বাবুল হক, মালদহ: পেশায় কৃষক৷ জমিজমা প্রচুর৷ দোতলা বাড়ি৷ কৃষিকাজ করে কিছু ধনসম্পদও জমিয়েছেন৷ একমাত্র ছেলে বিএ পাস করে এখন ব্যবসা করছেন৷ কিন্তু একটাই আক্ষেপ সোহরাব আলির! তিনি ছেলের বিয়ে দিতে পারছেন না৷
সপ্তাহ তিনেক আগেও একটা ভাল পাত্রীর সন্ধান মিলেছিল। সেটাও বাতিল হয়ে গিয়েছে। পাত্রীপক্ষই বেঁকে বসে ‘না’ করে দিয়েছে। সোহরাব আলির ক্ষোভ একটাই, “আমার টাকাপয়সা, সবকিছুই রয়েছে। ছেলেও ভাল। তবু বারবার সম্বন্ধ এলেও ছেলেটার বিয়ে ভেঙে যায়।’ কারণটা জানেন কি? কারণ, গ্রামের এই বাঁশের সাঁকো। যাতায়াতের একমাত্র ভরসা এটিই। আর এই সাঁকো পেরিয়ে শ্বশুরবাড়ি আসতে চান না অন্য গ্রামের পাত্রীরা। তাঁদের অভিভাবকরাও সাঁকো দেখে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।”
[পঞ্চায়েত ভোটের মনোনয়ন LIVE: লালবাগে সিপিএম পার্টি অফিসে ভাঙচুর, আহত ১]
শুধু তিনিই নন, সফিকুল শেখ, আজমিরা বিবি থেকে শুরু করে জমিতে যিনি লাঙল চালান তিনিও বুকে চেপে রাখা এই জ্বলন্ত সমস্যাটি প্রত্যহ উপলব্ধি করেন। কিন্তু কবে যে সমস্যার সুরাহা হবে তা কেউই জানেন না। গ্রামের মানুষের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা একটা বাঁশের সাঁকো। আর সেই সাঁকোই কি না বিয়ে ভেঙে দেয় গ্রামের পাত্রপাত্রীদের! ভোট মরশুমে ফের মুখে মুখে এই চর্চা শুরু হয়েছে ভবানীপুরে।
মালদহের চাঁচোল-১ নম্বর ব্লকের খরবা গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত এই ভবানীপুর গ্রাম। পাশের গ্রাম নৈকান্দায় চাঁচোলের কংগ্রেস বিধায়ক আসিফ মেহবুবের বাড়ি। বিগত পাঁচটি বছর খরবা গ্রাম পঞ্চায়েত ছিল বামেদের দখলে। কিন্তু ভবানীপুরের মানুষের যাতায়াতের সমস্যা মেটাতে কেউ উদ্যোগী হননি বলে অভিযোগ বাসিন্দাদের। মরা মহানন্দা নদীর উপর একটা সেতু চেয়ে প্রত্যেক ভোটেই নেতাদের কাছে আরজি জানায় ভবানীপুর। নেতারাও বাঁশের সাঁকোর উপর দিয়ে মরা মহানন্দা নদী টপকে ভোট চাইতে ভবানীপুরে আসেন৷
গ্রামবাসীদের কথায়, ‘‘ভোট দিলেই সেতু পাব, এই আশায় আমরা ভোট দিয়ে থাকি। কিন্তু ভোট ফুরোলেই নেতাদের আর দেখা মেলে না৷’’ খরবা পঞ্চায়েতের রাস্তাঘাটের সমস্যাই এবার বাম ও কংগ্রেসকে অনেকটা ব্যাকফুটে ফেলতে পারে বলে চাঁচোল মহকুমার রাজনৈতিক মহল মনে করছে। খরবার নৈকান্দা, শক্তিহার, তারাপুর, গোপালপুর, দোগাছি, মহাদেবপুর-সহ সমস্ত গ্রামেই রাস্তার সমস্যা রয়েছে৷ সামান্য বৃষ্টিতেই রাস্তাগুলি বেহাল হয়ে পড়ে৷ এখানে সব গ্রামেই ভোটের ইস্যু সেই রাস্তাই৷ এবার ভবানীপুরের সেই বাঁশের সাঁকোর ছবি দিয়ে পোস্টার তৈরি করে বাম-কংগ্রেসের বিরুদ্ধে প্রচার চালাবে তৃণমূল। এমনটাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্ব৷ খরবা অঞ্চলের তৃণমূল নেতা রাকিব হোসেন বলেন, ‘‘তৃণমূল সরকার বাংলাজুড়ে উন্নয়ন করছে। আর এখানে বামফ্রন্ট ও কংগ্রেস পঞ্চায়েতে ক্ষমতায় থাকলেও কোনও কাজই করেনি৷ মানুষ বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে যাতায়াত করছেন৷ বিয়ে ভাঙছে। অথচ কংগ্রেসের সাংসদ বা বিধায়কের হুঁশ নেই।”
[কাকা তৃণমূলে, ভাইপো বিজেপির প্রার্থী! জমজমাট ভোটের লড়াই গলসিতে]
স্থানীয় কংগ্রেস নেতা জাহাঙ্গির আলম পাল্টা বলেন, “যা উন্নয়ন হয়েছে, সবই বিধায়কের তহবিল থেকে হয়েছে। সেতু তৈরি করার দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। সেই দায়িত্ব পালন করেনি তৃণমূলের সরকার।” বামফ্রন্ট পরিচালিত খরবা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান জাহানারা বিবি বলেন, “আমার আগে পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস। তাঁরা কেন কাজটি করেননি? আমি পৌনে দু’শোটি নতুন রাস্তা তৈরি করেছি। ১০০ দিনের প্রকল্পে ১৮ কোটি টাকার কাজ করেছি। ২০০টি নলকূপ বসিয়েছি। আর সেতু? ওটা বড়ো স্কিম৷ পঞ্চায়েত করতে পারে না৷’’