নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরাক্কা: কত আর বয়স হবে। একুশ থেকে বাইশ। কুড়ি বছর ধরে নুরকে যে ভাবে এলাকা দেখেছে, এসটিএফের হানার পরে সবই যেন ভুল প্রমাণিত হয়ে গেল। কেউ বলছেন, এরকম হাসিখুশি, ধর্মপ্রাণ ছেলে এ কাজ করতে পারে কী করে বিশ্বাস করা যাচ্ছে না। নুরের বাবা তো সরাসরি বললেন, মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসানো হয়েছে।
সামশেরগঞ্জের অনুপ নগর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র। তার ঠিক পিছনেই কামাত জেলা পাড়ায় নুর আলম মোমিনের ঘর। ইটের গাঁথনি। টিনের ছাদ। নুর আলমরা দুই ভাই। তিন বোন। বড় নুর আলম। বাবা মনসুর আলি মোমিন। এমনিতে পাড়ায় নুর ফেরিওয়ালা নামেই পরিচিত। হিজাব, ধর্মীয় পুস্তক, নামাজের টুপি ও জায়নাবাজ (নমাজ পড়ার চাটাই) বা কাপড়ের ফেরি করে বেড়াত পাড়ায় পাড়ায়। চার বছর আগে বিয়েও করেছে। এক বছর আগে একটি শিশু কন্যাও হয়েছে। সব মিলিয়ে এমনি সাধারণ জীবনযাপন। কিন্তু সে যে আতঙ্কবাদী, তা মানতে পারছেন না প্রতিবেশীরা।
[বহুজাতিক সংস্থার পানীয় জলের বোতলে কলিফর্ম, নোটিস পাঠাচ্ছে পুরসভা]
তেমনি এজকন মনসুর আলি মোমিন জানালেন, নুর আলম মোমিন গ্রামে গ্রামে হিজাব, ধর্মীয় পুস্তক, টুপি ও চাটাই ফেরি করে বেড়ায়। কোনও আতঙ্কবাদী নয়। বাড়ির সামনে মুদির দোকানদার আসলাম আনসারি। তিনি জানালেন, ছোটবেলা থেকে নুর আলমকে দেখছি। খুবই ভাল ছেলে। হাসি খুশি। মিশুকে স্বভাবের। ধর্মপ্রাণ। অভাবের সংসারে ফেরি করে বেড়ায়। নুর আলম এমন কাজে যুক্ত বিশ্বাস করতে পারছেন না তাঁরা। নুর আলমের স্ত্রী সালেহা বিবি খবরটা জানার পর বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। কোনওমতেই তিনি মেনে নিতে পারছেন না তাঁর স্বামী নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। আর বাবা?
নিজের মুখেই বললেন পুরো ঘটনাটি। ‘গতকাল ভোর রাতে বাড়িতে পুলিশ আসে। নুরের খোঁজ করে। জানতে চাইলাম কোথা থেকে এসেছেন। তারা বলল, ফরাক্কা থানা থেকে এসেছি। নুরের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ আছে। জানতে চাইলাম কী অভিযোগ। বলল, শুক্রবার বেলা দশটায় সামশেরগঞ্জ থানায় গিয়ে জেনে নেবেন। নুর আলমকে ওরা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে চলে গেল।’ তিনি আরও বলেন, ‘সামশেরগঞ্জে অভিযোগ জানতে গেলাম পুলিশ বলল, কলকাতা থেকে পুলিশ এসে নুর আলমকে ধরে নিয়ে গিয়েছে। আমরা কিছু জানিনা।’ ছেলে কোনওমতেই আতঙ্কবাদী নয়, দাবি মনসুর আলি মোমিনের। তাঁর পাল্টা দাবি, নুর আলম মোমিনকে মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসান হল। কিন্তু এসটিএফের দাবি, হিজাব ফেরির আড়ালে এলাকায় জামাতুন মুজাহিদিন ইন্ডিয়ার হয়ে সংগঠনের দায়িত্বে নুর আলম মোমিন। নুরকে গ্রেপ্তার করে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে এসটিএফ জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে।
[প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্মার্টফোন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা মুর্শিদাবাদে]
নিও জামাত-উল-মুজাহিদিন (নিও জেএমবি) তথা জামাত-উল-মুজাহিদিন ইন্ডিয়া (জেএমআই)-এর নেতারা বুদ্ধগয়ায় বিস্ফোরণের ছক কষেছিল। এমনকী, দলাই লামাকেও খুনের ছক কষেছিল তারা। মুর্শিদাবাদ থেকে নিও জেএমবি-র চার জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করার পর কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের হাতে ধৃত আরও এক জঙ্গি এই নুর আলম। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে তাকে মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জ থানা এলাকার কামাত গ্রাম থেকে গ্র্রেপ্তার করা হয়। শুক্রবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হলে তাকে দশ দিনের পুলিশ হেফজাতে রাখার নির্দেশ দেয় আদালত। তাকে জেরা করে আরও বেশ কয়েকজন জঙ্গি সদস্যের নাম জেনেছেন গোয়েন্দারা। তাকে জেরা করে আদিল, জুনিয়র আবদুল করিম, উমর নামে আরও তিন জঙ্গির নাম উঠে এসেছে।
উল্লেখ্য, এর আগেই মহম্মদ পয়গম্বর, জামিরুল শেখ, শিস মহম্মদ, কালু শেখ ও আজাহার হোসেন রুবেলকে এসটিএফ গ্রেপ্তার করে। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, মুর্শিদাবাদের বেশ কিছু ব্যক্তি এই জঙ্গি সংগঠনকে টাকা জোগান দিচ্ছে। সেই টাকায় তৈরি হচ্ছে বিস্ফোরক। কারণ, এর আগেও মুর্শিদাবাদে জঙ্গিদের ডেরায় হানা দিয়ে প্রচুর অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। এই জিনিসগুলি কেনার জন্য টাকা জোগাড় করে নিও জেএমবি নেতা সালাউদ্দিন সালেহিন ও বোমারু মিজান ওরফে কওসর। এ ছাড়াও দক্ষিণ ভারতের কেরল, হায়দরাবাদ, চেন্নাইয়ের বেশ কিছু বাসিন্দাও তাদের আর্থিকভাবে সাহায্য করছে। এখনও বাংলাদেশ ও মধ্য প্রাচ্যের কয়েকটি জায়গা থেকে তাদের আসছে টাকা।