ধীমান রায়, কাটোয়া: গো-রক্ষার নামে তাণ্ডব ও পিটিয়ে খুনের খবরে উত্তাল হয়ে উঠেছিল দেশ৷ গো-মাংস রাখার অপরাধে দলিত যুবক খুনের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছিল দেশের রাজনীতি৷ গো-বলয়ে এহেন ঘটনা ঘটলেও বাংলায় এই প্রথম গো-রক্ষার বলি হলেন এক যুবক৷ গরুর গাড়িতে বাইক ধাক্কা দেওয়ায় আরোহীকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কেতুগ্রামের বেড়ুগ্রামে৷
ঘটনার সূত্রপাত বুধবার সন্ধ্যায়৷ গরুর গাড়ির পিছনে ধাক্কা দেয় একটি বাইক৷ গরুর গাড়িতে ধাক্কা দেওয়াকে করে করে বাইক আরোহীর সঙ্গে তুমুল বচসা বাধে৷ বচসা পৌঁছে যায় হাতাহাতিতে৷ অভিযোগ, এর পরই প্রায় ১২-১৪ জনের একটি দল নুর ইসলাম শেখ নামের ওই বাইক আরোহী ও তাঁর তিন বন্ধুর উপর চড়াও হয়৷ শুরু হয় মারধর৷ আহতদের রাতেই বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার হয়৷ পর সেখানে নুর ইসলাম শেখ (৪২) ওরফে কালু নামে একজনের মৃত্যু হয়। এই ঘটনা ঘিরে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছে৷ রাতেই পুলিশ দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে৷
[ফের বাস দুর্ঘটনা মুর্শিদাবাদে, জখম অন্তত ৪০ জন যাত্রী]
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বেড়ুগ্রামে ক্যানেলপাড় বাসস্ট্যান্ডের কাছে একটি বেসরকারি মোবাইল সংস্থার টাওয়ার বসানোর কাজ চলছিল৷ সেই নির্মাণকাজে কুলুট গ্রামের কয়েকজন রাজমিস্ত্রি কাজ করছিলেন৷ জানা গিয়েছে, ঘটনার সূত্রপাত দিনচারেক আগে৷ নিহতের আত্মীয় হাসিবুল শেখ জানিয়েছেন, কুলুট গ্রামের এক রাজমিস্ত্রি বাইক নিয়ে বেড়ুগ্রামের ওই নির্মীয়মাণ টাওয়ারে কাজে আসার সময় বেড়ুগ্রামের একটি গরুর গাড়ি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিল৷ তখন গরুর গাড়িতে ধাক্কা লেগে বাইকের টুলসবক্সটি ভেঙে যায়। তা নিয়ে তখন দু’জনের বসচা হয়। স্থানীয় কয়েকজনের মধ্যস্থতায় কিছু টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে হয় ওই গরুর গাড়ির মালিককে৷
অভিযোগ, সেই ঘটনার সূত্র ধরে বুধবার সন্ধ্যায় কুলুটগ্রাম থেকে খোকন শেখের নেতৃত্বে প্রায় ১২-১৪ জন বেড়ুগ্রাম ক্যানেলপাড়ে আসে। ক্যালেনপাড়ে বিকেল থেকে বেড়ুগ্রামের অনেকে বসে গল্পগুজব করেন৷ সেখানে ছিলেন নুর ইসলাম শেখ, সাজাহান শেখ-সহ কয়েকজন।
[দিঘার সৈকতে পর্যটকদের সুরক্ষিত রাখতে আসছে নয়া অ্যাপ]
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, খোকনের নেতৃত্বে কুলুট গ্রামের ওই দলটি এসে তাঁদের ওপর চড়াও হয়। নির্মিয়মান টাওয়ারের কাছে পড়ে ছিল লোহার রড। অভিযোগ, ওই রড ও বাঁশ নিয়ে তারা বেধড়ক পেটায় নুর ইসলাম, সাজাহান ও আরও দুজনকে। তারপর রক্তাক্তবস্থায় ফেলে চলে যায় হামলাকারীরা। ঘটনার পর গ্রামবাসীরা খবর পেয়ে আহতদের উদ্ধার করে কাঁদরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। অবস্থা গুরুতর দেখে নুর ইসলাম ও সাজাহানকে বর্ধমানে পাঠানো হয়। রাতেই মৃত্যু হয় নুর ইসলামের। ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই এলাকায় যায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে পুলিবাহিনী। তারা তল্লাশি চালিয়ে খোকন শেখ ও আরও অকজনকে আটক করে। নিহতের পরিবার কেতুগ্রাম থানায় অভিযোগ জানিয়েছে৷ বাকিদের সন্ধানে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ৷
ছবি: জয়ন্ত দাস।