নব্যেন্দু হাজরা: আছে। কিন্তু নেই! ট্যাক্সির সামনে সাজানো থাকে সুন্দরভাবে। কিন্তু তা ডাউন হয় না। ফলে ওঠেও না মিটারের কাঁটা। শুধুই তকমা রাখার তাগিদেই তা সাজানো আছে। নাম যে ‘মিটার ট্যাক্সি’। এখন অবশ্য সে ট্যাক্সি বেশিরভাগই আর মিটারে চলে না। চলে যেমন খুশি ভাড়ায়। মানে, কলকাতায় কার্যত বন্ধই হতে চলেছে মিটার ট্যাক্সি! আগে ছিল মিটারে কাগজ না থাকার অজুহাত। তাতেই বিল না দেওয়ার হিড়িক। তারপর শুরু হল যাত্রী প্রত্যাখ্যানের রোগ। আর এখন অ্যাপ ক্যাবের যুগে একেবারে মিটার ট্যাক্সি বদলে ফেলছে নিজেরই স্বকীয়তা। চালকদের কথায়, মিটার নয়। এখন শুধুই ট্যাক্সি। মিটার ডাউন।
[ ভোট গণনার শুরুতেই উত্তপ্ত বাংলা ]
গাড়িতে মিটার থাকলেও ৭০ শতাংশ চালকই এখন আর মিটারে ট্যাক্সি চালাতে চাইছেন না। একথা মানছেন ট্যাক্সি সংগঠনের নেতারাও। তাঁদের দাবি, ভাড়া বহুদিন না বাড়াতেই এই ‘আবদার’ চালকদের। দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া। সময়ের হেরফেরে কখনও তা দ্বিগুণ হয়, কখনও তারও বেশি। যাত্রীরা কখনও কখনও বাধ্য হয়েই তাতে রাজি হন। যাত্রীদের অভিযোগ, এটা তো বেআইনি। নামে মিটার ট্যাক্সি। অথচ মিটারে তা চলে না। চলে ইচ্ছেমতো। যেমন খুশি ভাড়া হেঁকে। সরকারের বিষয়টি দেখা উচিত। পরিবহণ দপ্তরের কর্তাদের কথায়, এটা বেআইনি। মিটার ট্যাক্সি মিটারেই চলার কথা। কিন্তু কে চালাচ্ছে, কে চালাচ্ছে না, এটা তো বোঝা সম্ভব নয়। যাত্রীরা অভিযোগ করলে অবশ্যই দেখা হবে।
[ নিয়্ন্ত্রণ হারিয়ে চা বাগানের শ্রমিক আবাসনে ঢুকে পড়ল বাস, মৃত এক ]
যাত্রীদের দাবি, ট্যাক্সি চালকদের দৌরাত্ম্য মাঝে কমেছিল। অনেকটা বন্ধ হয়েছিল প্রত্যাখ্যানও। কিন্তু ইদানিং মিটার বন্ধ করে ট্যাক্সি চালানোটাই ট্রেন্ড হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর নিজেদের মধ্যে সিন্ডিকেট করে রাখছেন বিভিন্ন স্ট্যান্ডের চালকরা। একজন মিটারে না গেলে কেউ যেতে রাজি হচ্ছেন না। ফলে দিন হোক বা রাত, হলুদ হোক বা নীল-সাদা; মিটার ট্যাক্সি সম্পর্কে ধারণাই বদলে যাচ্ছে যাত্রীদের। প্রিপেড হলে কাউন্টারে ভাড়া দিয়ে ট্যাক্সিতে উঠছেন ঠিকই। কিন্তু বাকি সময় চালকদের এই মজির্র উপর নির্ভর করে থাকতে হচ্ছে। যাত্রীদের অভিযোগ, হাওড়া-শিয়ালদহে প্রিপেড ট্যাক্সির বুথ আছে। বাকি শহরে তো রানিং ট্যাক্সি বা স্ট্যান্ড থেকেই ধরতে হয়। তখন চালকরা যা খুশি তাই ভাড়া হাঁকেন। যত দিন যাচ্ছে চালকদের এই বেয়াদবি ততই বাড়ছে। অ্যাপ ক্যাবেও সারচার্জের নাম করে যেমন খুশি ভাড়া নেওয়ায় যাত্রীদের পকেট কাটা যাচ্ছে। তার উপর মিটার ট্যাক্সিচালকদের এই জুলুমবাজিতে বিরক্ত যাত্রীরা। সংগঠনের নেতারা সেকথা স্বীকারও করে নিচ্ছেন। এআইটিইউসি অনুমোদিত কলকাতা ট্যাক্সি অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক নওলকিশোর শ্রীবাস্তব বলেন, “মিটার ট্যাক্সি মিটারেই চলা উচিত। আসলে সরকার ভাড়া বৃদ্ধি না করার ফলে এটা করতে বাধ্য হচ্ছেন চালকরা। ছ’বছর ধরে ভাড়া বাড়েনি। সরকারকে আমরা বহুবার চিঠি দিয়েছি।’’