পলাশ পাত্র, তেহট্ট: দীর্ঘ প্রতিক্ষার অবসান ঘটিয়ে ইরাক থেকে তেহট্টর ইলশামারির বাড়িতে ফিরেছে খোকন শিকদারের দেহাবশেষ। চার বছর অপেক্ষার পর স্বামী ফিরেছেন। কিন্তু কফিনবন্দি হয়ে। শোকাহত স্ত্রী নমিতা শিকদারের কাছে এও যেন ছিল বড় পাওনা। তাই আর প্রিয় খোকনকে নিজের থেকে দূরে করতে রাজি হননি তিনি। তাই রীতি মেনে চিতায় সৎকার না করে বাড়ির প্রাঙ্গণেই সমাধিস্থ করা হল তাঁকে।
[স্কুলে নীল-সাদায় অনীহা, গেরুয়া বা লাল পছন্দের রং বহু প্রতিষ্ঠানের]
বাড়িতেই স্বামীর দেহ সমাধিস্থ করতে চান। নমিতা শিকদার পরিবারকে এমন প্রস্তাব দিলে সকলেই তাতে রাজি হয়ে যান। সেই মতোই দীর্ঘ যাত্রাপথ, দাবি-দাওয়ায় হওয়া বিক্ষোভ পেরিয়ে খোকন শিকদারের দেহ মঙ্গলবার দুপুরে সমাধি দেওয়া হয় বাড়ির প্রাঙ্গনেই। যেখানে ভিড় জমিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। সকাল থেকেই কাঁদতে কাঁদতে জ্ঞান হারনো নমিতা বিড়বিড় করছিলেন। বলে চলেন, “ওর তো এরকম কথা ছিল না। ও যে বলেছিল ফিরে আর ওখানে যাব না। কিন্তু এল না কেন? আমাকে ভাসিয়ে দিয়ে গেল।” দু’পাশ থেকে আত্মীয়-পরিজন মাথায় হাত বুলিয়ে সান্ত্বনা দিতে থাকেন। ছেলে মেয়েকে বড় করতে হবে। কিন্তু কে শোনে সে সব! জীবনের যত কান্না আছে আজ যেন সব উজার করে দিলেন! কুড়ি বছর আগে বিয়ে হওয়ার সময় এক বন্ধনে বাঁধা পড়েছিলেন। তাই নমিতাদেবীকে আটকানো গেল না কোনওভাবেই। নমিতা সিঁথির সিঁদুরে হাত দিয়ে বলেন, “ওগো এ সব নিয়ে চলে যাবে। আমি যে চার বছর ধরে বসে আছি তোমার প্রতিক্ষায়।” কিছুটা দম নিয়ে আট বছরের ছেলে অভ্র, মেয়েকে (প্রথম বর্ষের ছাত্রী) জড়িয়ে ফের বলতে থাকেন, “ওগো এদের কী হবে? তুমি আমাদের বাড়িতেই থাকবে। এখানেই রাখা হবে।”
[টাকা না পেয়ে প্রসূতিকে মারধর মাতৃযান চালকের, কোল থেকে ছিটকে পড়ল সদ্যোজাত]
২০১১ সালে রাজমিস্ত্রি হিসেবে খোকন ইরাকে কাজে গিয়েছিলেন। ২০১৪ সালে জুন মাসের পর থেকে চাতক পাখির মতো ছেলের অপেক্ষায় ছিলেন নব্বই বছরের খোকনের মা শোভাদেবী। এদিন সকাল থেকেই উঠোনে বসে কাঁদছিলেন। কোনও আর ফিরবে না ছেলে। ভগ্নিপতি সুভাষ বিশ্বাস বলেন, “ডিএনএ টেস্টের জন্য রক্ত নেওয়ার সময় আমরা ভেবেছিলাম জঙ্গিরা অত্যাচার করেছে তাতে হয়তো মাথায় সমস্যা হয়েছে। চেনার জন্য রক্ত নিয়ে গেল।” বন্ধুর মতো খোকনকে বাড়িতে রাখতে রাজি হয়ে যান তিনি। বলেন, “ভবিষ্যতে ওর সমাধির উপর মন্দির গড়া হবে।” ঘটনাস্থলে থাকা স্থানীয় বিধায়ক গৌরী দত্ত জানান, সুষ্ঠভাবেই সমাধি হয়েছে।
এদিকে একই হাল সমর টিকাদারের পরিবারের। মৃত সমরের স্ত্রী দীপালিও স্বামীকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তাঁকে হারিয়ে কীভাবে সংসার, সন্তান সামলাবেন, তা ভেবেই উঠতে পারছেন না তিনি।