Advertisement
Advertisement
Shaktigarh Murder case

গাড়ি কেনাবেচা হলেও বদলানো হচ্ছে না মালিকের নাম! অনায়াসেই লুকানো যাচ্ছে অপরাধ

গাড়ির নাম নিয়ে সমস্যার কারণেই শক্তিগড় হত্যাকাণ্ডের রহস্যভেদে কালঘাম ছুটছে পুলিশের।

Name of the owner is not being changed even if the car is bought and sold | Sangbad Pratidin
Published by: Tiyasha Sarkar
  • Posted:April 4, 2023 7:35 pm
  • Updated:April 4, 2023 7:35 pm

সৌরভ মাজি, বর্ধমান: গাড়ি কেনাবেচায় আইনি ফাঁক! নাম পরিবর্তন না করেই চলছে বেচাকেনা। আর সেই ফাঁক গলে গাড়ি নিয়ে অপরাধ সংঘটিত হলে কালঘাম ছুটছে পুলিশের। রাজ্যজুড়ে আলোড়ন ফেলা কয়লামাফিয়া রাজেশ ওরফে রাজু ঝা হত্যাকাণ্ডে আততায়ীদের ব্যবহৃত গাড়িটি উদ্ধার করলেও প্রকৃত মালিকের কাছে পৌঁছতে পদে পদে বাধার মুখে পড়ছে পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ। প্রকৃত মালিকের হদিশ পেলে আততায়ীদের চিহ্নিত করতে বেগ পেতে হত না।

গত শনিবার শক্তিগড়ে ১৯ নম্বর জাতীয় সড়কের ধারে একটি ল্যাংচার দোকানের সামনে গুলি করে খুন করা হয় রাজু ঝাকে। দুষ্কৃতীরা একটি নীল রঙের ‘ব্যালেনো’ গাড়ি করে এসেছিল। সেই গাড়িতে চেপেই কলকাতার দিকে পালাতে থাকে। সেই সময় ‘গুগল ম্যাপ’-এর সাহায্যে পুরনো জিটি রোডের রাস্তা ধরেছিল সেই গাড়ি। কিন্তু সেই রাস্তা যে শক্তিগড় থানায় গিয়ে শেষ হয়ে গিয়েছে জানতো না তারা। শক্তিগড় থানার সামনে থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে নেয়। কিছুটা এগিয়েই গাড়ি ছেড়ে চম্পট দেয় দুষ্কৃতীরা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: সড়কপথে বাধার আশঙ্কা করে লোকাল ট্রেনে রিষড়ায় লকেট, স্টেশনে নামতেই আটকাল পুলিশ]

এই গাড়ির নম্বরের সূত্র ধরে গাড়ি মালিকের হদিশ পেতে কালঘাম ছুটছে পুলিশের। রেজিস্ট্রেশন নম্বরের সূত্রে পরিবহণ দপ্তর জানাচ্ছে গাড়ির মালিক কলকাতার এক মহিলা। তিনি গাড়িটি কয়েকমাস আগে বিক্রি করেছেন একটি অনলাইন ও অফলাইনে গাড়ি ক্রয়-বিক্রয়ে যুক্ত একটি সংস্থাকে। কিন্তু নাম পরিবর্তন করা হয়নি। সেই গাড়িটিই আবার ওই সংস্থা বিক্রি করে একজনকে। কিন্তু নাম পরিবর্তন করা হয়। গাড়ি কিনতে যে নথি জমা দেওয়া হয়েছিল সেই সূত্রেও মালিকের হদিশ মিলছে না। আবার হদিশ মিললেও তিনি যে কাউকে সেই গাড়ি বিক্রি করেননি (নাম পরিবর্তন না করেই) বা সেই গাড়ি কেউ চুরি করে অপরাধমূলক কাজে ব্যবহার করেনি সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না তদন্তকারীরা।

Advertisement

এক আধিকারিক জানান, অনলাইনে বা অফলাইনে বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে গাড়ি বিক্রিতে বহু ক্ষেত্রেই নাম পরিবর্তন করানো হয় না বিভিন্ন কারণে। অনেক সময় গাড়ি কেনাবেচায় যুক্ত সংস্থা সাধারণত ‘মিডলম্যান’-এর কাজ করে। মালিকের কাছে নির্দিষ্ট অঙ্কে রফা করে। তার পর সেখান থেকে কিছু টাকা কেটে রেখে মালিকের প্রাপ্য দিয়ে গাড়ি নিয়ে নেয়। সেই গাড়ি বিক্রি করে নতুন মালিকের নামে রেজিস্ট্রেশনের সময় আগের মালিকের কেটে রাখা অর্থ দেওয়া হয়। কিন্তু সেটাই আথ হয় না। সংস্থার কাছ থেকে যিনি গাড়ি কেনেন অনেক সময় প্রকৃত দামের থেকে কিছু টাকা কম দিয়ে গাড়ি নিয়ে যান। নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন হলে বকেয়া টাকা মেটাবেন। কিন্তু সেই বকেয়া টাকা না মেটালে রেজিস্ট্রেশনও আর হয় না। ফলে গাড়িটি পুরনো মালিকের নামেই পরিবহণ দপ্তরে নথিভুক্ত থেকে যায়। সংস্থা কেনা বেচায় নিজেদের প্যাডে টাকার অঙ্কের রশিদ দেয়। এছাড়া যাকে বিক্রি করা‌ হয় তার কিছু নথি জমা নেয়। কিন্তু সেটা আসল না নকল তা যাচাইয়ের ব্যবস্থা নেই। আবাল অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থার কাছে গাড়ি কেনাবেচার তথ্যও থাকে না। তারা শুধুমাত্র মধ্যস্থতার ভূমিকা নেয়। ফলে সহজেই দুষ্কৃতীরা গাড়ি নিতে পারছে। রাজু ঝা হত্যাকাণ্ডে অন্তত তেমনটাই মনে করছে পুলিশ।

[আরও পড়ুন: বিধায়ক জুন মালিয়ার নামে কুৎসা! অটো ও টোটো ইউনিয়নের সভাপতির অশান্তি গড়াল থানায়]

সংস্থার মাধ্যমে গাড়ি কেনাবেচায় এই আইনি ফাঁক গলে অপরাধ সংগঠিত করার সুযোগ পাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। অপরাধীকে চিহ্নিত করতে কালঘাম ছুটছে। যদিও পরিবহণ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, গাড়ি কেনাবেচায় মধ্যস্থতার ভূমিকায় থাকা সংস্থাগুলির বিষয়ে বেশ কিছু নিয়ম লাগু করা হচ্ছে এই ধরনের প্রতিবন্ধকতা রুখতে। সংস্থাগুলিল লাইসেন্স নেওয়া, গাড়ি কেনাবেচায় নির্দিষ্ট লগবুক রাখা, মালিকের কাছ থেকে গাড়ি নিলে তা ঘেরা জায়গায় রাখা সহ বিভিন্ন বিধিনিষেধ ও নিয়ম চালু করা হয়েছে। রাজু ঝায়ের হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত গাড়ির সঠিক মালিকের সন্ধানে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। পুলিশ প্রকৃত মালিকের হদিশ পেতে মরিয়া। পুলিশ সুপার কামনাশিস সেন জানান, গাড়িটি কারা ব্যবহার করেছিল তাদের চিহ্নিত করার প্রচেষ্টা চলছে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ