সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: লোকসভা ভোটে দলের ফলাফল বেশ খারাপ হয়েছে। অধিকাংশ বিধানসভা কেন্দ্র তৃণমূলের দখলে থাকা সত্ত্বেও এখানকার একটিমাত্র লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ বিজেপি। সামনে পুরভোট এবং একুশে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে হারানো জমি এবং জনসমর্থন পুনরুদ্ধারে এবার সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন বিরোধী কর্মসূচিকে হাতিয়ার করলেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী।
আজ দুপুরে পুরুলিয়া শহরে CAA বিরোধী পদযাত্রা শুরু করার আগে কেন্দ্রকে কড়া ভাষায় আক্রমণের পাশাপাশি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে শপথবাক্য পাঠ করালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজেই কাঁসরঘণ্টা বাজিয়ে তাঁদের সঙ্গে নিয়ে মানভূম ভিক্টোরিয়া ইনস্টটিউশন থেকে শুরু করলেন মিছিল। সঙ্গী রাজ্যের চার মন্ত্রী – শুভেন্দু অধিকারী, মলয় ঘটক, শান্তিরাম মাহাতো, সন্ধ্যারানি টুডু।
[আরও পড়ুন: ‘ঝাড়খণ্ড গিয়েছিলেন গুণ্ডা ভাড়া করতে’, মুখ্যমন্ত্রীকে কড়া আক্রমণ লকেটের]
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে যেদিন কলকাতা থেকে লাগাতার প্রতিবাদ কর্মসূচি ঘোষণা করে পথে নেমেছিলেন মু্খ্যমন্ত্রী, সেদিনও সমবেত জনগণকে শপথ পড়িয়ে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুরুলিয়া শহরেও বজায় রাখলেন একই ধারা। এদিন দুপুর ১২টা নাগাদ মানভূম ভিক্টোরিয়া ইনস্টিটিউশনের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ থেকে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করে তিনি বলেন, ”নতুন আইনে সংখ্যালঘুরা আতঙ্কিত। এনআরসি-র নামে ভারত থেকে তাঁদের বিতাড়িত করার চক্রান্ত চলছে। সবাইকে বলব, জোট বাঁধুন, তৈরি হোন। যারা অন্য মানুষকে তাড়াতে চায়, ভারতবর্ষে তাদের জায়গা নেই। এটা গণতন্ত্র বাঁচানোর আন্দোলন। আজ দেশের স্বাধীনতাই বিপন্ন।” জামিয়া মিলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের উপর পুলিশি নির্যাতনের নিন্দা জানিয়ে মমতার অভিযোগ, ”ছাত্র আন্দোলনকে দমানোর চেষ্টা চলছে। তাদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে।”
এরপরই জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, ”আপনারা সকলে শপথ নিন।” মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জনতাও সমস্বরে শপথের মতো করেই বলেন, ”আমরা সবাই নাগরিক। সর্বধর্ম সমন্বয় আমাদের জীবন আদর্শ। কাউকে বাংলা ছাড়তে দেব না, কাউকে দেশ ছাড়তে দেব না। সবাই একসঙ্গে নিশ্চিন্তে থাকব, শান্তিতে থাকব। সিএএ, এনআরসি করতে দিচ্ছি না, দেব না।”
[আরও পড়ুন: পাওনা টাকার আদায়ে যুবককে বেধড়ক মার, বাঁচাতে গিয়ে মৃত বাবা]
শপথ পাঠ শেষে পদযাত্রা শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। সাধারণ নাগরিকের যোগদানে যা কার্যত মহামিছিলে পরিণত হয়। বিটি সরকার রোড, জেলা স্কুল মোড়, জেলখানা মোড়, হাটের মোড়, নীলকুঠি ডাঙা, রাধাকৃষ্ণ মোড়, স্টেশন রোড, মধ্য বাজার হয়ে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড – দীর্ঘ চার কিলোমিটার মিছিলে শামিল হয়েছিলেন লোকশিল্পীরাও। CAA-NRC বিরোধী স্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাট আউটের পাশাপাশি গোটা যাত্রাপথেই ছিল ধামসা-মাদলের সুর। রাজনৈতিক মহলের একাংশের মত, গত লোকসভায় এই জেলায় তৃণমূলের হার বড়সড় ধাক্কা তৃণমূল সুপ্রিমোর কাছে। এই CAA-NRC ইস্যুকে সামনে রেখে তাঁর এই পদযাত্রা আসলে জনসংযোগেরই কৌশল। যেমনটা করেছিলেন লোকসভা নির্বাচনের আগে, প্রতিটি কেন্দ্রে প্রার্থীকে সঙ্গে নিয়ে পদযাত্রায় হেঁটে।
ছবি: সুনীতা সিং।