ব্রতীন দাস, শিলিগুড়ি: গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে রাজ্য ও কেন্দ্রের ওপর চাপ বাড়াতে মোর্চার লাগাতার বনধ। গুরুংয়ের দলের এই ধ্বংসাত্মক কর্মসূচিতে পাহাড়বাসী আরও খাদে পড়ল। মোর্চার জঙ্গিপনায় পাহাড়ের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি অর্থাৎ, চা শিল্পের আকাশে মেঘ জমেছে। চা বাগানে টানা ধর্মঘট ডেকেছে মোর্চা। পাতা তোলার মরসুমে মোর্চার এই সিদ্ধান্ত বাগান মালিকদের মাথায় হাত। বিরক্ত শ্রমিকরাও। টন টন চায়ের অর্ডার বাতিল হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আলাদা রাজ্যের নামে মোর্চার এই আন্দোলন কি সখাত সলিলে, প্রশ্ন ক্রমশ জোরদার হচ্ছে পাহাড়ে।
গোর্খাল্যান্ড নামের বাঘের পিঠে চেপে চাপটা ভালই টের পাচ্ছেন বিমল গুরুং। পাহাড়বাসীর মন পেতে মাঝেমধ্যেই গোর্খাল্যান্ডের জিগির তুলে কুর্সি টিকিয়ে রেখেছেন। আলাদা রাজ্য এনে দিতে পারলে সুবাস ঘিসিংয়ের মতো তাঁর হাল হবে একথা ভালমতো জানেন গুরুং। অস্বিত্বরক্ষায় ফের গোর্খাল্যান্ডের সওয়াল। দাবি আদায়ে সেই বনধের রাস্তা। চা বাগানকে বনধের বাইরে রাখা হলেও পাহাড়ের সোনার হাঁস কাটার সব ব্যবস্থা করে ফেলেছেন গুরুং। মোর্চা নেত্রী করুণা গুরুংয়ের মুক্তির দাবিতে শুক্রবার পাহাড়ের ৮৭টি চা বাগানে ধর্মঘট ডেকেছে মোর্চা। এই মুহূর্তে যা পরিস্থিতি তাতে ধর্মঘট কত দিন চলবে কেউ জানে না। গুরুংয়ের তুঘলকি ফর্মানে চা বাগানের মালিক ও শ্রমিকদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। কারণ গত কয়েক বছরে রাজনৈতিক পরিবেশ স্বাভাবিক থাকায় দার্জিলিংয়ের চা ফের বিশ্ব বাজারে জায়গা করে নেয়। জার্মানি, জাপান, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমনকী ফ্রান্স থেকে প্রচুর চায়ের অর্ডার আসে দার্জিলিংয়ে। পাহাড়ি জেলার মোট চায়ের ৬৫ শতাংশ চলে যায় বিদেশে। মোর্চার এই ঘোষণায় চিন্তিত দার্জিলিং টি অ্যাসোসিয়েশনের প্রিন্সিপাল অ্যাডভাইসার সন্দীপ মুখোপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, এবারও ভাল বরাত ছিল। পাহাড়ের খবর পেয়ে বাইরের ক্রেতারা এখন অর্ডার বাতিলের কথা বলছেন। এর ফলে চা শিল্পের বিরাট বড় ধাক্কা নেমে আসবে। ২ মাস বাদে পুজোর বোনাস কীভাবে শ্রমিকরা পাবেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
মোর্চার বনধের সময়টাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এপ্রিল-মে মাস সবথেকে উৎকৃষ্ট মানের পাতা তোলা হয়। যাকে স্থানীয়ভাবে ফার্স্ট ক্লাস বলা হয়। এই মুহূর্তে দার্জিলিংয়ে সেকেন্ড ক্লাস পাতার চা তোলা হচ্ছে। যা বেশ উন্নতমানের। গত কয়েক দিনে মোর্চার বনধের জেরে চা পাতা তোলার কাজ অনেক বাগানেই বন্ধ। এর ফলে রোজ গড়ে ১ থেকে ২ শতাংশ ফলন কমেছে। দার্জিলিংয়ের মকাইবাড়ির চায়ের খ্যাতি দুনিয়া জুড়ে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্রিটেনের রানির জন্য মকাইবাড়ির চা নিয়ে গিয়েছিলেন। এই চায়ের সঙ্গে যুক্ত লক্ষ্মী টি গ্রুপের চেয়ারম্যান দীপঙ্কর চট্টোপাধ্যায়ের কপালে চিন্তার ভাঁজ। তিনি বলেন, জার্মানি মুখ ঘোরাতে শুরু করেছে। দার্জিলিংয়ের এই পরিস্থিতির জন্য তারা নেপাল থেকে চা নিচ্ছে। এভাবে উৎপাদন কমতে থাকলে বিদেশে চা পাঠানোর পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এখন চা গাছের যা অবস্থা, তাতে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে পাতা তোলা না গেলে তা আর কাজে আসবে না। ওই পাতা ফেলে দিতে হবে। নতুন করে পাতা গজাতে আরও ১১-১২ দিন। বাগান মালিকদের আশঙ্কা ওই সময় পেরিয়ে গেলে চায়ের আর গুণমান থাকবে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.