Advertisement
Advertisement
Lok Sabha Election 2024

ভোটে নিস্তরঙ্গ সীমান্তের গ্রাম, শুধু মমতার ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ নিয়ে আগ্রহ ওপার বাংলায়

'লক্ষ্মীর ভাণ্ডার' থেকে শুরু করে 'সবুজসাথী', 'স্বাস্থ‌্যসাথী'র মতো প্রকল্প দিনবদলের হাওয়া বয়ে এনেছে হিলি সীমান্তের এই গ্রামে।

Lok Sabha Election 2024: People of Bangladesh border in West Bengal are showing keen interest on Laxmi Bhandar
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:April 19, 2024 4:05 pm
  • Updated:April 19, 2024 6:44 pm  

রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: এ এক বিচিত্র জনপদ! হাত বাড়ালেই ওপার বাংলার হাতছানি। এত কাছে, তবু যেন কত দূর! ‘জিরো’র গেরো পার হয় কার সাধ্যি? কাছেই হিলি চেকপোস্ট। সেখানে অভিবাসনের ঝক্কি সামলে ‘জিরো পয়েন্ট’ পেরিয়ে তবে মেলে ভিন দেশে পা রাখার ছাড়পত্র। সীমান্তছোঁয়া গ্রাম বাসুদেবপুরেও চমক কম নয়। বালুরঘাট (Balurghat) থেকে কতই বা দূর? কিন্তু সেই শহর যখন ভোটের হাওয়ায় সরগরম, এই তল্লাট ঘুরে কে বলবে সাতদিন পর ভোট? নানা ভাষা, নানা মতের গ্রামে সম্প্রীতির আবহ অটুট। কৃষিকাজ ও ব‌্যবসার হাত ধরে দিব্যি স্বচ্ছন্দ জীবন। ভোটের উত্তাপই শুধু তেমন নেই।

লোকসভা ভোটের (Lok Sabha Election 2024) মুখে বাসুদেবপুরের মন বুঝতে গেরস্থের উঠোন থেকে বাজার, দোকনে ঢুঁ মারার মাঝেই পায়ে পায়ে কখন যেন ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের কাছাকাছি। সামনেই ফুটখানেক উঁচু সিমেন্টের পিলার। সেটাই দুদেশের সীমানা নির্ণায়ক খুঁটি। বিএসএফের (BSF) অনুমতি নিয়ে অবশেষে বাংলাদেশের মাটিতে। কয়েক পা হাঁটলেই রেললাইন অদূরে ওপারের রেলস্টেশন হিলি। জলপাই রঙের পোশাকের সীমান্তরক্ষী যখন দ্রুত ফিরে আসার তাগাদায় ব‌্যস্ত, ঠিক তখনই ওপারের কয়েকজনের মুখোমুখি। পরিচয় জানতেই মাসুদ হারুন, সাইনুল হকদের সটান প্রশ্ন, ‘‘ভোটে কে জিতবে, দিদি না মোদি?’’ আরও কৌতূহল, ‘‘আচ্ছা দিদির ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ সবাই পাচ্ছে?’’ দিব্যি মালুম হল, বাসুদেবপুর যতই নিস্তরঙ্গ হোক, এপারের ভোট নিয়ে ওপারের আগ্রহে খামতি নেই। ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে’র সুবাদে মমতা বন্দ্যোপাধ‌্যায়ের জনপ্রিয়তা যে দেশকালের সীমা মুছে দিয়ে এখন সর্বজনীন, এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে? এখন আবার এই প্রকল্পে বরাদ্দ টাকা বেড়ে মাসে ১০০০ টাকা হয়েছে।

Advertisement

[আরও পড়ুন: মে মাসের শুরুতেই মাধ্যমিকের ফলপ্রকাশ, প্রস্তুত উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদও]

হিলি সীমান্ত পেরিয়ে ওপারে বাংলাদেশের হাকিমপুর থেকে এপারে ভারতের বাসুদেবপুরে আসেন মানুষ। আবার এপারের লোকজনও প্রয়োজনে যান ওপারে। বন্দর শহর হিলির ভৌগোলিক অবস্থান বৈচিত্র্যময়। পূর্ব, উত্তর ও দক্ষিণ এই তিনদিকই বাংলাদেশে ঘেরা। শুধুমাত্র পশ্চিমদিকে হিলি-বালুরঘাট প্রধান সড়কপথে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের সঙ্গে যুক্ত। সীমান্ত লাগোয়া এই গ্রামে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, জৈন সম্প্রদায়ের মানুষ পরম সৌহার্দ্যের সঙ্গে পারস্পরিক ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের মেলবন্ধনে আত্মীয়তার সূত্রে দীর্ঘদিন মিলেমিশে বাস করছেন। গ্রামেরই দীর্ঘদিনের বাসিন্দা অমূল্যরতন বিশ্বাস সামাজিক কাজের জন্য ২০১৫ সালে বঙ্গরত্ন পেয়েছেন। হিলি এসবিএস সরকারি কলেজ গড়ে উঠেছে তাঁর দেওয়া জমিতে। বলছিলেন, ‘‘হিলি শহর দুভাগ হয়ে গেলে এই বাসুদেবপুর মৌজা এপারেও আছে, ওপারেও।’’ বাসুদেবপুরে কীর্তন হলে ওয়াহিদ, সাইনুলরা আসেন। আবার হিলি বিপ্লবী সংঘের দুর্গাপুজোর সক্রিয় সদস্য সংখ‌্যালঘুরাও। রাধাকৃষ্ণ, লোকনাথ, কালীমন্দিরের পাশাপাশি একাধিক মসজিদও রয়েছে গ্রামে। ধর্মীয় ভেদাভেদের উসকানি এখানে ছায়া ফেলে না।

দুই বাংলার হিলি সীমান্ত। ফাইল ছবি।

রামমন্দির নিয়ে উন্মাদনা না থাক, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ থেকে শুরু করে ‘সবুজসাথী’, ‘স্বাস্থ‌্যসাথী’র মতো প্রকল্প দিনবদলের হাওয়া বয়ে এনেছে এই গ্রামে। গ্রামবাসী হাসান শেখ, গৌতম রায় থেকে শুরু করে ভাতের হোটেলের মালিক উৎপল সাহারা জানালেন, ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ থেকে শুরু করে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের সুবিধা তাঁরা নিয়মিত পান। বালুরঘাট-হিলি ভায়া বাংলাদেশ জয়েন্ট মুভমেন্ট কমিটি করিডর এর অন্যতম সদস্য আবার অমূল্যরতন বিশ্বাস। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা আশা নিয়ে আছি, হিলি থেকে তুরা পর্যন্ত মেঘালয় করিডর ভায়া বাংলাদেশ, চালু হলে কর্মসংস্থানের একটা বড় দিক খুলে যাবে। ডাঃ নবকুমার দাসের নেতৃত্বে এই দাবি তুলে আসছে কমিটি।’’

[আরও পড়ুন: ইজরায়েলি ড্রোন গুলি করে নামাল ইরান, দেশজুড়ে বন্ধ বিমান পরিষেবা, সতর্কতা জাহাজেও]

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) রেলমন্ত্রী থাকাকালীন রেলের মানচিত্রে জায়গা পেয়েছিল ২৯ কিলোমিটারের বালুরঘাট থেকে হিলি রেলপথ সম্প্রসারণ প্রকল্প। এখন সেই বালুরঘাট থেকে হিলি রেলপথের কাজ শুরু হয়েছে। সেদিকে তাকিয়ে এখন নতুন দিনের আশায় এ তল্লাটের মানুষ। ভোট নিয়ে সরাসরি মুখ না খুলুন, রেল থেকে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ ঘিরে ‘দিদি’কে নিয়ে উষ্ণতা মন ছুঁয়ে আছে আট থেকে আশির।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত বাংলার নারীদের জন্য ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প। নিজস্ব চিত্র।

সাম্প্রদায়িক উসকানি থেকে শত যোজন দূরে থাকা হিলির মরা গাঙে এখন নবজোয়ার। বাংলাদেশের (Bangladesh) সঙ্গে সরকারিভাবে রপ্তানি বাণিজ্য রমরমিয়ে চলছে। হিলির পথ এখন পণ্য বোঝাই ট্রাকের দখলে। দিল্লি, পাঞ্জাব, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, রাজস্থান গুজরাত, হরিয়ানা-সহ একাধিক রাজ্যের পাশাপাশি ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া, রংপুরের পণ্যবাহী ট্রাকের আনাগোনা চলছে হরবখত। তারই রেশ ছুঁয়ে রাজ‌্য সরকারের উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ড গতি পাচ্ছে দিনকে দিন। হাসান, উৎপলরা মুখ না খুলুন, উন্নয়নের সেই হাওয়াতেই কোথাও যেন বাধা পড়েছে ভোটমুখী হিলির মন।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement