সৌরভ মাজি, বর্ধমান: মৃত্যুর পর গঙ্গায় নয়, মা কালীর চরণতলেই থাকতে চেয়েছিলেন সাধক কমলাকান্ত। জনশ্রুতি, মা গঙ্গা নিজেই এসেছিলেন সাধকের কাছে। মাটি ফুঁড়ে এসেছিল ‘গঙ্গাজল’। সেই কুয়ো আজও রয়েছে বর্ধমানের বোরহাটের কমলাকান্ত কালীবাড়িতে।
[যিশুর ভজনা ছেড়ে শক্তির সাধনা, সাহেবের পুজোয় মাতোয়ারা হ্যামিলটনগঞ্জ]
সাধক কমলাকান্তকে নিয়ে আরও অনেক লোক-গাথা মানুষের মুখে মুখে ঘুরছে। এই মন্দিরের মা কালী যে জীবন্ত, তার প্রমাণ নাকি বর্ধমানের মহারাজাকে দিয়েছিলেন কমলাকান্ত। বেলকাঁটা দিয়ে মায়ের পা ফুটিয়ে রক্ত বের করে তিনি মহারাজকে দেখিয়েছিলেন এই দেবী জীবন্ত। ঘোর অমানিশায় বর্ধমানের আকাশে মহারাজকে পূর্ণিমার চাঁদ দর্শন করিয়েছিলেন এই সাধক।
[সতীর পীঠ তমলুকে বর্গভীমা পূজিতা হন দেবী উগ্রতারা রূপে]
কমলাকান্তর সাধনক্ষেত্র হিসাবে পরিচিত বর্ধমানের বোরহাট। এই মন্দিরেই সিদ্ধিলাভ করেছিলেন কালীসাধক। তাঁর জন্ম পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনার চান্না গ্রামে। মহারাজ তেজচাঁদ মহতাব তাঁকে বর্ধমানে নিয়ে আসেন। মন্দিরের ট্রাস্ট কমিটির কোষাধ্যক্ষ প্রশান্ত কোঙার জানান, এই মন্দিরে পঞ্চমুণ্ডির আসনে সাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছিলেন কমলাকান্ত। তাঁর ইচ্ছা ছিল মৃত্যুর পর মায়ের চরণতলে যেন ঠাঁই দেওয়া হয়। মায়ের থেকে তাঁকে কোনওভাবেই আলাদা না করার কথা বলেছিলেন এই সাধক। সেই ইচ্ছানুসারে, তাঁর সমাধির উপরই প্রতিষ্ঠা করা হয় মায়ের মূর্তি ও মন্দির। সমাধির উপর দেবীর প্রতিষ্ঠা করে মন্দিরের নজির ভূ-ভারতে খুব কমই আছে।
[নামেই খেপি, ৪.৫ কেজির সোনার গহনায় সাজেন এই কালী ]
প্রশান্তবাবুর সংযোজন, কমলাকান্ত জানিয়েছিলেন মৃত্যুর পর তাঁকে যেন গঙ্গায় না দেওয়া হয়। কথিত আছে মা গঙ্গা নিজেই তাঁর কাছে এসেছিলেন। মাটি ফুঁড়ে গঙ্গাজল বেরিয়েছিল। এখনও সেই কুয়ো রয়েছে মন্দির প্রাঙ্গনে। মায়ের পুজো এখানে গঙ্গাজল নয়, ওই কুয়োর জলেই হয়। সাধক কমলাকান্ত কালী মাকে মাগুর মাছের ভোগ খাওয়াতেন। সেই রীতি মেনে আজও মাকে কালীপুজোয় জ্যান্ত মাগুরের ভোগ দেওয়া হয়। প্রতি অমাবস্যায় মাকে মাগুর মাছের ভোগ দেওয়ার রীতি রয়েছে। মন্দিরের ইতিহাস বলছে ১২১৬ বঙ্গাব্দে সাধক কমলাকান্ত এখানে মায়ের পুজো শুরু করেছিলেন। সেই হিসাবে ১৪২৪ বঙ্গাব্দে মায়ের ২০৯ তম বর্ষের পূজা হচ্ছে। কালীপুজোর দিন রাতভর দেবীর আরাধনা হয়। পরের দিন অন্নকূট। দ্বিতীয়য়া মন্দির প্রাঙ্গণে সাধক কমলাকান্ত দিবস উদযাপন করা হয়ে থাকে।
ছবি: মুকলেসুর রহমান
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.