গৌতম ব্রহ্ম ও দিব্যেন্দু মজুমদার: ফের রাজ্যে মাথাচাড়া দিল ট্যারান্টুলা আতঙ্ক। এবার মৃত্যুভয় সঙ্গে নিয়ে। রাতের খাওয়া শেষ করে ছাদে পায়চারি করতে গিয়েছিলেন হুগলির চণ্ডীতলার লক্ষণপুর গ্রামের কেনারাম বাগ। কিছুক্ষণ পরেই যন্ত্রণায় কঁকিয়ে উঠে নিচে নেমে এসে ঘুমন্ত স্ত্রী দীপা বাগকে ডেকে তোলেন। জানান, তাঁর ডান হাতে মাকড়সা কামড়েছে। ব্যথা উপশমে কেনারামের হাতে প্রথমে মহালক্ষ্মী মলম লাগানো হয়। জল-পড়া দেওয়া হয়। ব্যথা না কমায় প্রতিবেশীরা কেনারামকে স্থানীয় আইয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যায়। আস্ত আস্তে যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। হাসপাতালের বিছানায় শুতে পারছিলেন না কেনারাম। এতটাই অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। তারপরই হঠাৎ করে হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। মৃত্যুর কারণ জানতে কেনারামের দেহ ময়নাতদন্ত করা হয়েছে। যদিও রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি।
[সংসদ অচল, তবে সাংসদ ভাতা বাড়াতে সরকারকে ‘পূর্ণ সমর্থন’ বিরোধীদের]
এদিকে, মাকড়সার কামড়ে মৃত্যুর খবরে চণ্ডীতলায় তুমুল উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। কার্যত মহামারীর আকার নিয়েছে আতঙ্ক। মাকড়সা দেখলেই সবাই আঁতকে উঠছেন। যদিও স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই অঞ্চলে ট্যারান্টুলা নতুন নয়, গত বর্ষাতেও হিন্দোল আহমেদ নামে এক বন্যপ্রেমী ওই এলাকার কয়েকটি পুরনো বাড়িতে ট্যারান্টুলার সন্ধান পেয়েছিলেন। যদিও কেনারামের ঘাতক মাকড়সাটি নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে পতঙ্গবিশারদ ও ডাক্তারবাবুদের মনে। ডেবরা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শুভেন্দু বাগ জানান, “গত বছর ট্যারান্টুলার কামড় খেয়ে শতাধিক মানুষ আমাদের হাসপাতালে এসেছিলেন। ১৪ জনকে ভরতি পর্যন্ত করতে হয়েছে। কিন্তু একটি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেনি। এই ঘটনাটি চিন্তায় ফেলে দিল। দেখি ময়নাতদন্তের রিপোর্টে কী আসে।” এখন সবাই এই রিপোর্টের দিকেই তাকিয়ে। বিশিষ্ট সর্পরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দয়ালবন্ধু মজুমদার জানিয়েছেন, এ দেশে মাকড়সা-দংশনের কোনও চিকিৎসা সেই অর্থে নেই। পুরোটাই উপসর্গভিত্তিক।
বর্ষাকালে মাকড়সার উৎপাত বেশি হয়। বিশেষ করে কংসাবতীর চরে ৫-৭ ইঞ্চির প্রচুর ট্যারান্টুলা রয়েছে। প্রচুর মানুষ কামড় খেয়েছেন। কিন্তু একটিও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। চণ্ডীতলায়ও ট্যারান্টুলার দেখা পেয়েছেন কিছু বন্যপ্রেমী যুবক। এমনটাই জানিয়েছেন ‘বাদু রেপটাইল কনজার্ভেশন সোসাইটি’-র সম্পাদক শিবাজি মিত্র। জানালেন, “সাপ নিয়েই আমাদের আগ্রহ বেশি। গবেষণাও বেশি। মাকড়সা নিয়ে সচেতনতা সেই অর্থে নেই বললেই চলে। এবার মনে হয় মাকড়সার দিকেও নজর দেওয়া উচিত।” স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে, কেনারামকে কি সত্যিই মাকড়সা কামড়েছে? না কী অন্য কিছু? কেনারামের স্ত্রী দীপাদেবী অবশ্য জানিয়েছেন, শেষ নিশ্বাস ত্যাগ পর্যন্ত তাঁর স্বামী মাকড়সা কামড়ানোর কথাই বলে গিয়েছেন।
এর আগে বর্ধমানের আউশগ্রামে মাকড়সার কামড় খেয়ে এক শিশুকন্যার হাতেপায়ে পচন ধরেছিল। ট্যারান্টুলার কামড় খেয়ে রূপা ধল নামে ১৪ বছরের এক কিশোরীর অবস্থা অত্যন্ত সঙ্কটজনক হয়েছিল। নিউরোটক্সিন উপসর্গ দেখা গিয়েছিল শরীরে। এবার প্রাণ গেল? তবে কি বাইরে থেকে সিডনি ফানেল ওয়েব, ব্রাজিলিয়ান ওয়ানডার স্পাইডার, ফ্রিঞ্জড অর্নামেন্টাল ট্যারান্টুলার মতো কোনও প্রাণঘাতী মাকড়সা ঢুকে পড়েছে বাংলায়?
[মরা মুরগি নিয়ে আতঙ্কে! কী করে মাংস খাওয়া ছাড়বেন?]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.