প্রতীকী ছবি।
অভিষেক চৌধুরী, কালনা: অভাব নিত্যদিনের সঙ্গী। ঘরে নুন পান্তে ফুরানোর দশা। স্ত্রী ও ছেলেদের নিয়ে কোনও মতে সংসার চলে। তবে সামনে পুজো। সন্তান ও পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে রোজগারের আশায় স্থানীয় মৃৎশিল্পীদের সহকারী হিসাবে গিয়েছিলেন ভিনরাজ্যে। আর দিন কুড়ির পরই ফিরে আসার কথা ছিল। তার পরই পুজোর কেনাকাটা করার কথা ছিল পরিবারের। তা আর হল কই! বাড়িতে ফিরল প্রৌঢ়ের কফিন বন্দি নিথর দেহ। শত আলোর মাঝে কালো মেঘ ঘনিয়েছে পরিবারে। শোকের ছায়া এলাকায়। সঙ্গে তাঁর মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন তুলছে পরিবার। দাবি কাগজপত্রে অনেক অসঙ্গতি রয়েছে।
মৃতের নাম আনন্দ দত্ত(৫০)। তিনি কালনা শহরের জাপটপাড়া এলাকার বাসিন্দা। মাস তিনেক আগে ভিনরাজ্য ছত্তিশগড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। কাজও করছিলেন। মঙ্গলবার পরিবারের কাছে খবর আসে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে তাঁর। তবে মৃত্যুর কারণ ও চিকিৎসার নথিপত্র নিয়ে তার পরিবারের লোকজনের মধ্যে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। দানা বেঁধেছে রহস্য। ইসিজি রিপোর্টে লেখা তারিখ ও সাল নিয়েও তৈরি হয়েছে সংশয়। শ্মশানঘাটে মৃতদেহ দাহ করতে নিয়ে যাওয়া হলেও মৃত্যুর শংসাপত্র না থাকায় তা আর হয়নি। শেষপর্যন্ত পুলিশের দ্বারস্থ হতেই সেই মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কালনা হাসপাতালের মর্গ থেকে বৃহস্পতিবার বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আনন্দবাবুর সংসারে অর্থনৈতিক টান ছিল। সেই অভাবের তাড়নাতেই পুজোর আগে তিনি এলাকার মৃৎশিল্পী সমীর পাল, সহকারী বিশ্বজিৎ পালের সঙ্গে সহকারী হিসাবে ছত্তিশগড়ে প্রতিমা তৈরির কাজে যান। গত মঙ্গলবার রাতে সঙ্গীদের ফোন মারফত হঠাৎ করে আনন্দবাবুর পরিবার জানতে পারেন যে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এর পরই তাঁর মৃত্যুসংবাদ আসে। বুধবার গভীর রাতে অ্যাম্বুল্যান্স করে কালনার বাড়িতে তাঁর দেহ আসে। কিন্তু ওই ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেট না থাকা ও বেশ কিছু নথিপত্র নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। মৃতের বড় ছেলে আনন্দ দত্ত বলেন, “ওখানকার হাসপাতালের কোনও কাগজপত্র পাইনি। একটি ইসিজি রিপোর্ট থাকলেও সেখানে ৪ নভেম্বর ২০১৬ সালের। তার উপর হাতে লেখা ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪। কাগজপত্র ঠিক নেই। কার কি রিপোর্ট আমার বাবার নামে করে দিয়েছে। এখানেই মৃত্যুর কারণ নিয়ে আমাদের সন্দেহ হচ্ছে। ডেথ সার্টিফিকেট ছাড়াও মৃতদেহ দাহ করা সম্ভব নয়। কালনা থানায় গিয়েছিলাম। কালনা থেকে ময়নাতদন্তের জন্য বর্ধমান হাসপাতালে পাঠানো হয়।”
যদিও আনন্দবাবুর শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়নি বলে মৃতের ছেলে যেমন জানিয়েছেন তেমনই তার বাবার মৃতদেহ খুব অযত্নে অ্যাম্বুল্যান্সে করে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। অন্যদিকে মৃৎশিল্পী সমীর পাল বলেন, “আমরা ওখানে দুর্গা, গণেশ, বিশ্বকর্মার মূর্তি তৈরির জন্য গিয়েছিলাম। পরশু রাতের দিকে আনন্দবাবুর বুকে ব্যাথা হচ্ছিল। ঘনঘন জল খাচ্ছিল। গ্যাসের ওষুধ খায়। খাওয়াদাওয়ার পর বমি করে। তার পর কাজ শুরু করলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে জানায়। ২০ দিন পরেই ওঁর বাড়ি চলে আসার কথা ছিল।” ওই রাজ্যে প্রতিমার দায়িত্বে থাকা মাধব বিশ্বাস জানান,”আনন্দবাবু অসুস্থ হওয়ার পর তাঁকে বেসরকারি বারুণী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসক চিকিৎসা করার সুযোগ পাননি। চিকিৎসক জানান, হৃদরোগে তাঁর মৃত্যু হয়।” তবে ইসিজি রিপোর্টে কিভাবে ২০১৬ সাল ও তারিখ প্রিন্ট হয়েছে সেই প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.