টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: ভোট মরশুমে রাতারাতি তারকা বনে গিয়েছেন বাঁকুড়ার ইন্দপুরের ব্রাহ্মণডিহি গ্রাম পঞ্চায়েতের টাঙি গ্রামের বাসিন্দা আলপনা মোদক। গোবেচারা অনিল মোদকের স্ত্রী এই আলপনা। এলাকায় নিরীহ অতিরিক্ত ভালমানুষ হিসাবেই পরিচিতি রয়েছে এই মোদক পরিবারের। এক ছেলেকে নিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর সংসার এই দম্পতির। এতদিন যে পরিবারটির খবর কেউ রাখতেন না কেউই, ভোট সংরক্ষণের গেরোয় এই কেন্দ্রটির আসন ওবিসিদের জন্য সংরক্ষিত হওয়ায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছে এই মোদক পরিবারের এই গৃহিনীর কদর বেড়ে গিয়েছে রাতারাতি।
স্থানীয়রা বলছেন, কদর এমন যে রাজনৈতিক দলের অনুরোধে অতিষ্ঠ হয়ে গত কয়েকদিন ধরে নিজের দোকানপাট বন্ধ করে ঘরবন্দি হয়ে রয়েছে এই দম্পতি। কিন্তু কেন তাঁরা নিজেদের ঘরবন্দি করে রেখেছেন? এই প্রশ্নের উত্তরে আলপনাদেবী বলেন, ‘আমরা লেখাপড়া জানি না, অশিক্ষিত মানুষ। অথচ গত কয়েকদিন ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার আনাগোনা শুরু হয়ে গিয়েছে আমার বাড়িতে। কখনও শাসকদল তৃণমূল শিবিরের নেতা-নেত্রীরা তাঁদের দলের প্রার্থী করার জন্য প্রস্তাব নিয়ে বাড়িতে আসছেন কখনও আবার প্রার্থী করার প্রস্তাব নিয়ে আলপনাদেবীর কাছে আসছেন বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীরা।’ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের এহেন দাপাদাপিতে অতিষ্ঠ এই মোদক পরিবার। ভোট রাজনিতির আঙিনায় নিজেকে অনভিজ্ঞ ঠাওর করে প্রার্থী হওয়ার সমস্ত প্রস্তাব হেলায় উড়িয়ে দিয়েছেন এই গৃহিনী। তাঁর সাফ বক্তব্য, এতদিন তাঁদের মাথায় ছাদটুকুও ছিল না। অথচ কেউ কোনদিন ঘুরেও তাকায়নি তাঁদের দিকে। বাঁকুড়া থেকে ইন্দপুরের বাংলা হয়ে পুরুলিয়াগামী রাস্তার ধারে গুমটি ভাড়া নিয়ে ছোট্ট একটি পানের দোকান করে কোনক্রমে সংসারের নোঙর ঠেলছিলেন তাঁর স্বামী। একমাত্র ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে স্বামীর সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সংসার খরচ থেকে একটু একটু করে টাকা বাঁচিয়ে এক কামরার একটি পাকা বাড়ি বানিয়েছেন এই মহিলা। আলপনা দেবীর কথায়, স্বামী সন্তানের মুখে সময়ে দুমুঠো ভাত তুলে দিতে পারলেই চরম তৃপ্তি পান তিনি। তাঁর স্পষ্ট কথা, রাজনীতির আঙিনায় পা রাখতে চাইছেন না তিনি। আলপনা দেবীর এহেন সিদ্ধান্তে মাথায় হাত পড়ে গিয়েছে ওই এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের। সংরক্ষনের গেরোয় প্রার্থী খুজতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
যদিও এই সমস্যার কথা আগেই আঁচ করে এই টাঙি আসনটি সংরক্ষনের গেরো থেকে মুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছিলেন ইন্দপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহকারি সভাপতি সৌমিত্র পতি। তিনি বলছেন, এই ব্রাহ্মণডিহা গ্রাম পঞ্চায়েতে টাঙি সংসদের ভোটার লিস্টে ভোটার সংখ্যা ৫০০। একজন মাত্র ভোটার ওবিসির। তাঁর নাম আলপনা লোহার। আমি সংরক্ষনের তালিকা হাতে পাওয়ার পরেই বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ জানিয়েছিলাম জেলাশাসকের কাছে। কিন্তু লাভ কিছু হয়নি। নিজের সংসদে প্রার্থী না পেয়ে পাশের ব্রাহ্মণডিহা দক্ষিণ সংসদে প্রার্থী নির্বাচন করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। অন্তত এমনটাই দাবি প্রাক্তন এই টাঙি সংসদের বিদায়ী তৃণমূল সদস্য প্রবীর পাত্রর। তাঁর কথায়, যেখানে সাধারণ ভোটারের সংখ্যা অধিক একজন মাত্র ওবিসি ভোটার, তখন কীভাবে এই আসন ওবিসি সংরক্ষণের আওতায় আনা হল প্রশ্ন তুলছেন তিনি। সিপিএম নেতা কিঙ্কর প্রসাক বলছেন, ‘আলপনাদেবীকে বারবার প্রস্তাব দিয়েও সাড়া পাইনি আমরা।’ একই বক্তব্য বিজেপি। কিঙ্করবাবু বলছেন, ওই টাঙি সংসদে প্রার্থী না পেয়ে পাশের সংসদ থেকে উড়িয়ে আনা হবে প্রার্থী। তবে বিজেপি নেতারা বলছেন, ‘আমরা আলোচনা চালাচ্ছি ওই মোদক দম্পতির সঙ্গে। আমাদের ইচ্ছা, ওই টাঙি সংসদ থেকেই আলপনাদেবীকে প্রার্থী করব আমরা।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.