Advertisement
Advertisement

Breaking News

কান্তি গাঙ্গুলিই ভরসা

আমফানের পর দেখা নেই নেতা-মন্ত্রীর, সেই ‘বুড়ো’ কান্তিই ভরসা রায়দিঘির মানুষের

এখনও বাদাবনের মানুষের আত্মার আত্মীয় প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়।

Kanti Ganguly, The CPM leader who is still the Saviour Of Sunderban
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:May 27, 2020 8:25 pm
  • Updated:May 27, 2020 8:25 pm

সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: সুন্দরবনের মানুষের কথায়, ‘কাজের মানুষ, কাছের মানুষ তিনিই। তিনিই তাদের আশা-ভরসা।’ তিনি বাদাবনের মানুষের আত্মার আত্মীয় প্রাক্তন মন্ত্রী কান্তি গঙ্গোপাধ্যায়। আজও তিনিই ওদের নেতা। তিনি নিজেও ভুলতে পারেননি অসহায় মানুষগুলোকে। মন্ত্রিত্ব গিয়েছে সেই কবেই। বিধায়কও নন। তবু নিজের কর্তব্যে অবিচল আজও। সাম্প্রতিক আমফানের তাণ্ডবের পর সব হারানো মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাঁরই পরিকল্পনায় নিজেদের উদ্যোগে ভাঙা বাঁধ বাঁধার কাজে নেমেছে রায়দিঘির কুমড়োপাড়া গ্রামের শতাধিক মানুষ। মণি নদীর তীরে ঠায় দাঁড়িয়ে সেই কাজের তদারকিতে ব্যস্ত ওই বৃদ্ধ।

মন্ত্রী কিংবা মথুরাপুরের বিধায়ক থাকাকালীন সুন্দরবনের মানুষের কল্যাণে অনেক কাজই করেছেন তিনি। বিধায়ক না থাকাকালীন পাড়ি দিয়েছেন গভীর সমুদ্রে, ট্রলারডুবিতে মৃত মৎস্যজীবিদের দেহ উদ্ধার করে আনতে। আবারও তিনি একদা তাঁর বিধানসভা ক্ষেত্র মথুরাপুরের রায়দিঘির কুমড়োপাড়ায় আমফানের তান্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে এসে দাঁড়ালেন। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর সমস্ত দুর্দশা ঘুচিয়ে মানুষকে পথ দেখালেন ঘুরে দাঁড়ানোর। গ্রামের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে নেমে পড়লেন বিপর্যয়ের মোকাবিলায়। সেই আগের মতোই তাঁদের নেতার কথায় মর্যাদা দিয়ে মণি নদীর ভাঙা বাঁধ মেরামতের কাজে নামল গ্রামের মানুষ।

Advertisement

[আরও পড়ুন: আমফানের ক্ষত এখনও দগদগে, তার মধ্যেই কলকাতা-সহ রাজ্যজুড়ে ব্যাপক ঝড়বৃষ্টি]

ঠিক এক সপ্তাহ আগে বুধবারই আমফান ভেঙেছে মণি নদীর তিন কিলোমিটার বাঁধ। বাঁধের সেই ভাঙা অংশ দিয়েই হু-হু করে জোয়ারের জল ঢুকছে গ্রামে। বেরিয়েও যাচ্ছে ভাটায়। কিন্তু নোনা জলে ডুবে নষ্ট হচ্ছে উর্বর জমি। এই খবর দেওয়া হয় প্রাক্তন বিধায়ককে। সব শুনে কান্তিবাবু কুমড়োপাড়া গ্রামে আসেন। গ্রামবাসীরা কান্তি গাঙ্গুলির কাছে অভিযোগ জানিয়ে বলে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর থেকে এখনও কেউ আসেনি গ্রামে। পঞ্চায়েতের প্রধান, বিডিও, সেচ দপ্তর কারওর দেখা নেই। শুনে কান্তিবাবু তাঁদের জানান, ‘কাউকেই দরকার নেই। আমাদের নদীবাঁধ আমরাই বাঁধব।’ এই বলে সকলকে নিয়ে নদীর কিনারে দাঁড়িয়ে পড়লেন এলাকার প্রাক্তন বিধায়ক একাই। তাঁর নির্দেশমতই জমির নোনা জল বের করে মাটির বাঁধ দিয়ে নদীকে আটকানোর কাজ শুরু করে দিল গ্রামবাসীরাই।

Advertisement

গ্রামবাসী শম্পা হালদারের কথায়, ‘ঝড়ের পর থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও নেতা, মন্ত্রী, বিধায়ক কারওর দেখা পাইনি। আমাদের ঘর ভেঙেছে। বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে শেষ করে দিয়েছে চাষের জমি। কী করব, কী খাব, কিছুই জানি না। কান্তিদা এই বয়সেও আমাদের দেখতে এসেছেন। আমাদের ভরসা জোগাচ্ছেন। উনিই আমাদের বাঁধ বাঁধতে বলেছেন। ত্রাণের ব্যবস্থা করে দেবেন বলে জানিয়েছেন। উনিই তো আমাদের নেতা। ওনার কথাই মেনে চলব।’ কান্তিবাবু জানান, ‘জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে ওই মানুষগুলোর। ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়েই গিয়েছে। এবার যাতে মানুষ জমির উর্বরতা ফিরিয়ে আবার আমন চাষ করতে পারে সেজন্যই এসেছি। গ্রামের মানুষকে একত্রিত করে জমিতে জমা নোনা জল বের করে, বাঁধ দিয়ে জোয়ারের জল আটকানোর চেষ্টা চলছে। ওরা নিজেরাই করছে সবকিছু। আমি শুধু ওদের পাশে আছি। বর্ষার আগেই জমির উর্বরতা ফিরিয়ে ওরা ফের আমন চাষ করতে পারবে বলেই আমার বিশ্বাস। ওদের মুখে জয়ের সেই হাসিটাই দেখতে চাই আমি।’

[আরও পড়ুন: আমফানে ঘর হারারাই এখন অন্ন জোগাচ্ছেন অসহায়দের, নেপথ্যে পড়ুয়াদের ‘পিপলস কিচেন’]

প্রাক্তন মন্ত্রীর দাবি তুললেন, যারা বাঁধ মেরামত করছে তাদের ১০০ দিনের কাজের পারিশ্রমিক দিতেই হবে সরকারকে। সঙ্গে সঙ্গে সকলের সমবেত চিৎকার, ‘হ্যাঁ, দিতেই হবে, দিতেই হবে।’ এরপর স্থানীয় বাসিন্দাদের প্রাক্তন বিধায়ক জানিয়ে দেন, ‘ত্রাণের জন্য কারওর কাছে হাত পাততে হবে না। আমিই এদিক-সেদিক থেকে তোদের খাওয়ার ব্যবস্থা করব।’ সকলে মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল তাঁদের নেতার কথায়।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ