বাবুল হক: দিকে দিকে বাগদেবীর আরাধনায় নানা আয়োজন। শিক্ষার আলো এসে পড়ুক সবার মধ্যে, প্রার্থনা এমনটাই। কিন্তু সত্যি কি আর সবসময় তা হয়! অন্তত মায়া পাল, মালতি হালদার কিংবা আরতি ঘোষরা কোনওদিন সে আলো পাননি। কিন্তু এবার সময় বদলের সময়। এতদিন যাঁদের অক্ষর পরিচয় ছিল না, পাড়ার প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিদ্যার দেবীকে সাক্ষী রেখেই হাতেখড়ি হল তাঁদের। প্রত্যেকের হাতেই স্লেট-পেনসিল। অ-আ-ক-খ লেখা বই। আর ব্ল্যাকবোর্ডের সামনে দাঁড়িয়ে একেবারে শিক্ষকের ভূমিকায় স্বয়ং জেলাশাসক। না, পুজোর থিম নয়। বাস্তবে ঘটল এটাই।
[ মন্দির তৈরি করে বাগদেবীর আরাধনা, বিরল নজির হাওড়ায় ]
অভিনব সরস্বতী পুজো। বয়স্কদের হাতেখড়ি দিয়ে উদযাপন। হাতেখড়ির সূচনা এদিন হলেও সাক্ষর করে তোলার পাঠ দেওয়া হবে বছরভর। স্কুলের শিক্ষকরাই রোজ খানিকটা সময় বের করে পাড়ার বয়স্ক নিরক্ষর মানুষদের পড়াবেন। সরস্বতী পুজো উপলক্ষে রবিবার এমনই এক অভিনব প্রকল্পের সূচনা হল মালদহ শহরের ২ নম্বর গভর্ণমেন্ট কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। উপস্থিত ছিলেন মালদহের জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য, জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সভাপতি আশিস কুণ্ডু, ইংলিশবাজার পুরসভার চেয়ারম্যান তথা বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ প্রমুখ। জীবনের মাঝপথ পেরিয়ে আসা সত্তরের মায়া পাল, মালতি হালদারদের হাতেখড়ি দিলেন জেলাশাসক নিজেই। ব্ল্যাকবোর্ডে ‘অ’ লিখলেন তিনি। তা দেখে মায়াদেবীরাও নিজে লেখার চেষ্টা করলেন। তারপর বয়স্কদের হাত ধরে হাতেখড়ি করান প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সভাপতি-সহ স্কুলের শিক্ষকরা। মালদহ শহরের ২ নম্বর গভর্মেন্ট কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ষপূর্তিও চলছে। তার মধ্যেই এমন ছকভাঙা কর্মসূচি নজর কেড়েছে সবার। মালদহের জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “এই উদ্যোগ দেখে আমরাও অভিভূত। পাড়ার বয়স্কদের শিক্ষার আলোয় আনতে শিক্ষকদের এই কাজ সত্যিই আমাদের মুগ্ধ করেছে।”
[ সেবাই মূল মন্ত্র, রাষ্ট্রপতির আমন্ত্রণে দিল্লি যাচ্ছেন না ‘অ্যাম্বুল্যান্স দাদা’ করিমুল ]
প্রধানশিক্ষক শুভেন্দু দাস বলেন, “একটু অভিনব হলেও স্কুলের স্বার্থেই এটা আমরা করছি। আমাদের স্কুলে প্রায় ৪০০ জন ছাত্রছাত্রী। যাদের একটা বড় অংশ বস্তি এলাকায় থাকে। আমরা অনেক পড়ুয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখেছি, বাড়িতে পড়াশুনার তেমন চল নেই। মা-বাবাও কখনও স্কুলে যাননি। পড়াশুনা করেননি। যার প্রভাবটা শিশুদের উপরও পড়ছে। পড়াশুনার প্রতি আগে বাবা-মায়েদের অনীহা দূর করতে হবে। সেই মানুষগুলোকে সাক্ষর করা গেলে শিশুদেরও পড়াশুনা করানোর পথ অনেকটা সুগম হবে। তাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার স্বার্থেই আমাদের এই বছরভর কর্মসূচি চলবে। প্রথম পর্যায়ে ২০ জন বয়স্ক মানুষকে প্রতি রবিবার পড়ানো হবে।” মালদহ জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদ সভাপতি আশিস কুণ্ডু বলেন, “অসাধারণ ভাবনা! একটা স্কুল যদি এভাবে সামাজিক দায়িত্ব পালন করে তাহলে তার চেয়ে আর ভাল কিছু হয় না।”
ছবি: হরেন চৌধুরি
[ সবথেকে বড় সরস্বতী গড়ে নজর কাড়ছে মালদহ, দেখুন ভিডিও ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.