Advertisement
Advertisement

অশান্তি কেড়ে নিয়েছে সন্তানকে, মাধ্যমিকের মার্কশিটেই তবু শান্তি খুঁজছেন ইমাম রশিদি

সিবগাতুল্লার মার্কশিটই যেন সম্প্রীতির খোলা চিঠি হয়ে ফিরেছে আসানসোলের রেলপাড়ে।

Madhyamik Result of Asansol Imam's slained Son out
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:June 6, 2018 8:10 pm
  • Updated:June 6, 2018 8:54 pm

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ছেলে নেই। নিয়মমতো তবু এল মার্কশিট। ছেলের পরিশ্রমের ফলাফল ফিরল নম্বরের হিসেব-নিকেশে। সেখানেই যেন লেগে আছে চলে যাওয়া ছেলের ঘ্রাণ, হাতের ছোঁয়া। আর তা বুকে ধরেই শান্তি খুঁজছেন আসানসোলের ইমাম রশিদি।

বুধবারের ছবিটা হয়তো একদম অন্যরকম হতে পারত। হয়তো এতক্ষণে খুশির রোশনাইয়ে ছেয়ে যেত বাড়ি। আসতেন প্রতিবেশীরা। ছেলের বন্ধু-বান্ধবের কলরোলে মুখরিত হত ছোট্ট বাড়িটি। সকলের অভিনন্দনের উত্তরে তিনি হয়তো চেয়ে নিতেন ছেলের জন্য আশীর্বাদ। খুশির আলো ঝিলিক দিয়ে যেত তাঁর চোখেমুখে। আর হবে নাইবা কেন! ছেলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় সফল হলে কোন বাবাই না খুশি হন! আসানসোলের ইমাম রশিদিও হয়েছেন। তবে আজ ছেলেটাই শুধু নেই। এসেছে তার মার্কশিট।

Advertisement

[  অভাবকে জয়, মাধ্যমিকে ৬৭৩ পেয়ে বসতির ঘুপচি ঘরে সূর্যের আলো এনেছে রবি ]

Advertisement

গত মার্চেই অশান্ত পৃথিবী পিতার বুক থেকে কেড়ে নিয়েছিল সন্তানকে। অস্থির সময়ের বলি হয়েছে তাঁর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী পুত্র। রাম নবমী উপলক্ষে তখন অশান্তিতে উত্তাল আসানসোলের রেলপার এলাকা। সে সময়ই নিখোঁজ ছিল ইমাম সাহেবের পুত্র সিবগাতুল্লা। আশঙ্কা ছিল অঘটনের। তাইই সত্যি হয়েছিল। পরে উদ্ধার হয়েছিল কিশোরের বস্তাবন্দি লাশ। কারা যেন নিষ্পাপ কিশোরকে খুন করে ফেলে রেখে গিয়েছিল। অশান্তির আগুনে ঘৃতাহুতি হতে পারত সে ঘটনায়। তবে এ পৃথিবীতে ইমাম রশিদির মতো অলৌকিক মানুষ আছেন বলেই আজও শান্তির জল ছড়িয়ে পড়ে। সমস্ত অশান্তির উপর পরদা টেনে দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, তাঁর সন্তান গিয়েছে। সেটাই বোধহয় ঈশ্বরের মর্জি। কিন্তু আর কোনও মায়ের কোল যেন খালি না হয়। এ নিয়ে বাড়তি অশান্তি হলে আসানসোল ছেড়ে চলে যাবেন বলেও জানিয়েছিলেন। পুত্রহারা পিতার সেই কাতর আবেদন ফেলতে পারেননি বাসিন্দারা। অশান্তির অস্ত্র হাতে তুলে নিতে গিয়েও থমকে গিয়েছিল শিল্পশহর. খাঁ খাঁ শূন্যতা আর শোকের ভিতরও যেভাবে স্থির, সম্প্রীতির জন্য অবিচল ছিলেন তিনি, তাই-ই শান্তির ছায়া নামিয়ে এনেছি অশান্ত আসানসোলের রেলপারে। গোটা রাজ্যেই ইমাম যেন হয়ে উঠেছিলেন সম্প্রীতির বাতিঘর। যাঁকে দেখে সমস্ত অস্থিরতা মাথা নুইয়েছিল। শিখেছিল, ব্যক্তি শোকের উর্ধ্বে উঠেও কীভাবে সমগ্রকে আপন করে নিতে হয়।

 মাধ্যমিকে নজরকাড়া ফল কোচবিহারের, প্রথম দশে কতজন জানেন? ]

ইমাম সাহেবের পুত্র সিবগাতুল্লারও মাধ্যমিকের ফলাফল প্রকাশ হয়েছে আজই। সেসব অবশ্য তার আর দেখা হল না। তবে দেখলেন পুত্রহারা পিতা। মার্কশিটের উপর জ্বলজ্বল করছে ছেলের নম্বর। প্রাপ্ত নম্বরের সংখ্যাতেই তো মিশে আছে ছেলের পরিশ্রম। অনেক রাতজাগা, দিনভর পড়াশোনা মিশে আছে সংখ্যায় সংখ্যায়। আজ সেসব শুধুই স্মৃতি. তবু শুকনো কাগজের মার্কশিটই যেন মুহূর্তে হয়ে উঠছে প্রাণবন্ত। যেন এই কাগজই ইমাম সাহেবের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছে ছেলেকে। বিহ্বল ইমাম সাহেব বলছেন, যতটা ভাল ফলের আশা ছিল তার থেকে একটু কমই হয়েছে। কিন্তু সেটা কোনও ব্যাপার নয়। ফলাফলের উনিশ-বিশ তিনি মেনেই নিয়েছেন। তবে তার থেকেও বড় কথাটি বলে দিয়েছেন ইমাম সাহেব। বলেছেন, আমরা যে সবাই একসঙ্গে বসবাস করতে পারছি সেটাই তো অনেক।

এই সুস্থ সহাবস্থান তো এসেছে তাঁর পুত্রের জীবনেরই বিনিময়ে। আজ অন্তর হয়তো কষ্টে মুচড়ে যাচ্ছে। জ্বালা করছে দুটো চোখ। তবু চোখের কোণে জল নেই ইমাম সাহেবের। চলে যাওয়া সন্তান আর ফিরবে না। শান্তি তবু ফিরেছে। কাগজের মার্কশিটই যেন আজ তাই গোটা এলাকায় ফিরেছে সম্প্রীতির খোলা চিঠি হয়ে।

[  পরপর ছ’বার মাধ্যমিকে রাজ্যে সেরা পূর্ব মেদিনীপুর ]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ