নিজস্ব সংবাদদাতা, হুগলি: স্ত্রীর সম্পত্তি হাতাতে ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, স্বামী মারা যাওয়ার পর তিন ছেলেকে নিয়ে থাকতেন চুঁচুড়ার জ্যোতি। তারপর সংসার বাঁচাতে ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন আরেক যুবককে। দীর্ঘ দশ বছর একসঙ্গে ঘর করার পর রাতের অন্ধকারে বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে গেল স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বর্তমানে নিরাশ্রয় ওই গৃহবধূ অন্য লোকের বাড়িতে আতঙ্কের রাত কাটাচ্ছেন। তার তিন ছেলে বর্তমানে আত্মীয়ের বাড়িতে থাকলেও তারাও নিরাপদ নয় বলে দাবি ওই গৃহবধূর। দিন চারেক আগে চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে চুঁচুড়া থানার পাঁচলকি আকনা দোলবাড়ি এলাকায়। ওই গৃহবধূ অত্যাচারের বিচার চেয়ে চুঁচুড়া থানার দ্বারস্থ হয়েছেন। তবে চুঁচুড়া থানার পুলিশ ঘটনার তদন্তে নামলেও এখনও পর্যন্ত এই ঘটনায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি।
[পরকীয়া জানাজানি হওয়ার জের, মুরগির খামারে উদ্ধার দেওর ও বউদির ঝুলন্ত দেহ]
আক্রান্ত ওই গৃহবধূর নাম জ্যোতি কৈরি। জ্যোতি জানান, প্রথম পক্ষের স্বামী মারা যাওয়ার পর তাঁর সঙ্গে এলাকারই এক যুবক রাজা কৈরির সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারপর রাজা কৈরির সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১০ বছর আগে ভালবেসে দুজনে হিন্দু শাস্ত্রমতে বিয়ে করেন। বিয়ের পর কয়েক মাস তাঁরা দুজনে শ্বশুরবাড়িতে সুখেই ঘর করেছিলেন। কিন্তু তারপর থেকেই তাঁর উপর শাশুড়ি মুনিয়া কৈরি ও ননদ নিতু কৈরি চক্রান্ত করে তাঁদের দুজনকে আলাদা করে দেওয়ার চেষ্টা করে। জ্যোতি জানান, মানসিক অত্যাচার চরমে পৌঁছালে তিনি স্বামীকে নিয়ে অন্যত্র ঘরভাড়া করে বসবাস শুরু করেন। পরে জ্যোতির বাবা তাঁর একমাত্র মেয়েকে আকনা দোলবাড়ি এলাকায় ছোট একটি জায়গা কিনে বাড়ি বানিয়ে দেন। স্বামীকে নিয়ে সেখানেই বসবাস শুরু করেন। জ্যোতির অভিযোগ, তিনি বাড়িতে না থাকাকালীন ননদ ও শাশুড়ি তাঁর ঘরে এসে তার স্বামীকে কুমন্ত্রণা দিয়ে মন বিষিয়ে দেয়। পরিণতি হিসেবে মা বোনের প্ররোচনায় স্বামী তাঁর উপর অত্যাচার শুরু করে। অভিযোগ, প্রায়শই তাঁর স্বামী মদ্যপ অবস্থায় বাড়ি এসে তাঁকে মারধের করত। জ্যোতির অভিযোগ, তাঁর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোক প্রায়শই তাকে হুমকি দিত, তিনি বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে না গেলে তাঁর ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেবে। জ্যোতির অভিযোগ, তাঁর সম্পত্তি হাতানোর উদ্দেশ্যেই তাঁকে বাড়ি ছাড়ার জন্য হুমকি দিত। কিন্তু তার পরিণতি যে এতটাই ভয়ঙ্কর হবে তা তিনি কল্পনাতেও ভাবতে পারেননি।
[১৫ দিনের শিশুকে বাড়ির পুকুরে ফেলে দিল পরিজনরাই!]
তাঁর অভিযোগ, ১৩ ডিসেম্বর রাত ৯টার সময় স্বামী ও শাশুড়ি এসে তাঁকে প্রচণ্ড মারধর করে। চড় ঘুসি মারে। তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাঁর হাত-পা বেঁধে ঘরে কেরোসিন তেল ছেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। তিনি বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার করলে প্রতিবেশীরা তাঁকে এসে কোনওমতে উদ্ধার করে চুঁচুড়া ইমামবাড়া হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু বিধ্বংসী আগুনে তাঁর ঘরবাড়ির সমস্ত আসবাব ও জিনিসপত্র-সহ ভোটার কার্ড, আধার কার্ড ও প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র পুড়ে যায়। অভিযোগ, তাঁর যাবতীয় সোনার গহনা লুট করে নিয়ে যায় শ্বশুরবাড়ির লোকজন। বর্তমানে তিনি নিঃস্ব ভিখারির মতো দিনযাপন করছেন। বর্তমানে তিনি প্রাণনাশের আশঙ্কা করছেন। এরকম পরিস্থিতিতে তিনি স্বামী, শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে চুঁচুড়া থানায় মারধর ও বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছেন। জ্যোতির দাবি, যেকোনও সময় তাঁর উপর আবার হামলা হতে পারে। পুলিশ প্রশাসনের কাছে তাঁর আবেদন, অবিলম্বে দোষীদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাঁকে সুস্থ জীবনযাপন করতে যেন সাহায্য করেন। তবে এই ঘটনায় অভিযুক্তদের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি। এলাকার মানুষও চাইছেন এই অন্যায়ের বিচার হোক।