Advertisement
Advertisement

Breaking News

মুনমুন সেন

‘মায়ের নাম তো আমারই করার কথা’, সমালোচনার জবাব দিলেন মুনমুন সেন

গৌতম ভট্টাচার্যের সঙ্গে খোলামেলা আড্ডায় তৃণমূলের তারকা প্রার্থী।

Moonmoon Sen exclusive interview in Sangbad Pratidin
Published by: Subhamay Mandal
  • Posted:April 25, 2019 10:06 am
  • Updated:April 25, 2019 10:06 am

গৌতম ভট্টাচার্য: দুর্গাপুর-আসানসোল সড়কের ধারে। আরও পরিষ্কার করতে গেলে এন এইচ টু-র একপ্রান্তে সাদাটে হোটেলটা। হোটেলের সিঁড়ি দিয়ে উঠে দোতালার প্রথম ঘরটা যে তাঁর জন্য নির্দিষ্ট, চারপাশের মেজাজ দেখলেই বোঝা যাচ্ছে। গোটাচারেক স্বাস্থ্যবান-সুদর্শন সিকিউরিটি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ফ্লোর জুড়ে। ওদের সম্পর্কে নিজেই বলছেন, “আর নট দে ভেরি হ্যান্ডসাম?” নিচে তাঁকে প্রচারে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ি দাঁড়ানো। স্থানীয় তৃণমূল নেতা-ইলেকশন এজেন্ট-এক ঝাঁক মিডিয়া সব ধৈর্যশীল অপেক্ষায়। আফটার অল আ স্টার! আফটার অল মুনমুন সেন!

প্র : মোটামুটি একটা ওপিনিয়ন সবাই শেয়ার করে যে আসানসোল খুব টাফ সিট। আপনারও কি মনে হচ্ছে?
মুনমুনু : আমাকে সবাই তাই বলছে যে টাফ সিট। কারণ বিজেপির স্ট্রং জায়গা। তবে আমাকে যে টিমটা ঘিরে রেখেছে তারা এখানে খুব জনপ্রিয়। যেমন জিতেন তেওয়ারি। দাশুবাবু। মলয় ঘটক। তাপসবাবু। আমি তো ওদের শুধু বলেছি আমাকে র‌্যালিগুলো অর্গানাইজ করে দিন আর মহিলাদের কাছে র‌্যালির খবর পৌঁছে দিন। বাকি দায়িত্ব আমার। বিজেপি আমার নামে কত কথা বলছে। শুনছি সাংঘাতিক সমালোচনা করছে। কিন্তু আমি কোনও কনফ্রনটেশনে যাইনি। আমি মন দিয়ে নিজের কাজ করে যাচ্ছি। তবে একটা জিনিস দেখে বেশ সারপ্রাইজডই লাগছে যে গোটা শহরে বিজেপির তিনটে পোস্টারও আমার চোখে পড়েছে কিনা সন্দেহ।

Advertisement

প্র : শোনা যাচ্ছে নির্বাচনী লড়াইতে দু’টো কুসংস্কার নিয়ে আপনি ঘুরছেন। একটা হচ্ছে আপনার স্টেজে আদিবাসী নৃত্য হওয়া চাই। আর ডান হাতে একটা নীল-সাদা তাগা আপনার পরা চাই।
মুনমুন : ইয়েস। বাঁকুড়ায় যাওয়ার সময় থেকে এই ট্রাইব্যাল ডান্স ব্যাপারটা আমায় অ্যাট্রাক্ট করেছে। আদিবাসী মেয়েরা আমায় শুধু ভোটই দেয়নি। আমাকে দারুণ আপন করে নিয়ে ছিল। তাই ওদের দেখলেই আমি মঞ্চে ডাকতে চাই।

Advertisement

প্র : কিন্তু হাতের নীল সাদা ব্যাণ্ডটা তো দেখছি না।
মুনমুন : ওটা আজকে খুলে রেখেছি। টাইট হয়ে গিয়ে ফুলে গেছিল।

প্র : ওটা কি গুড লাক চার্ম?
মুনমুন : ইয়েস কাইন্ড অফ।

প্র : আপনার নিশ্চয়ই অ্যাস্ট্রোলজিতে অগাধ বিশ্বাস? আসানসোলের রেজাল্ট কী হতে পারে নিয়ে জ্যোতিষীর কাছে অলরেডি গিয়েছেন?
মুনমুন : নট রিয়েলি। আমার জীবনে এক আধবার নিশ্চয়ই গেছিটেছি অনেক সময় জাস্ট ফর ফান। কিন্তু ওই ফিল্মের লোকেরা অনেকে যেমন হাত ভর্তি আংটিফাংটি পরে, আমি কোনওদিন করিনি। আই বিলিভ ইন ফেট। যা হওয়ার তাই হবে।

প্র : আপনার মা-ও সেরকম ছিলেন?
মুনমুন : একদম তাই। মা স্পিরিচুয়াল ছিল। পুজোটুজোতে খুব ভক্তি ছিল। কিন্তু মা সুপারস্টিশাস ছিল না।

প্র : নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছেন যে আপনার সভায় মহিলাদের খুব ভিড় হচ্ছে?
মুনমুন : ইয়েস। আমার মনে হয় দু’টো কারণে হচ্ছে। ওয়ান, আমি যে ওই মায়ের মেয়ে। টু, আমার নিজস্ব ইন্ডিপেন্ডেন্ট আয়েডেন্টিটির জন্য। মেয়েরা এখন বাইরে স্বাধীনভাবে কাজ করতে আসছে। তাদের কাছে আমি একটা মোটিভেশনাল এক্সাম্পলের মতো, যে বিয়ে করেছে, বাচ্চা আছে, স্বামী আছে, পরিবার আছে। তারপরেও সে কাজ করে যাচ্ছে।

প্র : এই যে পুরো পরিবার নিয়ে আপনি ক্যাম্পেন করছেন। রিয়া-রাইমা-আপনার স্বামী-আপনার জামাই শিবম। মেসেজটা কী?
মুনমুন : সে তো গতবারও ওরা আমার হয়ে ক্যাম্পেন করেছে। গতবার বরঞ্চ বাঁকুড়ায় আরও বেশি দিন রিয়া-রাইমা আমার সঙ্গে ছিল। এবার দু’দিনের বেশি পারছে না। মেসেজ আর নতুন কী!

প্র : এই যে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটা পরিবারের সবাই মিলে ভোটে ময়দানে বেরিয়ে পড়া তার মধ্যে কি চমক আছে?
মুনমুন : আই ডোন্ট থিঙ্ক সো। আমার মেয়েরা যদি আমায় সাপোর্ট না করে তো কে করবে? তাছাড়া সবাই তো করে। সঞ্জয় দত্ত করেছে ওর বোন নম্রতার জন্য। ধর্মেন্দ্র সেদিনও গিয়েছেন হেমা মালিনীর জন্য। রাজেশ খান্না তো এন্টায়ার ফ্যামিলি নিয়ে ক্যাম্পেনিংয়ে গেছিল।

প্র : বাইরে একটা বাঁদর দেখছিলাম। শুনছিলাম আপনার সুপারিশে দূর অণ্ডাল থেকে বাঁদরটাকে আনা হয়েছে। ওকে একদিন স্টেজে তুলেছিলেন। আবার নাকি তুলবেন?
মুনমুন : হু।

প্র : বৃন্দা কারাট স্টেজে আপনার বাঁদর তোলার তীব্র সমালোচনা করেছেন।
মুনমুন : বৃন্দা কারাটকে বলুন অন্ডালের হনুমান নিয়ে না ভেবে নিজের চরকায় তেল দিতে। নিজের পার্টি নিয়ে যেন উনি ভাবেন। শুধু উনি একা নন, উনি এবং ওঁর স্বামী। দু’জনে বসে যেন ভাবেন জ্যোতি বসুকে নাইনটি সিক্সে দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে না দেওয়ার মতো হিস্টোরিকাল ব্লান্ডারটা ওঁরা করেছিলেন কী করে। স্বামী-স্ত্রী মিলে একটা পার্টিকে মোটামুটি ডেস্ট্রয় করে দিয়েছেন। বৃন্দা কারাটের চেয়ে আমার রেকর্ড অনেক ভাল।

প্র : সাধারণভাবে স্টারেরা প্রশংসা পেতে এত অভ্যস্ত থাকেন যে সামান্যতম সমালোচনাতেই তাদের ব্লিডিং হতে থাকে। এই যে এত চারপাশে কথা শুনছেন যে আপনি যথেষ্ট সংখ্যক দিন বাঁকুড়া যাননি। বা এমপি ল্যাডের টাকা খরচ করেননি। এগুলো শুনলে কি প্রচণ্ড অস্বস্তি হয়?
মুনমুন : এতটুকু না। আমার প্রফেশন আমাকে অনেকরকম ক্রিটিসিজমে অভ্যস্ত করিয়ে দিয়েছে। এই যারা বলছে তাদের উত্তর দেওয়ার কোনও দায় আমার নেই। যাদের মনে হয় তাঁরা বাঁকুড়ার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গিয়ে আমার রেকর্ডটা চেক করে নিন না? অনেক জায়গায় তো বেরিওছে। আমি জাস্টিফাই করতে যাব কেন? রেকর্ডই কি শেষ কথা বলছে না?

প্র : বলছিলাম না স্টারেরা প্রশংসা পেতে এত অভ্যস্ত যে শুধু এটুকুই তাঁদের ধৈর্যচু্যতি ঘটাতে পারে। যা-ই করি না কেন, একদল বিরোধী আমার সমালোচনা করেই যাবে। এটা সামলানোর ট্রেনিং তো আমার নেই।
মুনমুন : কে বলল নেই? আমার তো মনে হয় ফিল্মজগৎ আর রাজনীতির দুনিয়ায় অনেক মিল আছে। কম সমালোচনা শুনেছি নিজের? অভিনয় করতে পারে না। বাংলা বলতে পারে না, অমুক না, তমুক না কত কিছু শুনেছি। কি পরিমাণ নেগেটিভিটি শুনেছি। রাবিশ। অ্যাবজলিউট রাবিশ। এখানে যেমন বলা হচ্ছে। কিন্তু আমি যদি এবার সবগুলোতেই মন দিতে যাই, তাহলে কাজ করব কখন? আমি নিজেকে জাস্টিফাই করতেই চাই না। আমার নিজের কাজটা বরং মন দিয়ে করি। একটা কথা মনে রাখবেন। আমার কাজটা কিন্তু সহজ নয়। একটা জায়গায় জিতে এসে আবার একটা অন্য সিট, যেটা আমাদের নয়, সেখানে এসে দাঁড়ানো, ফাইট করা। যারা এত কথা বলছে তাদের বলব আসুন, আমার জায়গায় দাঁড়িয়ে কাজটা করুন। তারপর আপনাকে সম্মান করব। মন দিয়ে আপনার কথা শুনব। তার আগে নয়।

প্র : এই যে একটা অভিযোগ উঠেছে যে মায়ের জন্মদিনে আপনি বলেছেন, তৃণমূলে ভোট দিলে সুচিত্রা সেনের আত্মা শান্তি পাবে, এটা ঠিক? না মিস কোট করা হচ্ছে?
মুনমুন : গৌতম এভাবে বললে ইন্টারভিউটাই বেকার হয়ে যাবে। অলরেডি তিনবার আপনি অভিযোগ-অভিযোগ বলে ফেললেন। ইউটিউবে আমার বক্তৃতাটা আছে। এটা আগে দেখুন। তারপর আমায় প্রশ্ন করুন। মনে রাখবেন নিচে কিন্তু অনেকে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।

প্র : কিন্তু আপনার সাইড অফ দ্য স্টোরিটা তো আমাদের জানা দরকার।
মুনমুন : বললাম তো আমি নিজেকে একেবারেই জাস্টিফাই করতে চাই না। দুটো কথা শুধু মাথায় রাখবেন। এক, অনেকে না জেনে, না দেখে স্রেফ হাওয়ায় সমালোচনা করছে। দুই, ইংরেজি শব্দ যদি ঠিকঠাক বাংলায় অনুবাদ না হয়, অদ্ভুত মানে দাঁড়াতে পারে।

প্র : বুঝলাম না।
মুনমুন : মায়ের জন্মদিনে আমি বাড়ি যেতে চেয়েছিলাম। দিনটা সবাই জানে ৬ এপ্রিল। তো অরূপ (বিশ্বাস) বলল, তুমি এখন যাবে না। কিছুতেই যাবে না। প্লিজ এখানে থাকো। বাধ্য হয়েই সেদিন প্রচারে গিয়েছিলাম। গিয়ে দেখি সবাই মায়ের জন্মদিন নিয়ে কথা বলছে। স্টেজে বড় কেক আনা হয়েছে। মায়ের জন্মদিনে কাটা হবে বলে। যেটা আদৌ আশ্চর্যের নয় কারণ ইন্ডিয়ার বাইরে নানান জায়গায় এবারও মায়ের বার্থ ডে সেলিব্রেটেড হয়েছে। নিউ ইয়র্কে হয়েছে, পুরো বাংলাদেশ জুড়ে হয়েছে। গোটা বাংলার মতো এই বেল্টে মায়ের কী ক্রেজ আমি জানি। যখন যাত্রা করতাম, সপ্তাহে তিনদিন ২২ হাজার লোক আমায় দেখতে আসত। কেউ কেউ বলত আঙুলটা ছুঁয়ে দেখবো, আপনি তো সুচিত্রা সেনের মেয়ে। সেদিন যখন সবাই মা-কে নিয়ে কথা বলছে তখন আমি বলি, আজ দেখো আমি বাড়ি যেতে পারিনি। তোমাদের কাছে আসবো বলে। তোমরা যদি সতি্য মাকে ভালবাসো, তাহলে আমাকে একটা ভোট দিও। মায়ের আত্মার শান্তি পাবে। এবার বলুন, এর মধে্য এত বিতর্কের কী আছে? আমি তো সুচিত্রা সেনের মেয়ে। তঁার একমাত্র সন্তান। সুচিত্রা সেনের নাম আমি ব্যবহার করব না তো কী বাইরের লোক করবে?

প্র : ২৩ মে ভোটের ফল বার হবে। কী হবে বলে মনে হচ্ছে?
মুনমুন : আমরা নিজেদের যা করার ছিল মোটামুটি করেছি। এবার দেখার যে কী হয়। আমি নিশ্চিত যে আমরা জিতব। শুধু একটা দুশ্চিন্তা যে সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট থেকে উলটোপালটা কোনও ব্যাঘাত ঘটাবে না তো? অবশ্য তাতেও মনে হয় আমি সিওর জিতছি। শুধু মার্জিনটা কী হয় ইন্টারেস্টিং হবে।

প্র : জিতছেন-কনফিডেন্সটা কোথা থেকে আসছে?
মুনমুন : আসছে মানুষের সঙ্গে কথা বলে। তাদের রিঅ্যাকশন দেখে।

প্র : আগেরবার দোলা সেন কেন হেরেছিলেন খোঁজ নিয়েছেন?
মুনমুন : কোনওরকম খোঁজ নিইনি। এটা জেনে আমি কী করব? এটা মমতার বিষয়। মমতা ঠিক জানেন কোথায় কী করতে হবে। এই একজনের ওপর আমার সুপ্রিম কনফিডেন্স।

প্র : চারধারে শোনা যাচ্ছে বাবুলের সঙ্গে আপনার দিল্লির ব্যক্তিগত সম্পর্ক বিশেষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ভোট লড়াইতে। সত্যি?
মুনমুন : আই ওয়াজ নেভার দ্যাট ক্লোজ টু হিম। এমন নয় যে আমরা একজন আরেকজনের বাড়িতে গেছিটেছি। আজ থেক বহু বহু বছর আগে মুম্বইয়ের শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে আসানসোলে আমি একটা শো করেছিলাম। এই বেল্টে আমি আসলে খুব পপুলার ছিলাম। সেই শো-টায় আসরানি ছিল। মুম্বইয়ের অনেকে ছিল। তখন বাবুল ছিল একজন জুনিয়র সিঙ্গার। ফাংশনে গেয়েছিল। সেদিন কেউ আমায় সেই পুরনো ছবিটা দেখাতে এনেছিল। আর একবার বোধহয় বছরখানেক আগে এয়ারপোর্টে ওর সঙ্গে দেখা। বাবুলের বাবাও ছিলেন। উনি এসে খুব ওয়ার্মলি কথাটথা বললেন। এমনিতে আমি বাবুলের নিন্দামন্দ করতে চাই না। কারও করি না। ওর করব কেন? ছেলেটা তো ভালই গায়। হি ইজ আ গুড সিঙ্গার। বাবুলের ‘খোয়া খোয়া চাঁদ’ গানটা তো আমার বেশ ফেভারিট। তবু একটা কথা না বললে নয়। যেটা অনেকের ভুল হচ্ছে।

প্র : কী ভুল?
মুনমুন : এই যে বলছে বা লিখছে, আসানসোল সিট এবারে স্টারদের লড়াই। স্টারেদের কোথায় হল? স্টার তো একটাই! আমি! বাবুল নামী প্লে ব্যাক সিঙ্গার। স্টার নয়।

প্র : কেন নামী প্লে ব্যাক সিঙ্গার কি স্টার হতে পারে না?
মুনমুন : পারে। মহম্মদ রফি স্টার ছিলেন। কিশোর কুমার স্টার ছিলেন। কুমার শানু স্টার ছিল। আর এই এখনকার ছেলেটা–অরিজিৎ সিং ইজ অ্যা স্টার। বাবুল যথেষ্ট পরিচিত নাম কিন্তু ও স্টার নয়। তাই ব্যাটল অফ স্টার্স লিখবেন না।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ