Advertisement
Advertisement

Breaking News

জিয়াগঞ্জ

বরাত দিয়ে তৈরি চপারেই ৩ খুন! জিয়াগঞ্জ হত্যাকাণ্ডে প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য

ধৃত উৎপল বেহেরার জবানবন্দিতে ক্রমশই স্পষ্ট হচ্ছে গোটা ঘটনা।

Jiyagunj murder case: Utpal Behera makes a arms to killed three person
Published by: Sayani Sen
  • Posted:October 21, 2019 3:10 pm
  • Updated:October 21, 2019 3:11 pm

সাবিরুজ্জামান, লালবাগ: রীতিমতো পেশাদার খুনির কায়দায় পরিকল্পনা ছকেই জিয়াগঞ্জ লেবুবাগানের বাসিন্দা শিক্ষক বন্ধুপ্রকাশ পালকে সপরিবার খুন করেছিল ধৃত উৎপল বেহেরা। লাগাতার জেরায় ভেঙে পড়া উৎপলের জবানবন্দি থেকে সেই তথ্যই পুলিশের কাছে ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে। এই জেরার সুবাদেই খুনের দিন দশমীর সকালে উৎপলের পরনে থাকা সেই প্যান্ট উদ্ধার করেছে পুলিশ।

আরও জানা গিয়েছে, তিন তিনটি খুনে ব্যবহার করা সেই চপারটি আদৌ আজিমগঞ্জ থেকে কেনেনি উৎপল। বরং রীতিমতো বরাত দিয়ে তৈরি করিয়েছিল সাগরদিঘির কামারশালায়। ওই শিক্ষক-সহ তাঁর স্ত্রী ও পুত্রকে শেষ করে দেওয়ার জন্য বরাত দিয়ে ন’শো টাকার বিনিময়ে ওই চপারটি বানিয়ে নিয়েছিল উৎপল সাগরদিঘির সাহাপুরের এক প্রতিবেশীর কাছ থেকেই। পুলিশি জেরায় সেই কর্মকার স্বীকারও করেছেন উৎপলকে ওই চপার বানিয়ে দেওয়ার কথা। কাজেই পুলিশের কাছে এখন স্পষ্ট, গ্রেপ্তারের সময় উৎপল যেসব তথ্য দিয়েছিল, তার অনেকটাই সঠিক নয়। তাই এখন জেরা করে পুলিশ ধৃতের কাছ থেকে ওই খুনের বিষয়ে আরও তথ্য জেনে নিতে চাইছে।
প্রথম থেকেই ওই চপার কেনা নিয়ে পুলিশের সন্দেহ ছিল।

উৎপল প্রথমে বলেছিল, আজিমগঞ্জ থেকে ন’শো টাকায় সে চপারটি কিনেছিল। পরে জেরায় পুলিশের ওই সন্দেহ সত্যি প্রমাণ করে সেই উৎপলই জানায়, চপারটি পাড়ার কর্মকারের কাছে বরাত দিয়ে বানানো হয়েছিল। তার জন্য ন’শো টাকা দিতে হয়েছিল ওই কর্মকারকে। তদন্তের স্বার্থে পুলিশ এখনই ওই কর্মকারের নাম প্রকাশ্যে আনতে চাইছে না। এদিকে ঘটনার সময় উৎপল যে প্যান্ট পরেছিল, সেটিও পুলিশ স্থানীয় কবরস্থানের ঝোপ থেকে শনিবার উদ্ধার করেছে। এদিকে, উৎপলকে গ্রেপ্তারের পর ছ’দিন কেটে গেলেও ঘটনার পুনর্নির্মাণ কেন করা হচ্ছে না, এই নিয়ে জিয়াগঞ্জের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করেছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: নিমতাকাণ্ডে প্রকাশ্যে চাঞ্চল্যকর তথ্য, জোরাল হচ্ছে দেবাঞ্জনের বান্ধবী যোগ]

সেদিনের ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে উৎপল জানিয়েছে, দরজা খোলার পর বন্ধুপ্রকাশ সেদিন পিছন ফিরে বিছানায় বসতে যান। ঠিক তখনই উৎপল দুই হাতে শক্ত করে ধরে চপারের এক কোপ বসায় ওই শিক্ষকের গলায়। এতেই তিনি বিছানায় লুটিয়ে পড়েন। সময় নষ্ট না করে ভিতরের ঘরে ঢুকে পড়ে সে। তখন খাটের উপর দুই পা লম্বা করে বসেছিলেন শিক্ষকের স্ত্রী বিউটি পাল। চপার দিয়ে তাঁর গলায় কোপ বসিয়ে তারপর তাঁদের ছ’বছরের সন্তান অঙ্গন পালকেও একই কায়দায় খুন করে সে। তারপর বিউটিদেবীর ঘরে ঢুকে উৎপল দেখে খাট থেকে একটি পা ঝুলছে। সেই পা নিজে হাতে খাটের উপর তুলে দেয় উৎপলই। এরপরই তার নজর পড়ে জানালার দিকে। বাইরে থেকে কেউ রক্তাক্ত বিউটিদেবীকে দেখে ফেলতে পারে ভেবে এরপর বিছানার চাদর দিয়ে তাঁর দেহ ঢেকেও দেয় উৎপল। এইসব করতে গিয়েই তার হাতে রক্ত লেগে যায়। তাই নিজের সঙ্গে থাকা গামছা দিয়ে সে হাত ও ইনস্যুরেন্সের বইটি মুছে নেয়। ঠিক তখনই প্রথমে কোলপসিবল গেটে ধাক্কা দেওয়ার আওয়াজ এবং পরে দরজায় টোকা মারার শব্দ শুনে আর ঘরের মধ্যে অপেক্ষা না করে পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যায় সে। তাই সঙ্গে থাকা ব্যাগ আর নিয়ে যেতে পারেনি। ওই ব্যাগ থেকেই রক্ত মোছা গামছা ও ইনস্যুরেন্সের বই ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

Advertisement

সাগরদিঘি থেকে ট্রেনে করে আজিমগঞ্জ নেমে সদরঘাট হয়ে লেবুবাগান এসেছিল ওই যুবক। সদরঘাটের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পুলিশ আগেই তার প্রমাণ পায়। কিন্তু ঘটনার পর সে লেবুবাগান থেকে মসজিদের পাশ দিয়ে সোজা না গিয়ে বাঁ দিকে ঢালাই রাস্তা ধরে স্থানীয় গোরস্থানের পাঁচিল টপকে নিমতলা ঘাট পেরিয়ে আজিমগঞ্জ হয়ে ম্যাজিক গাড়ি করে সাহাপুর গ্রামে পৌঁছয়। তদন্তকারী এক পুলিশ কর্তা জানান, পুলিশ আগেই তার টি-শার্ট উদ্ধার করেছে। এদিন তার দেওয়া বিবরণের ভিত্তিতেই তল্লাশি চালিয়ে গোরস্থান এলাকা থেকে প্যান্টটি উদ্ধার হয়। জেলার এক পুলিশ কর্তা জানিয়েছেন, “উৎপলের বিবরণ অনুযায়ী, খুনের পর সে খুনের চিহ্ন লোপাট করতে চেয়েছিল। কিন্তু তার আগেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে আর সেই ঝুঁকি নিতে পারেনি । তাছাড়া মৃত বন্ধুপ্রকাশের মোবাইলেও ওই সময়েই ফোন আসছিল। তাতেই বিভ্রান্ত হয়ে সে পালিয়ে যায়।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ