নন্দন দত্ত, সিউড়ি: বউমার কাছে রয়েছে স্বামীর দেওয়া গয়না। আর সেটা খুলে নিতে গিয়েই বউমার কান কেটে নিল শাশুড়ি। অমানবিক এই ঘটনাটি ঘটেছে সিউড়ি থানার নিমপলাশি গ্রামে। ইতিমধ্যে পুলিশের দারস্থ হয়েছেন আক্রান্ত মহিলা। পুলিশ সিউড়ি সদর হাসপাতালে পাঠালে সেখানে দু’কানে সাতটি করে সেলাই পড়ে। গৃহবধূর অভিযোগ, শুধু কান কাটা নয়, তাঁকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছিল শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। গৃহবধূর বাবা মাহাতাবউদ্দিন সিউড়ি থানায় শাশুড়ি-ননদ ও ভাসুর-সহ তিনজনের নামে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। যদিও ঘটনার পর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকেরা পলাতক।
একে পারিবারিক অশান্তি, সঙ্গে পঞ্চায়েতে দায়ের করা অভিযোগ। এই দুটো ঘটনার জন্য গৃহবধূকে দায়ী করে গত দু’বছর ধরে অশান্তি চলছিল। রুকসানা বিবির সঙ্গে গণ্ডগোল লেগেই ছিল পরিবারের সদস্যদের। তারই জেরে রবিবার সকালে ওই বধূর কান থেকে তাঁর দুল নিতে যায় শাশুড়ি। দুল নেওয়ার নামে রুকসানার কেটে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ ওই বধূর বাপেরবাড়িরর সদস্যদের। জানা গিয়েছে, বছর চারেক আগে সিউড়ি থানার জুনুদপুরে রুকশানার সঙ্গে নিমপলাশি গ্রামের বাদশা খানের বিয়ে হয়। তাঁদের একটি বছর তিনেকের কন্যাসন্তান আছে। বিয়ের পর থেকে বাদশা ও রুকশানার মধ্যে পারিবারিক অশান্তি চরমে ওঠে। শ্বশুরবাড়ির লোকেরা সমস্যা সমাধানে আলুন্দা পঞ্চায়েতে বিচারসভা বসায়। বিচারের রায় অপছন্দ হওয়ায় সে রায় মানেনি বাদশার পরিবার। উলটে পঞ্চায়েতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায়, প্রধান, উপপ্রধান-সহ তিন পঞ্চায়েত সদস্যকে মারধর করে বলে অভিযোগ। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে বাদশাদের পরিবারের উপর মামলা দায়ের করা হয়। গত দু’বছর ধরে সেই মামলা তুলতে পঞ্চায়েতে আর্জি করার জন্য রুকসানার উপর চাপ দেয় তাঁর শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। সে নিয়েই অশান্তি চরমে ওঠে।
এদিকে ঝামেলার পর রুকসানার স্বামী বাদশা খান চালকের কাজ নিয়ে কুয়েতে চলে যান। কিন্তু রুকসানার অভিযোগ, স্বামী ওখান থেকে যেমন নির্দেশ দেন, শ্বশুরবাড়ির লোক তেমনই তা পালন করে। গৃহবধূর অভিযোগ, রবিবার সকালে তাঁর ননদ আফরোজা বিবি ও শাশুড়ি লুতফা বিবির সঙ্গে মামলা তোলাকে কেন্দ্র করে বিবাদ চরমে ওঠে। শ্বশুরবাড়ির লোকরা তাঁর উপর চড়াও হয়ে লাঠি দিয়ে মারধর করে। পরে তাঁকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারতে গেলে তিনি কোনওরকমে প্রাণ বাঁচিয়ে পালান। আক্রান্ত রুকসানার কাকা সমীর খান জানান, “বিয়ের পর থেকেই নানা কারণে ভাইঝির উপর অত্যাচার চালাত শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। রবিবার কান কেটে নিলে ছুটতে ছুটতে গ্রামের সদস্য মফিজুল ইসলামের ঘরে ঢুকে পড়েন। সেখান থেকে তাঁর পরিবারে খবর এলে মেয়েকে উদ্ধার করে সিউড়ি হাসপাতালে ভর্তি করেন তাঁরা।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.