শান্তনু কর, জলপাইগুড়ি: খদ্দেরের সঙ্গে দেড় লাখে রফা। মহিলাকে নিয়ে আসতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। সেখান থেকেই হাতবদল হবে। মিটিয়ে দেওয়া হবে টাকাও। পাচারকারীদের টোপ দিয়ে এভাবেই জালে তুলল পুলিশ। নারী পাচারকারীরা কীভাবে সক্রিয় তার সুলুকসন্ধানে আজকের এই প্রতিবেদন।
[পাচারের ছক বদল, অনলাইনে বিক্রি হাতির দাঁত-সাপের বিষ]
পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজও সেরে ফেলেছিল দুই কুখ্যাত নারী পাচারকারী। এক গৃহবধূকে নিয়ে এনজেপি স্টেশনে রওনা দিয়েছিল তারা। সেখানে নামার পর গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল মহিলাকে। এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু আচমকাই গাড়ি ঢুকে গেল কোতোয়ালি থানায়। আর তখনই হুঁশ ফিরল দুই ধুরন্ধর পাচারকারীর। পুলিশের জাল কেটে এযাত্রায় তারা আর বেরোতে পারেনি।
[কাঠ পাচারের নয়া কৌশল, জঙ্গলের কাঠ কেটে বাড়ি বানিয়ে নিলাম!]
ঘটনার সূত্রপাত চার মাস আগে। খরিদ্দার ভেবে ভুলবশত জলপাইগুড়ি মানিকগঞ্জ থানার এক পুলিশ অফিসারকে ফোন করে বসে শোভারুল ইসলাম (২৫) ও বাসিরুদ্দিন মিয়া (২৬) নামে মালদহের দুই নারী পাচারকারী। জিজ্ঞেস করা হয় “মাল লাগবে”? ইঙ্গিতটা বুঝতে ভুল হয়নি মালদহে কাজ করে আসা ওই পুলিশ অফিসারের। তারপরই শুরু হয় কথোপকথন এবং দুই পাচারকারীকে হাতেনাতে ধরার জাল বিছানো। ক্রেতা সেজেই গত কয়েকমাস ধরে কথা বলে গিয়েছেন ওই পুলিশ অফিসার।
[শিকেয় সরকারি সুবিধা, অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাতেও দেদার কালোবাজারি]
এদিকে বরাত পেয়ে ময়দানে নামে দুই পাচারকারী। ইংলিশবাজার থানার ৫২ বিঘা এলাকার এক বধূর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করে শোভারুল। বিয়ের টোপ দিয়ে এনজেপি হয়ে নেপালে যাওয়ার কথা বলে এনজেপি স্টেশনে পৌঁছয় তারা। আর সেখানেই ওই বধূ-সহ হাতেনাতে পাকড়াও করা হয় দুই সন্দেহভাজন পাচারকারীকে। আপাতত ওই বধূকে বাড়িতে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
[কেজি প্রতি ভরতুকি, সার কিনতে গিয়ে প্রতারণার ফাঁদে কৃষকরা]
পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত শোভারুলের বাড়ি বৈষ্ণবনগর। বাসিরুদ্দিনের বাড়ি কালিয়াচকের তিন নম্বর ব্লকে। পুলিশের দাবি, দুজনেই কুখ্যাত নারী পাচারকারী। এর আগেও মালদহের বেশ কয়েকজন মহিলাকে বিয়ের টোপ দিয়ে দিল্লিতে বিক্রি করে এসেছে দু’জনে। এদিনও ট্রেনে করে এনজেপিতে নিয়ে গিয়ে ওই বধূকে হস্তান্তর এবং সেখান থেকে নেপালে পাচারের কথা হয়। কিন্তু ক্রেতার বেশে যে পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকবে স্টেশনে বুঝতে পারেনি দুই ধুরন্ধর।
[সরকার পাঠাচ্ছে খাদ্যসামগ্রী, কোন চক্র উধাও করছে রেশনের চাল-গম?]
জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, ”একে বড় সাফল্য বলেই মনে করছি আমরা। কারণ বধূকে বিক্রির ছক সাজিয়ে ফেলেছিল দুই পাচারকারী। এভাবে না এগোলে হয়তো এদের নাগাল পাওয়া যেত না।” এবার ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে চক্রের সঙ্গে অন্য কেউ জড়িত থাকলে তাদের ধরতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.