জঙ্গি সন্দেহে ধৃত দুই। ছবি সুশান্ত পাল
নন্দন দত্ত, বীরভূম: শান্ত স্বভাব। চোখে-মুখে উগ্রতার লেশমাত্র নেই। ভদ্র, মিতভাষী। নিজেদের কাজের মধ্যে ডুবিয়ে রাখত তারা। নলহাটিতে দু’জনকে জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তারের পর বিশ্বাস করতে পারছেন না প্রতিবেশীরা। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি নিজেদের এই শান্ত স্বভাব, নমনীয় মনোভাবের জন্য নিজেদের লুকিয়ে রাখতে পেরেছিল তারা। এই স্বভাবকেই হাতিয়ার বানিয়ে দিনের পর দিন অন্যদের মগজধোলাই ও দেশ বিরোধী কাজ করে গিয়েছে এসটিএফের হাতে গ্রেপ্তার আজমল হোসেন ও সাহেব আলি খান।
ধৃত সাহেব আলি খান মুরারইয়ের চাপড়া গ্রামের বাসিন্দা। গাড়ি চালায় সে। মা, দুই বোন ও এক ভাইকে নিয়ে সংসার। মাটির বাড়ি, ভাঙা ঘর। অভাবের সংসার। বাড়ি দেখে এসটিএফের অফিসারও দোলাচলে পড়েন। তবে সাহেবের মা সাকিনা বিবির দাবি, “আমার ছেলে শান্ত, নিরীহ। কোনও দিন কারও সঙ্গে উঁচু গলায় কথা পর্যন্ত বলেনি। আশেপাশের লোকজনকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।” কিন্তু বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পেন ড্রাইভ, ধর্মীয় বই পাওয়া গিয়েছে। এই গ্রেপ্তারিতে অবাক স্থানীয়রাও। তাঁদের মনে প্রশ্ন তাহলে এই নিরীহ মনোভাবের সুযোগ নিয়ে দিনের পর দিন জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়েছে সে?
জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার আরেক ধৃত আজমল হোসেন নলহাটির বাসিন্দা। পেশায় সে হাতুড়ে ডাক্তার। সাধারণ মানুষের সেবা থেকে নানা কাজ করেন তিনি। এলাকায় কোনও বদনাম নেই। তার বাবা জর্জিস মণ্ডল জানিয়েছেন, “ছেলের কোনও বদনাম নেই। মুরারই থেকে শাহ ইমাম নামের একজন মৌলবী কিছু ধর্মীয় বই দিয়ে যেতেন। সেগুলি ও পড়ত।” এই বইগুলি বাংলাদেশের প্রকাশনীর তা স্বীকার করেছেন তিনি। আজমলের বাড়ি থেকে ল্যাপটপ, একাধিক বাংলাদেশি প্রকাশনীর বই পাওয়া গিয়েছে। ধৃত দু’জনকে শুক্রবার আদালতে তোলা হয়েছে। একদিনের জেল হেফাজত হয়েছে। শনিবার তাদের ফের আদালতে তুলে ১৪ দিনের হেফাজত চাইবে পুলিশ।
এসটিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’জনেই এ দেশের নিষিদ্ধ জেহাদি সংগঠন জামাত-উল-মুজাহিদিনের সদস্য। জামাতের যে মডিউলের সদস্য ছিল এরা তাদের দায়িত্ব ছিল মুসলিম যুবকদের মগজধোলাই করা। মূলত রাষ্ট্রদ্রোহী, ধর্মীয় উসকানিমূলক বার্তা ছড়িয়ে দিত তারা।পুরো বিষয়টিই করা হত এনক্রিপটেড ভার্সনে। সূত্রের খবর, দেশের সার্বভৌমত্ব নষ্ট করতে রীতিমতো বিশেষ-বিশেষ জায়গা এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিদের উপর হামলার ছক কষেছিল তারা। সেই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য মগজধোলাই করে তাদের জঙ্গি নেটওয়ার্কে নিয়োগ করত।তাদের লক্ষ্য ছিল ‘গাজাতুল হিন্দে’র আদর্শ প্রতিষ্ঠা করা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.