Advertisement
Advertisement

করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা, চুঁচুড়ায় পরিযায়ী শ্রমিক পরিবারকে পাড়ায় ঢুকতে বাধা স্থানীয়দের

ওই পরিবারকে স্কুলে আশ্রয় দেওয়ায় প্রধান শিক্ষককে হুমকির মুখে পড়তে হয়।

Locals stopped Migrant worker from entering the house
Published by: Bishakha Pal
  • Posted:May 30, 2020 8:19 pm
  • Updated:May 30, 2020 8:19 pm

দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: ফের পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়িতে ঢুকতে না দেওয়ার অভিযোগ উঠল পরিবারের বিরুদ্ধে। এবারও ঘটনাস্থল হুগলি জেলা। সুদূর গুজরাট থেকে শ্রমিক স্পেশ্যালে হাওড়া হয়ে শুক্রবার রাতে চুঁচুড়া সুকান্তনগরে নিজের বাড়িতে ফেরেন গোপাল বিশ্বাস। সঙ্গে ছিলেন শাশুড়ি, স্ত্রী ও দুই সন্তান। কিন্তু বাড়ি পৌঁছানোর পর স্থানীয় মানুষ তাঁদের পাড়ায় ঢুকতে দেয়নি বলে অভিযোগ।

নিমেষের মধ্যে এলাকার চেনা মানুষগুলো কেমন যেন অচেনা হয়ে যায়। উড়ে আসতে থাকে কটূক্তি। দুই শিশু তখন বাবা মায়ের প্রতি প্রতিবেশীদের আচরণে ভয় পেয়ে কান্না জুড়ে দেয়। স্থানীয় মানুষ কিছুতেই তাঁদের বাড়ি ঢুকতে দেয়নি। তাদের আশঙ্কা ওই শ্রমিক পরিবার থেকে ঘটতে পারে করোনার সংক্রমণ। তাই এলাকা থেকে একপ্রকার ওই পরিবারকে তাড়িয়ে দেয় স্থানীয় মানুষ। বাধ্য হয়ে আশ্রয়ের জন্য ছুটে যান চুঁচুড়ার ভগবতীডাঙায় স্ত্রীর বাপের বাড়িতে। সেখানেও এলাকার মানুষ রীতিমতো মারমুখী হয়ে তাড়া করে। তাড়া খেয়ে গোপালবাবু তাঁর পরিবার নিয়ে এসে হাজির হন একটি স্কুলে। কিন্তু সেখানেও অমানবিকভাবে এলাকার মানুষ তাড়িয়ে দেয় এই পরিবারটিকে। প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা এসেও স্থানীয়দের বাধায় পরিবারটিকে মাথা গোঁজার ঠাইটুকু দিতে পারেননি।

Advertisement

[ আরও পড়ুন: রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫ হাজার ছাড়াল, ২৪ ঘণ্টায় মৃত আরও সাত ]

শেষ পর্যন্ত তাঁরা হাজির হন তাঁদেরই পরিচিত কোদালিয়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের বিদ্যুৎ বিশ্বাসের কাছে। রাত তখন ১২টা। তখনও দুই শিশুকে কোলে নিয়ে বাবা মা একটু আশ্রয়ের খোঁজে নিজভূমে পরবাসী হয়ে ঘুরে বেরাচ্ছেন। উপপ্রধান বিদ্যুৎ বিশ্বাস তাঁরই পঞ্চায়েত এলাকার রবীন্দ্রনগরের একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে অনুরোধ করে স্কুলের তালা খুলে সেখানে রাতে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের এই মানবিক আচরণে এলাকারই কিছু যুবক শনিবার সকালে রীতিমতো সেই শিক্ষকের বাড়িতে চড়াও হয়ে কৈফিয়ত তলব করে। কেন স্কুলের তালা খুলে দেওয়া হয়েছে, জানতে চায় তারা। স্কুলে থাকতে দেওয়ার অপরাধে প্রধান শিক্ষককে রীতিমতো হেনস্থার শিকার হতে হয়।

Advertisement

এই ঘটনার পর কোদালিয়া ১ নং গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য বিজেপির অজয় মহান্তি শনিবার ওই পরিবারটিকে নিয়ে গিয়ে চুঁচুড়ার ধান্য গবেষণা কেন্দ্রে থাকার ব্যবস্থা করে দেন। চরম নির্যাতনের শিকার গোপালবাবু বলেন, ‘রোজগারের জন্য গুজরাটে কাজে গিয়েছিলাম। কিন্তু নিজের বাড়িতে ফিরে আসার পর নিজেরই প্রতিবেশীরা হঠাৎ কেমন যেন অপরিচিত হয়ে গেল। ভাবতেই পারছিলাম না এরাই এতদিন আমাদের প্রতিবেশী ছিল। এক সময় ভেবে নিয়েছিলাম এরকমভাবে দু’টো কোলের শিশুকে নিয়ে সারা রাত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হবে। শেষ পর্যন্ত বিদ্যুৎবাবু ও প্রধান শিক্ষক যদি সাহায্যের হাত না বাড়িয়ে দিতেন তবে হয়তো পথে পথেই ঘুরে বেড়াতে হত।’ তবে এরই মাঝে কিছু শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ জানান এইরকম চরম অমানবিক আচরণ মেনে নেওয়া যায় না। প্রয়োজনে এই সব মানুষগুলোকে ঠাঁই দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে কঠোর হতে হবে।

[ আরও পড়ুন: মনুয়াকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি, প্রেমিকের সঙ্গে চক্রান্ত করে স্বামীকে খুনের পর পাশেই ঘুম স্ত্রীর! ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ