পলাশ পাত্র, তেহট্ট: হাতে বেশি সময় নেই। আষাঢ়েই বোনের বিয়ে। রবিবার সকালে তাই ফোনে দাদাকে বলেছিল হোয়াটসঅ্যাপে যেন বিয়ের কার্ডের একটা ছবি পাঠায়। ছুটির আবেদনের জন্য কাজে লাগবে। বাড়ির লোকের সঙ্গে সেটাই শেষ কথা। ছোট ভাইটার গলার আওয়াজ যে আর কোনও দিনও শুনতে পারবেন না তা ভাবলেই ডুকরে কেঁদে উঠছেন করিমপুরের অভয়পুরের পূর্বপাড়ার অনিমেষ কর্মকার। মা চন্দনাদেবী তো আছাড়িবিছাড়ি করে কেঁদে চলেছেন। থেকে থেকেই জ্ঞান হারাচ্ছেন। বাবা অসিত কর্মকারেরও চোখ-মুখ শোকজর্জর। থমথমে অভয়পুরের অপেক্ষা, তেরঙায় মুড়ে ওই বুঝি গাঁয়ে ঢুকল সেনা জওয়ান অরূপ কর্মকারের নিথরদেহ।
#WATCH: Wreath laying ceremony of 25 CRPF personnel who lost their lives in #Sukma Naxal attack in Raipur, Chhattis… https://t.co/Yo2etsyXMg
— ANI (@ANI_news) April 25, 2017
সোমবার রাত থেকেই কান্নার রোল এলাকাজুড়ে। পূর্বপাড়ায় কর্মকার বাড়িটা লোকে লোকারন্য। আত্মীয়রাও এসেছেন। গত ফ্রেব্রুয়ারিতে ভাগ্নির অন্নপ্রাশন উপলক্ষে বাড়িতে এসেছিলেন অরূপ। দিন পনেরোর ছুটি নিয়ে। আগামী ৫ আষাঢ় আবার মাসতুতো বোন প্রিয়ার বিয়ে। আসলে প্রিয়া অরূপের বড্ড স্নেহের। তাই এই বোনের বিয়ে সে মিস করতে চায়নি। চোখ মুছতে মুছতে বলছিলেন অনিমেষ। বলেন, গোটা সংসারটা ও চালাত। বাবার আলুর ব্যবসা বন্ধ। আমিও বেকার। কখন কার কী দরকার ও সব খোঁজ রাখত।
[পণ চেয়ে নির্যাতনের অভিযোগ, আত্মঘাতী সেনা মেজরের স্ত্রী]
অনিমেষ জানান, “সোমবার রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ সিআরপিএফ অফিস থেকে মায়ের ফোনে ওরা ফোন করে। হিন্দিতে কথা বলছিল। মা বুঝতে না পেরে আমাকে ফোনটা দেয়। প্রথমে আমি মাকে ভাইয়ের মৃত্যুর খবরটা দিইনি। সারা রাত বুকে পাথর রেখে কাটিয়েছি। কিন্তু সূর্য উঠতেই সেই খবর আর চেপে রাখা যায়নি। আশপাশের লোকের মুখ থেকে মা সব জানতে পারেন।”
২০১৪-য় চাকরি পান অরূপ। ২৫ বছরেই সংসারের হাল নিজের কাঁধে তুলে নেয়। বাবার আলুর ব্যবসা খারাপ হতে হতে এখন বন্ধ। এই বয়সেই ছেলেটা কত দায়িত্ব নিয়ে নিয়েছিল, বলছিলেন পাড়ার এক প্রবীণ। অমন মিশুকে, তরতাজা ছেলেটা যে এক তাড়াতাড়ি হারিয়ে যাবে তা এখনও বিশ্বাস করতে পারছেন না এলাকার মানুষ।
[ভগবান শ্রীকৃষ্ণও নগদহীন লেনদেনে বিশ্বাসী ছিলেন, মত আদিত্যনাথের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.