রাজা দাস, বালুরঘাট: ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর খবরের জের। প্রতিবন্ধী রাজুর ঘটনার পুনরাবৃত্তি হল বালুরঘাটে। এবার একটি দুঃস্থ নাবালিকার জন্য মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে চিকিৎসার তৎপরতা দেখাল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর।
[অসুস্থ নাতনিকে বাঁচাতে দরজায় দরজায় সাহায্যের আরজি দিদিমার]
বুধবার ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ প্রকাশিত হয় যে, বালুরঘাট ব্লকের শিবরামপুর এলাকায় মা-হারা নাবালিকা অসুস্থ নাতনিকে নিয়ে দোরে দোরে সাহায্যের আরজি জানাচ্ছেন বৃদ্ধা দিদিমা। এই খবর দেখার পরই বিলাসী বর্মন নামে বছর ১৫-র মেয়েটির বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু করে জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। এর আগে বালুরঘাট বদলপুরের প্রতিবন্ধী রাজু ও তার বোন মামণির চিকিৎসারও ব্যবস্থা করেছিল জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর।
দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মূখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুকুমার দে বলেন, “বালুরঘাট ব্লকের শিবরামপুর এলাকার বিলাসী বর্মন নামে এক কিশোরী ধীরে ধীরে পঙ্গু হয়ে পড়ছে বলে খবর পেয়েছি। পয়সার অভাবে মেয়েটির চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যাবে এটা হতে পারে না। জেলা স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফ থেকে সবরকম সহায়তা দেওয়া হবে।” বিলাসীর বিষয়টি জানা মাত্র তিনি ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকে গ্রামে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মেয়েটিকে জেলা হাসপাতালের সুপার স্পেশালিটিতে নিয়ে আসা হবে। সেখানে তিনজন চিকিৎসককে নিয়ে একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। সবরকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বিলাসীর চিকিৎসা শুরু করা হবে।
প্রসঙ্গত, বালুরঘাট ব্লকের শিবরামপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে এলাকায় বাসিন্দা দিনমজুর বিনয় বর্মনের মেয়ে বিলাসী বর্মন। সে খাদিমপুর মহিলা উচ্চবিদ্যালয়ে ক্লাস নাইনের ছাত্রী। মাসকয়েক আগেও সাইকেল চেপে সহপাঠীদের সঙ্গে স্কুলে যেত। কিছুদিন আগে বিলাসীর মা সকালী বর্মনের মৃত্যু হয় ক্যানসারে। বাবা বিনয় বর্মন হয়ে যান বিবাগী। ছোট বোন আগে থেকেই দিদিমার কাছে থাকে। এবার বিলাসীকে গোপীনগরে নিজের কাছে নিয়ে আসেন দিদিমা সান্ত্বনা বর্মন। এরপর হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয় বিলাসি। ক্রমশ ফুলতে শুরু করে দেহের বিভিন্ন গাঁট। সঙ্গে অসহ্য যন্ত্রণা। দিন দিন শুকিয়ে যেতে থাকে সে।
[অচেনা ব্যক্তিকে পুলিশ ভেবে ব্যবসায়ীর ধাক্কা, খালে পড়ে মৃত্যু যুবকের]
প্রথমে বালুরঘাট হাসপাতাল, পরে একাধিকবার প্রাইভেট চেম্বারে দেখিয়েও কোনও লাভ হয়নি। চিকিৎসকরা তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে নিয়ে যেতে বলেন। কী রোগ তার হয়েছে সেই সম্বন্ধে কোনও ধারণা দিতে পারেননি চিকিৎসকরা। মেয়েটির চিকিৎসায় দিদিমা সান্ত্বনা বর্মন শেষ সম্বলও বিক্রি করেছেন। এখন গ্রামের হাতুড়ে চিকিৎসকের ব্যথা কমানোর ওষুধই ভরসা। এখন লাঠির সাহায্যে অসুস্থ শরীরটাকে টেনে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় নিয়ে যেতে হয় মেয়েটিকে। বিলাসীর এই অবস্থার বিষয়টি বুধবার প্রকাশিত হয় ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ। এরপরেই নড়েচড়ে বসে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর। দায়িত্ব নেওয়া হয় সবরকম চিকিৎসার।