সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: বাজারে দেনা হয়েছে প্রায় বারো লাখ টাকা। তাই ‘অপহরণে’র গল্প ফেঁদে দক্ষিণ কলকাতার গেস্ট হাউস ভাড়া করে লুকিয়ে ছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরেই গত রবিবার পঞ্চসায়র থানা এলাকা থেকে পুলিশের জালে ধরা পড়ল পুরুলিয়ার বলরামপুরের সেই বিজেপি সমর্থক তথা বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা কার্তিক গড়াই।
মুখ পুড়ল গেরুয়া শিবিরের। ‘অপহরণে’র ধুয়ো তুলে যারা এনিয়ে রাজনীতি করতে নেমেছিল তাদের মুখ ভোঁতা হল পুলিশি তদন্তে। ধৃত বিজেপি সমর্থককে পাঁচদিনের পুলিশে হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে পুরুলিয়া আদালত। জেলার পুলিশ সুুপার আকাশ মাঘারিয়া বলেন, “এই ঘটনার কিনারা করতে আমরা একটা স্পেশাল টিম গড়েছিলাম। সেই টিমের তদন্তে এই অপহরণের বানানো গল্প ফাঁস হয়ে যায়।”
[ যোগীর সভায় গিয়ে নিখোঁজ বিজেপি কর্মী, তদন্তে পুলিশ]
কার্তিক একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের এজেন্ট ছিল। ফলে একাধিক সঞ্চয় প্রকল্পে আমানতকারীদের কাছ থেকে সে টাকা সংগ্রহ করত। কিন্তু সেই টাকা ব্যাঙ্কে জমা না দিয়ে তা প্রায় ছ’ শতাংশ হারে সুদে খাটাত বলে অভিযোগ। আমানতকারীরা সময়মতো ব্যাঙ্ক থেকে টাকা না পাওয়ায় তার এই কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসে। সেইসময় টাকা শোধ করতে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে নির্দিষ্ট তারিখ চেয়ে নেয়। কিন্তু টাকা যোগাড় করতে না পারাতেই ‘অপহরণে’র গল্প বানায় কার্তিক। তার বিরুদ্ধে পুরুলিয়ায় বলরামপুর থানায় এক ব্যক্তি প্রতারণার অভিযোগও দায়ের করেছিলেন।
চলতি মাসের পাঁচ তারিখ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথ যোগীর রাজনৈতিক সমাবেশ থেকে বাড়ি ফেরার পথে এই বিজেপি সমর্থক ‘অপহরণ’ করা হয় বলে বিজেপি ও তার পরিবার দাবি করে। স্ত্রী বন্দনা গড়াই বলরামপুর থানায় অভিযোগও করেন। সেদিন রাতে অযোধ্যা পাহাড়তলির বলরামপুরের ছোট উরমার তৃণমূলের পার্টি অফিসের পিছন থেকে চাবি-সহ কার্তিক গড়াইয়ের বাইক ও মোবাইলের ভাঙা অংশ মেলায় শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে বিজেপি। এদিকে কার্তিক ‘অপহরণে’র গল্প সাজাতে পুরুলিয়ার বলরামপুরের এক বিজেপি সমর্থককে ফোনে জানায়, “আমাকে দু’টি গাড়ি তাড়া করছে। আমি কোনওরকমে তৃণমূল পার্টি অফিসের পিছনে গা ঢাকা দিয়েছি। আমাকে বাঁচাও। পুলিশকে খবর দাও। সংগঠনকে জানাও।” তারপরই বিজেপি নেতা-কর্মীরা বলরামপুর থানায় জানান।
পুরুলিয়া জেলা পুলিশ জানিয়েছে, ওই গল্প ফেঁদে কার্তিক বলরামপুরের বরাভূম স্টেশন থেকে চক্রধরপুর-হাওড়া প্যাসেঞ্জার ট্রেন ধরে। তারপর পুরুলিয়া স্টেশনে নেমে নাইট সার্ভিস বাসে ওই রাতেই কলকাতায় চলে যায়। তার মোবাইল বন্ধ রেখে অন্য সিমে কথা বলত। সেই সিমের নম্বর পুলিশের কাছে চলে আসায় এই ঘটনার দ্রুত কিনারা করতে পারে পুলিশ। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের পশ্চিমাঞ্চল উন্নয়ন বিভাগের মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “বলরামপুর-সহ পুরুলিয়ায় বিজেপি যে ভাবে কাজ করছে তা সাধারণ মানুষজনের কাছে পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। এই ‘অপহরণে’র বানানো গল্প আবার প্রমাণ করে দিল তাদের সংস্কৃতি কেমন। তারা কিভাবে কাজ করে।” তবে এই বিষয়টি শাসক দল ও পুলিশের ‘গট আপ’ গেম বলে জানিয়েছে বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, “আমাদের ওই সমর্থককে যে ‘অপহরণ’ করা হয়েছিল তা শাসক দল ও পুলিশ জানত। এটা শাসক দল ও পুলিশের গট আপ গেম।”
ছবি: সুনীতা সিং
[অবৈধভাবে ডিপিএলের আবাসন বিক্রি, প্রতারিত বহু মানুষ]