ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: চটজলদি মুরগিকে তাগড়াই বানাতে যথেচ্ছ ওষুধের ব্যবহার করছে পোল্ট্রি ফার্মগুলি। কম সময়ে মুরগি গতরে তরতরিয়ে বাড়ছে ঠিকই, তবে এই ওষুধের বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় মুরগির মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। যার দৌলতে মরা মুরগির কারবার বিরাট আকার নিয়েছে।
পোল্ট্রি থেকে মরা মুরগি কেনার এই কারবার দীর্ঘদিনের। চাষিদের থেকে জানা যায়, মুরগি পালনের সময় বহু মুরগি-ই মারা যায়। তবে এতদিন সেগুলি শুধু মাছের খাবার হিসাবেই ব্যবহার হত। ভেড়ি অঞ্চলের কিছু কারবারি পোল্ট্রিগুলিতে ঘুরে ঘুরে মরা মুরগি কিনে, সেগুলি ভেড়ির মালিকদের কাছে মাছের খাদ্য হিসাবে বিক্রি করত। তবে গত কয়েক বছর ধরে মাছের এই খাদ্য, মানুষের খাবারের তালিকায় ঢুকে গিয়েছে। পোল্ট্রিতে মুরগির মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ার কারণে মাছের খাবার হিসাবে বিক্রি করার পরও উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে সেগুলি। সেই উদ্বৃত্ত মরা মুরগি ওই কারবারিদের হাত ধরে পাচার হচ্ছে বিভিন্ন হোটেল-রেস্তরাঁয়। বেশি লাভের আশায় জলের দামে সেই মুরগি কিনছে খাবারের দোকানগুলি।
পোল্ট্রিতে অত্যধিক মুরগির মৃত্যুর কারণ হিসাবে যথেচ্ছ ওষুধের প্রয়োগ। এমনটাই দাবি অধিকাংশ চাষির। উত্তর ২৪ পরগনার শাসন থানা এলাকার এক পোল্ট্রি মালিকের থেকে জানা যায়, মুরগির সংস্থাগুলি মুরগির বাচ্চা পাঠিয়ে দেয়। দ্রুত সেগুলি বড় করার জন্য মুরগির চোখে দু’টি টিকা দিতে বলা হয় তাঁদের। এই ওষুধগুলি মুরগির বাচ্চার চোখে দেওয়া হয়। তবে এই ওষুধের পরিমাণে সামান্য হেরফের হলেই মৃত্যু অবধারিত। প্রথম টিকাটি দেওয়া হয় দশ থেকে বারো দিনের মাথায়। দ্বিতীয় টিকা দেওয়া হয় ২৪ থেকে ২৬ দিনের মধ্যে। এই ওষুধের প্রয়োগে কয়েকদিনের মধ্যেই মুরগির বাচ্চাগুলির ওজন এক থেকে দেড় কিলো হয়ে যায়। তবে এই ওষুধের দরুন বহু মুরগির মৃত্যুও হয়। সেইগুলিও মরা মুরগির কারবারিরা সংগ্রহ করে বিক্রি করে।
হাবড়া এলাকার এক পোল্ট্রি মালিকের থেকে জানা যায়, আগে সপ্তাহে এক বার মরা মুরগি সংগ্রহ করতে আসত এই কারবারিরা। এখন দুই থেকে তিনদিন অন্তর আসে তারা। বাজারের মুরগির দাম একশো টাকার বেশি হলে এক একটি মরা মুরগি ২৫ টাকা করে কেনে তারা। দাম কম হলে সেগুলি দশ থেকে ১৫ টাকায় বিক্রি হয়। এবিষয়ে উত্তর ২৪ পরগনার অতিরিক্ত জেলাশাসক রাহুল মজুমদার জানিয়েছেন, “বাদুড়িয়া-সহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মরা মুরগির নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলি পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট আসার পর সত্যটা জানা যাবে। এছাড়া এই ওষুধ প্রয়োগের বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.