সুমিত বিশ্বাস, পুুরুলিয়া: সাড়ে তিন বছরে ও কিছুই বুঝল না। কিন্তু ওর মা সবই বুঝেছিল। ওই একরত্তি শিশুটির শরীরে সাতটা সুচ ঢুকিয়ে তিলে তিলে মারার ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে শামিল ছিল শিশুটির মা-ও, এমনই আশঙ্কা পুলিশের। শনিবার পুরুলিয়ার সুচকাণ্ডের নির্যাতিতা শিশুটির মা মঙ্গলা গোস্বামীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জেরায় নিজের দোষ কবুল করে সে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুরুলিয়ায় নিয়ে যায় পুলিশ। মঙ্গলার বক্তব্যে অসংগতি পাওয়া গিয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তদন্তে উঠে এসেছে, প্রথম পক্ষের স্ত্রীর মৃত্যুর এক বছর পার না হতেই বছর কুড়ির মঙ্গলাকে মন্দিরে নিয়ে লুকিয়ে বিয়ে করে ৬২ বছরের সনাতন। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর দোলের দিন বিয়ে করে তারা। কিন্তু বিয়ে করলেও মঙ্গলার সন্তানকে মেনে নিতে চায়নি সনাতন। তাই নতুন জীবন গড়ার লক্ষ্যে ‘পথের কাঁটা’ সরাতে নিজের মেয়েকে খুনের ষড়যন্ত্রে সম্মতি জানিয়েছিল মঙ্গলা। এমনই অনুমান করেছেন তদন্তকারীরা। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস জানিয়েছেন, “মঙ্গলাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জেলা পুলিশের একটি দল তাকে পুরুলিয়ায় নিয়ে আসছে। তার বক্তব্যে প্রচুর অসংগতি পাওয়া গিয়েছে।”
স্থানীয় সূত্রে খবর, সনাতন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশকর্মী। মঙ্গলার বাবা তার সহকর্মী ছিলেন। সেই সূত্রেই দু’জনের পরিচয়। এর পরই দু’জনের মধ্যে সম্পর্কও গড়ে ওঠে। গোঙা গ্রামের বাসিন্দা লক্ষ্মীকান্ত গোস্বামীর সঙ্গে মঙ্গলার বিয়ে ঠিক করে দেয় সনাতনই। ওই গ্রামেই সনাতনের মেয়ের শ্বশুরবাড়ি। সে সুবাদে প্রায়ই গোঙা গ্রামে গিয়ে মঙ্গলার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হত সনাতন। এ কথা জানাজানি হওয়ার পর স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের সঙ্গে বিবাদ বাধে মঙ্গলার। মার্চ মাসে সাড়ে তিন বছরের শিশুটিকে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি ছেড়ে নদিয়ারায় সনাতনের বাড়ি চলে যায় মঙ্গলা। এর পরই দোলের দিন দু’জনে লুকিয়ে বিয়ে করে। যদিও বিয়ের কথা পুলিশকে জানায়নি মঙ্গলা। হাসপাতালে থাকাকালীন পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে মঙ্গলা জানায়, সনাতন তাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু তার স্বামী ‘লক্ষ্মীকান্তর মেয়ে’—র দায়িত্ব নিতে চায়নি। পুলিশের ধারণা, বিয়ে করলেও মেয়েটিকে মেনে নিতে চায়নি সনাতন। সেই কারণেই শিশুটিকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে ফেলার চক্রান্ত করে। অন্য কোনওভাবে খুন করলে লোকে সন্দেহ করবে। তাই সুচ ঢুকিয়ে তিলে তিলে মারার ছক কষা হয়। পুলিশের ধারণা, মঙ্গলা সবই জানত। এবং মেয়েকে সরাতে সনাতনকে সাহায্য করেছে সে।
চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টায় শরীর থেকে সাতটি সুচ বের করলেও ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে শুক্রবার মৃত্যু হয় শিশুটির। যার অমানবিক অত্যাচারে শিশুটির মৃত্যু হয়েছে সেই সনাতন এখনও পলাতক। এই পাশবিক কাজের জন্য সনাতনের ফাঁসির দাবি জানিয়েছে তার নিজের ছেলেও। বিষ্ণপুর থানায় পুলিশকর্মী হিসাবে কর্মরত রয়েছেন তিনি। শুধু সনাতন নয়, শিশুটির মা মঙ্গলাকেও ফাঁসির সাজা দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। ক্ষুব্ধ জনতার দাবি, মঙ্গলা গ্রামে ঢুকলে তাকে প্রকাশ্যে ফাঁসি দিয়ে দেওয়া হবে। তদন্তে নেমে পুলিশের অনুমান, তন্ত্র সাধনা, কালাজাদু বা যৌন নির্যাতনের জন্য নয়। খুনের উদ্দেশ্যেই শিশুটির শরীরে একের পর এক সুচ ঢোকানো হয়েছিল। এবং এই কাজে শিশুটির মাও যুক্ত। শনিবার ময়নাতদন্তের পর শিশুটির দেহ চাইল্ড লাইনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এদিনই তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.