Advertisement
Advertisement

২৭শে রেড রোডে শপথ, রাজ্যজুড়ে ১০ দিন উৎসব

দেশের অন্যত্র যখন প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া, তখন মমতা তাঁর সবুজ গড় অটুট রাখায় জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর গুরুত্ব আরও খানিকটা বেড়ে গিয়েছে৷ ফের সামনে এসেছে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে ফের তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের বিষয়টি৷

Mamata To Take Oath On 27, State Would Celebrate 10 Days Victory
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:May 20, 2016 9:03 am
  • Updated:June 23, 2022 7:47 pm

কিংশুক প্রামাণিক: বাংলার রাজনীতির মহাকাশে নতুন অধ্যায় রচনা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ একক দল হিসাবে শুধু ক্ষমতায় ফেরাই নয়, দুই-তৃতীয়াংশের বেশি গরিষ্ঠতা পেল তৃণমূল কংগ্রেস৷ তৈরি হল নতুন ইতিহাস৷
পাঁচ বছর আগে পরিবর্তনের ভোটে প্রবল পরাক্রমী সিপিএম পার্টির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছিলেন এই মমতাই৷ এবার আক্ষরিক অর্থেই সূর্যকান্ত মিশ্রদের ‘ছাগলের তৃতীয় ছানায়’ (সৌজন্য মানিক সরকার) পরিণত করলেন তিনি৷ তৃণমূলনেত্রী যখন ২১১ আসন নিয়ে বিধানচন্দ্র রায়কে ছাপিয়ে গেলেন, তখন আলিমুদ্দিন স্ট্রিটের বিধায়ক সংখ্যা মাত্র ২৬৷ বামফ্রন্ট (যে কথাটি এই ভোটে অনুচ্চারিত) ৩২৷ গোটা বাংলায় ধুয়েমুছে সাফ লাল পার্টি৷
রাজ্যজুড়ে শুধুই সবুজ বিপ্লব৷ খানিকটা মুখরক্ষা কংগ্রেসের৷ সিপিএমকে নিজেদের ভোট হস্তান্তর না করে ডুবিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস৷ পক্ষান্তরে অবশ্য সিপিএমের ভোট পেয়েই তারা পেয়েছে ৪৪ আসন৷ গতবারের চেয়ে দু’টি বেশি৷ অর্থাৎ এই ফলাফলের জেরে বিধানসভায় সিপিএমের বিরোধী দলের মর্যাদাও আর থাকল না৷ চলে গেল কংগ্রেসের হাতে৷ বিজেপি এই প্রথম বিধানসভা ভোটে খাতা খুলল বাংলায়৷ তারা পেয়েছে তিনটি আসন৷ সব মিলিয়ে এদিন দেখা গেল জোটকে কেন্দ্র করে এতদিন যা যা হয়েছে তা পুরোটাই ফাঁপা৷ বিশ্বাসযোগ্যতা, সংগঠন ও ভোটব্যাঙ্ক কিছুই নেই৷ ফলে বৃহস্পতিবার সকালে ভোটবাক্স খুলতেই শুরু মমতা-ম্যাজিক৷ আবার স্পষ্ট হল, জনপ্রিয়তার নিরিখে মানুষের কোন মণিকোঠায় রয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী৷ লোকসভা ভোটের চেয়েও প্রায় ৬ শতাংশ ভোট বাড়ল তৃণমূলের৷ অর্থাত্‍ ৪৫ শতাংশ ভোট এককভাবে পেয়ে নজির গড়লেন মমতা৷
ঐতিহাসিক এই জয়কে সেলিব্রেট করতে অভিনব আয়োজন৷ শুক্রবার দিনটি নেত্রীর বরাবরই পয়মন্ত৷ আগামী ২৭ মে শুক্রবার রাজভবন নয়, রেড রোডে দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেবেন মমতা৷ তার আগে আজ, শুক্রবার কালীঘাটে দলীয় অফিসে ২১১ জন তৃণমূল বিধায়ক তাঁদের দলনেত্রীকে মনোনীত করবেন৷ এর পর নেত্রী তৈরি করবেন তাঁর মন্ত্রিসভা৷ মণীশ গুপ্ত, উপেন বিশ্বাসের মতো কয়েকজন মন্ত্রী যেমন হেরেছেন, তেমনই নতুন অনেকে জিতেছেন৷ জেলাভিত্তিক ভারসাম্য রেখেই তালিকা তৈরি হবে৷

জয়ের পর উল্লাস তৃণমূল সমর্থকদের৷ বৃহস্পতিবার৷ ছবি: শুভাশিস রায়।

Advertisement

এক কথায় মমতার এই জয় সবদিক থেকেই অনন্য৷ জনরায়কে হাতিয়ার করেই অনেকের মুখ একসঙ্গে তিনি বন্ধ করে দিলেন৷ নির্বাচনী প্রচারে বিরোধীরা ব্যক্তি আক্রমণে ক্ষত-বিক্ষত করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীকে৷ জীবনে যিনি কারও পয়সায় এককাপ চা-ও খেলেন না, তাঁকে চোর বলতেও পিছপা হয়নি বিরোধীরা৷ তৃণমূল নেত্রীর সেই অপমানের জ্বালা মানুষ জুড়িয়ে গেল ভোটবাক্সেই৷ গতবার কংগ্রেসের সঙ্গে জোট করে তৃণমূল পেয়েছিল ১৮৪টি আসন৷ আর এবার ২৯৪ আসনে একা প্রার্থী দিয়ে ২১১টিতে জয়৷ ঐতিহাসিক এই জয় জনগণকে উৎসর্গ করে আজ, শুক্রবার থেকে আগামী ১০ দিন বিজয় উৎসব পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তৃণমূল৷ আর কেন্দ্রীয়ভাবে এই জয় পালন করা হবে মা-মাটি-মানুষ দিবস ২১ জুলাইয়ের সমাবেশে৷

তবে দেশের অন্যত্র যখন প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া, তখন মমতা তাঁর সবুজ গড় অটুট রাখায় জাতীয় রাজনীতিতে তাঁর গুরুত্ব আরও খানিকটা বেড়ে গিয়েছে৷ ফের সামনে এসেছে তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করে ফের তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের বিষয়টি৷ যদিও নেত্রী এ নিয়ে এদিন কিছু বলতে চাননি৷ রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে অরুণ জেটলি, রাজনাথ সিং, চন্দ্রবাবু নাইডু, নীতীশ কুমার, কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর ঘনিষ্ঠ আহমেদ প্যাটেল, অমিতাভ বচ্চন-সহ বহু বিশিষ্ট মানুষ এদিন তাঁকে অভিনন্দন জানিয়েছেন৷
শপথেও আসতে চান অনেকে৷ লোকসভা ভোটকে সামনে রেখে তিনি যে এবার সংগঠনকে অন্য রাজ্যে বিস্তারের কাজ শুরু করবেন সেই ইঙ্গিতও দিয়েছেন মমতা৷ এদিন কালীঘাটে এসেও বহু বিশিষ্ট মানুষ তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে যান৷ আসেন মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজিপি, সিপি প্রমুখ৷
গতবার ‘বদলা নয়, বদল চাই’ স্লোগান দিয়ে জয়ের পর রবীন্দ্রসংগীত বাজাতে নির্দেশ দিয়েছিলেন নেত্রী৷ এবার অবশ্য পরিবেশ ছিল আরও তপ্ত৷ নেত্রীকে ব্যক্তি আক্রমণ এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, মনে করা হচ্ছিল ভোটে শাসক দল জিতলে প্রবল সংঘর্ষ শুরু হবে৷ কিন্তু এদিন কর্মীদের শান্ত, সংযত ও দায়িত্ববান থাকার পরামর্শ দিয়ে রাজধর্ম পালন করেন মমতা৷ এমনকী বিরোধীদেরও প্রতি-আক্রমণ না করে সৌজন্য দেখিয়েছেন৷ পাশাপাশি যাঁদের আক্রমণে তিনি ক্ষত-বিক্ষত তাঁদের উদ্দেশে বলেছেন, “আপনারা ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন৷ আর অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিন৷ মানুষই সব৷ আমি তাঁদের উপরই আস্থা রেখেছিলাম৷”
শুধু দুঃখ একটাই৷ ঘরে মা গায়ত্রীদেবী নেই৷ গত রাতে তিনি এসেছিলেন স্বপ্নে৷ আশ্বস্ত করেছিলেন৷ একথা যখন বলছেন, চিকচিক করছে তাঁর চোখ৷

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement