Advertisement
Advertisement

Breaking News

Lok Sabha Election 2024

মিনি টর্নেডোতে সর্বহারা, তবু বৃহত্তম গণতন্ত্রের উৎসবে হাসিমুখে শামিল ময়নাগুড়িবাসী

এতদিনের চাপা আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে অনেকেই প্রাণখুলে হাসছেন, কথা বলছেন একে অপরের সঙ্গে।

Lok Sabha Election 2024: Voters of tornado devastated Maynaguri take part to cast vote as democratic right
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:April 19, 2024 10:19 pm
  • Updated:April 19, 2024 10:26 pm

বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, জলপাইগুড়ি: ঠিক যেন যুদ্ধ জয়ের অন্য উপাখ্যান। যদিও পুরোপুরি ঘোর কাটেনি এখনও। আকাশে মেঘ দেখলে এখনও ডরাচ্ছেন। মনে পডে যাচ্ছে সেদিনের মিনি টর্নেডোর পাক খেয়ে ঘরবাড়ি শূন্যে তুলে নেওয়ার ছবিটা। সর্বস্বান্ত হয়ে একসময় ধরেই নিয়েছিলেন, আর বাঁচতে পারবেন না। এর পর দিন গড়াতেই অসংখ্য মানুষের প্রসারিত মানবিক হাত, রাজ্যের আশ্বাস তাঁদের বিধ্বস্ত মনে একটু একটু করে যে সাহস জাগিয়েছে, শুক্রবার সেই শক্তিতেই যেন সুদেব রায়, বিষ্ণু রায়, নিশীথরঞ্জন রায়রা বিশ্বের সর্ববৃহৎ গণতন্ত্রের উৎসবে শামিল হলেন। ভোটের লাইনেই শুধু দাঁড়ালেন না। অন্যদেরও হাল না ছেড়ে খাদের কিনার থেকে লক্ষ্যে ফেরার স্বপ্ন দেখালেন।

সকাল থেকে ভোটের দীর্ঘ লাইন বিভিন্ন বুথে। নিজস্ব চিত্র।

গত ৩১ মার্চ বিকেলে ঘূর্ণিঝড়ে বিপন্ন হয়েছিলেন জলপাইগুড়ি (Jalpaiguri) কেন্দ্রে ময়নাগুড়ির বার্নিশ, ধর্মপুর এবং মাধবডাঙা-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের ছটি বুথের ৬৯৩টি পরিবার। ঘরবাড়ির সঙ্গে উড়েছে তাঁদের ভোটার কার্ড, আধার কার্ড-সহ সমস্ত নথি। ওই কারণে ভোটদানের সুযোগ করে দিতে নির্বাচন কমিশন (Election Commission of India) সেখানকার ভোটদাতাদের বিশেষ স্লিপ দেয়। এদিন সেই স্লিপ হাতে নিয়ে সাতসকালে তাঁরা দাঁড়িয়ে যান পুটিমারি হাই স্কুল, ফুলতলি প্রাইমারি বিএফপি স্কুল, বার্নিশ কালীবাড়ি এলাকার বুথে। সেখানেও সতীশ রায়, প্রসেনজিৎ রায়, সুদেব রায়, কল্পনা রায়, বাসন্তী রায়ের মতো ভোটদাতাদের মুখে ফিরেছে সেদিনের ঘটনার কথা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ডিভোর্সের পর প্রেমের প্রস্তাবের গল্প শোনালেন TMC প্রার্থী সুজাতা, ফের কবে বিয়ের পিঁড়িতে?]

কালীবাড়ি এলাকার বিষ্ণু রায় বলেন, “ভাবতে পারিনি এবার ভোট হবে এখানে। আর আমরা ভোট দিতে পারব।” কেনই বা এমনটা বলবেন না? এখনও দগদগে ঘায়ের মতো ধ্বংসের ছবি জেগে রয়েছে শিশুয়াবাড়ি, বড়কামাত, পুটিমারি, বার্নিশ কালীবাড়ি, ভাতিরবাড়ি, কয়ারবাড়ি, কায়েতপাড়া, দেবনাথ পাড়া জুড়ে। সেখানে নতুন করে জীবন শুরুর লড়াইয়ে ব্যস্ত কল্পনা রায়, বাসন্তী রায়ের মতো সর্বহারা বধূরা। কল্পনাদেবী জানান, ঘটনার পর থেকে এলাকায় ভোট প্রচার ছিল না। যদিও ঝড়ের (Tornado) রাতেই এসেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, পরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নির্বাচন বিধির জন্য আটকে যাওয়া ঘর তৈরির টাকার বন্দোবস্ত করেছেন। ধূপগুড়ির সভায় তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এছাড়াও প্রতিটি রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব সেখানে গিয়েছেন। কেউ ভোটের কথা বলেননি।

Advertisement
ময়নাগুড়ির টর্নেডো বিধ্বস্ত এলাকার বৃদ্ধ ভোটাররা। নিজস্ব ছবি।

বাসন্তীদেবী বলেন, “প্রত্যেকে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। বিপদের সময় সেটাই ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস জুগিয়েছে।” এরপর ধীরে ধীরে কিছুটা স্থিতু হতে নির্বাচন কমিশন স্লিপের ব্যবস্থা করে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মীরাও তাদের বাড়িতে ঘুরে নকল ব্যালট বিলি করে প্রার্থীদের নাম ও প্রতীক জানিয়ে আসেন। ঝড়ে জখম কয়েকজন এদিন ফুলতলি বিএফপি স্কুলের ১১৫ নম্বর বুথে ভোট দেন। সেদিনের ভয়াবহ পরিস্থিতির জানতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর (Central Force) জওয়ানরাও তাঁদের সঙ্গে গল্প জুড়ে দিলেন।

ঝড়ে বিধ্বস্ত নিশীথরঞ্জন রায় বলেন, “ঘটনার পর ভোটের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। কেমন করে বাঁচব সেই চিন্তায় প্রত্যেকে দিশাহারা ছিলাম। আতঙ্কে রাতের পর রাত ঘুমাতে পারিনি। এরপর বিভিন্ন স্তরের মানুষ পাশে দাঁড়াতে সাহস ফিরে পাই।” বুথের অনেকটা বাইরে বিভিন্ন দলে পোস্টার, ফ্লেক্স, পতাকা দেখিয়ে জানান, সপ্তাহখানেক আগে এসব লাগিয়েছেন দলের কর্মীরা। ভোট দিয়ে বেরিয়ে ষাটোর্ধ্ব যামিনীবালা রায় আঙুলের কালির দাগ দেখান। পরে বলেন, “মনে হচ্ছে কত বছর পর আনন্দের পরিবেশ পেলাম। ভোট দিতে পারলাম। খুব ভালো লাগছে।”

[আরও পড়ুন: শিশির অধিকারীকে শিক্ষা! ‘বিজেপি’র বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাসের]

এলাকার বাসিন্দাদের চোখেমুখে হাহাকারের ছায়া অনেকটা মিলিয়েছে। এলাকায় ধরা দিয়েছে যুদ্ধ জয়ের পর উৎসবের মেজাজ। বিভিন্ন দলের কর্মীরা যেভাবে বিপন্নদের খোঁজ নিয়েছেন, সেটাও ছিল নজরকাড়া। স্থানীয় সিপিএম নেতা শিরেন রায়ের কথায়, “প্রত্যেকে অদ্ভুত ট্রমায় দিন কাটাচ্ছিলেন। ভোটকেন্দ্রে এসে অনেকেই মন খুলে কথা বলেছেন। এটা বিরাট প্রাপ্তি।” বরাত ভালো যে এদিন রোদ ছিল না। যদিও মেঘলা আকাশ দেখে অনেকে শঙ্কায় ছটফট করেছেন। আবার কি ঝড়-বৃষ্টি হবে? খোঁজ নিয়েছেন। যদিও গুমোট গরম উপেক্ষা করে ভোটের লাইনে দাঁড়াতে কেউ ভোলেনি। হয়ত এই মনোবল দেখে এক রাজনৈতিক কর্মী দাবি করলেন, “এটাই আমাদের গণতন্ত্রের শক্তি।”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ