সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ভোটের মুখে পুরুলিয়ার ঝাড়খণ্ড সীমান্তে মাওবাদী শিবিরের হদিশ পেল যৌথবাহিনী। কিন্তু আবারও ঝাড়খন্ডের যৌথ বাহিনীর হাত থেকে অল্পের জন্য ফসকে গেলেন আকাশ, মদন, শচীনরা। শুক্রবার ঝাড়খণ্ডের দলমা পাহাড় রেঞ্জ এলাকায় মাওবাদী শিবিরেরে হদিশ মেলে। ঘটনাস্থল পূর্ব সিংভূম জেলার বড়াম থানার কঙ্কাধসা গ্রাম লাগোয়া জঙ্গল। ঝাড়খণ্ড পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে ওই শিবির মাটিতে মিশিয়ে দেয়। মাওবাদীদের সঙ্গে চলে একপ্রস্থ গুলির লড়াইও। ওই শিবিরে ছিলেন সিপিআই(মাওবাদী)-র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সম্পাদক অসীম মণ্ডল ওরফে আকাশ, বাংলা-ঝাড়খণ্ড–ওড়িশা সীমান্ত আঞ্চলিক কমিটির সদস্য শচীন মাণ্ডি ওরফে রামপ্রসাদ মাণ্ডি ও মদন মাহাতো। এছাড়া ওই স্কোয়াডের আরও ১৫ জন সদস্য। তাঁরা কোনওক্রমে যৌথবাহিনীর হাত থেকে পালিয়ে বাঁচেন। এদিকে অভিযান চালিয়ে ওই শিবির থেকে উদ্ধার হয়েছে বেশ কিছু একনলা বন্দুক, রুকস্যাক, ডায়েরি, বাসনকোসন-সহ ওষুধপত্র।
ঝাড়খণ্ড পুলিশ সূত্রের খবর, মাওবাদীরা ওই এলাকায় অস্থায়ীভাবে শিবির করেছিল। আর এই বিষয়টিই ভাবিয়ে তুলেছে এ রাজ্যের গোয়েন্দাদের। কারণ জেলার জঙ্গলমহলের মধ্যে পড়ছে স্থানীয় বরাবাজার থানার লালডি থেকে বড়াম থানার কঙ্কাধসা এলাকা প্রায় পনেরো কিলোমিটার এলাকা। ফলে ভোটের আগে এরাজ্যে অশান্তি পাকাতেই কি বাংলা সীমান্তে মাওবাদীরা এই অস্থায়ী শিবির করেছে? উঠছে প্রশ্ন, ভাবাচ্ছে পুলিশকে। তাই পুরুলিয়ার ঝাড়খণ্ড সীমান্তে ব্যাপক তল্লাশি শুরু করেছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। ইতিমধ্যেই ঝাড়খণ্ড পুলিশের তরফে একটি দল পুরুলিয়া জেলা পুলিশ-সহ রাজ্যের মাও দমনে মোতায়েন থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনীর সঙ্গেও যোগাযোগ করেছে।
উল্লেখ্য, বাংলা সীমানায় মাওবাদীদের এই অস্থায়ী শিবিরের সম্পর্কে ঝাড়খণ্ড পুলিশের কাছে সুনির্দিষ্ট তথ্য ছিল। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই গত শুক্রবার অভিযান চালায় যৌথবাহিনী। এই প্রসঙ্গে ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার এসএসপি অনুপ বিরথোরে বলেন, “বাংলা সীমানায় আমরা একটি মাও শিবিরের হদিশ পেতেই গুড়িয়ে দিই। ওই শিবিরে আকাশ, শচীন, মদন ছিল। আকাশের ওই স্কোয়াডের সঙ্গে আমাদের বাহিনীর মুখোমুখি গুলির লড়াই হলেও তাদেরকে ধরা যায়নি। তারা কোনওক্রমে পালিয়ে যায়। তবে দলমা রেঞ্জের ওই এলাকা জুড়ে তল্লাশি অভিযান চলছে।” এদিকে পুরুলিয়ার ঝাড়খণ্ড লাগোয়া গ্রামগুলিতে তীর–ধনুক নিয়ে রাত পাহারাও চলছে। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস বলেন, “ঝাড়খণ্ড সীমান্তে আমাদের তল্লাশি চলছে। আমরা সতর্ক রয়েছি।” ফি-বছর নির্বাচনেই দেখা যায় সিপিআই(মাওবাদী)–রা ভোট বয়কটের ডাক দেয়। গত বিধানসভা নির্বাচনেও মাওবাদী নেতা আকাশ প্রেস বিবৃতি দিয়ে ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিলেন। তবে এখনও পর্যন্ত রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে মাওবাদীরা কোন বয়কটের ডাক দেয়নি বলে রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন।
ছবি : অমিত সিং দেও
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.