস্তারপাড়ের আর পাঁচজন বাসিন্দার মতো মর্মাহত তিনি নিজে। বলেন, ‘বোরলি তিস্তা নদীর সম্পদ। আমাদের তিস্তাপাড়ের পরিচিতি।’ তাই বিজয় উৎসবের এই খাওয়া দাওয়ার আয়োজনের ফাঁকে এদিন গ্রামের সমস্ত মহিলাদের নিয়ে নদীর বোরলি মাছ রক্ষার শপথও নেন তিনি। জানান, নদীতে মাছ শিকারের এই প্রবণতা বন্ধ করতে জোটবদ্ধ ভাবে নদীর উপর নজরদারি চালাবেন তাঁরা।
মিনুদেবীর এই বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে পাশে দাঁড়িয়েছেন গ্রামের পুরুষরাও। বাসু দাস নামে এক বাসিন্দা জানান, তিস্তা নদীর এই সম্পদ রক্ষায় পাশে আছেন তাঁরাও। প্রয়োজনে পালা করে রাত জেগে নদী পাহারা দেবেন তারা। এদিকে বোরলি নিয়ে তিস্তাপাড়ে হইচই হলেও জেলার মৎস্য আধিকারিক শঙ্কর চক্রবর্তী জানান, ঘটনার খবর তাদের জানা নেই। তবে তিস্তায় বোরলি শিকারের এই ধরনের ধ্বংসাত্মক প্রবণতা যাতে বন্ধ হয় তার জন্য পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.