সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: মাথার খুলি ফেটে চৌচির! চোয়ালে গভীর আঘাত! শরীরের একাধিক জায়গা ক্ষতবিক্ষত! অসহায় রয়্যাল বেঙ্গল খুনের ঘটনায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে ময়নাতদন্তের রিপোর্টে। এদিকে বাঘ শিকার করতে গয়ে আহত দুই শিকারির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে বনদপ্তর।
[বন দপ্তরের গাফিলতির জেরে বেঘোরে প্রাণ গেল লালগড়ের রয়্যাল বেঙ্গলের?]
মাথায় ভারী কিছু দিয়ে আঘাতের ফলেই বাঘের খুলি ফেটে চৌচির হয়ে যায়। তারপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে তাকে ঘিরে ধরে খুঁচিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে ময়নাতদন্তে। আর তাতেই জোরদার প্রশ্ন উঠেছে বনকর্মীদের ভূমিকা নিয়ে। এছাড়াও একাধিক রহস্যের উত্তর এখনও মিলছে না। যেখানে বাঘটিকে মারা হয়েছে তার আশপাশের এলাকায় বাঘের টাটকা পায়ের ছাপ পাওয়া গিয়েছে। ফলে শিকারিরা নিশ্চিত ছিলেন ওই এলাকাতেই বাঘ রয়েছে। তাহলে বনকর্মীরা কেন খবর পেলেন না? তাছাড়া বাঘ আছে জেনেও কারা জঙ্গলে শিকারে যাচ্ছে তার খোঁজ কেন তাঁরা রাখলেন না? তাছাড়া যেভাবে বাঘটিকে হত্যা করা হয়েছে তাতে বিস্তর সময় লাগার কথা। কোথায় ছিলেন বনকর্মীরা? উঠছে একাধিক প্রশ্ন। কিন্তু ঘটনা যাইই হোক তা যে অবশ্যম্ভাবীভাবে এড়ানো যেত এটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে যে কায়দায় বাঘটিকে মারা হয়েছে তাতে পেশাদারিত্বের ছাপ স্পষ্ট। তাই সন্দেহ, এটা চোরা শিকারিদের কাজ নয়তো?
এদিকে ময়নাতদন্তের পর শুক্রবার গভীর রাতেই বাঘের দেহাবশেষ দাহ করা হয় বাগঘরা জঙ্গলে। তবে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য বাঘের শরীরের বিভিন্ন অংশের নমুনা কলকাতার ‘স্টেট ফরেন্সিক ল্যাবরেটরি’তে পাঠানো হয়েছে। রাতে মৃত বাঘটিকে উদ্ধার করে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় মেদিনীপুরের আড়াবাড়ি রেঞ্জে। সেখানেই চার সদস্যের এক চিকিৎসকের দল তার ময়নাতদন্ত করে। তারপর হয় শেষকৃত্য। পুরো প্রক্রিয়াটিতে হাজির ছিলেন মুখ্য-বনপাল শক্তিশঙ্কর দে, রাজ্য বন্যপ্রাণমণ্ডলীর উপদেষ্টা জয়দীপ কুণ্ডু, মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা। ডিএফও জানান, “ময়নাতদন্তের জন্য বাঘটিকে কলকাতাতেই নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেই মতো আমরা রওনাও দিয়েছিলাম। কিন্তু মাঝপথে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হই।” জানা গিয়েছে, ‘ন্যাশনাল টাইগার কনজারভেশন অথরিটি’র নিয়ম অনুযায়ী, কোনও জেলায় বাঘের মৃত্যু হলে, সেই জেলাতেই তার শেষকৃত্য করতে হয়। তবে ভিসেরা পরীক্ষার জন্য বাঘের লিভার, হৃৎপিণ্ড-সহ বিভিন্ন অংশ কলকাতায় পাঠানো হয়েছে।
[ভোটযুদ্ধে মুখোমুখি বাবা-ছেলে, উন্নয়নেই ভরসা দু’পক্ষের]