নিজস্ব সংবাদদাতা, হুগলি: জয় শ্রীরাম ও কাটমানি। রাজনীতির এই দুই লব্জ নিয়ে অধুনা রাজ্য উত্তাল। এ বার তা ঝড় তুলল স্কুলের পরীক্ষার প্রশ্নপত্রেও।
ঘটনাস্থল হুগলির মগরা। সেখানকার আকনা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির সেকেন্ড সামেটিভের বাংলা পরীক্ষায় ‘জয় শ্রীরাম’ ও ‘কাটমানি’ সংক্রান্ত প্রশ্নের উপস্থিতি তুমুল চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে। গত সোমবার পরীক্ষার শেষ লগ্নে ব্যাপারটা ফাঁস হতে স্কুলে আলোড়ন পড়ে যায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি প্রশ্নগুলি বাতিল করে পরীক্ষার্থীদের জানিয়ে দেন, তার কোনও গুরুত্ব নেই। কেউ উত্তর লিখে থাকলেও মূল্যায়ন হবে না। এমনকী, এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবারই স্কুল কর্তৃপক্ষ রীতিমতো বৈঠকে বসে আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেন। বিতর্কিত প্রশ্ন দেওয়ার জন্য প্রশ্নকর্তা শিক্ষকও লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অর্থাৎ জলঘোলা হয়েছে বিস্তর। কিন্তু প্রশ্ন ঠিক কী ছিল?
স্কুল সূত্রের খবর, ক্লাস টেনের বাংলা সেকেন্ড সামেটিভের শেষ প্রশ্নে পড়ুয়াদের বলা হয়েছিল সমাজজীবনে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনির বিরূপ প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সংবাদপত্রের প্রতিবেদন রচনা করতে। বিকল্প আর একটি প্রতিবেদনের জন্যও বিষয় ছিল সম্পূর্ণ রাজনৈতিক– ‘দুর্নীতি দমনে কাটমানি বন্ধ ও ফেরতের সিদ্ধান্ত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের একটি সাহসী পদক্ষেপ।’ দেড়শো শব্দের মধ্যে যে কোনও একটি লিখতে হবে, মূল্যমান ৫।
পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই খবরটা ছড়িয়ে পড়ে। স্কুলে তো বটেই, তামাম তল্লাটে শোরগোল পড়ে যায়। স্কুলের পরীক্ষায় এ হেন স্পর্শকাতর বিষয়ের অবতারণা কেন করা হল, সেই প্রশ্নে সোচ্চার হন স্থানীয় বাসিন্দারা। শেষমেশ প্রশ্ন বাতিল করা হলেও আদৌ তা দেওয়া হল কেন? স্কুলের প্রধান শিক্ষক রোহিতকুমার পাইনের ব্যাখ্যা, প্যাকেটবন্দি কোয়েশ্চেন পেপার প্রেস থেকে আনার পর সরাসরি পরীক্ষার্থীদের হাতে দেওয়া হয়। মাঝখানে যাচাইয়ের সুযোগ নেই। এরই ফাঁক গলে অবাঞ্ছিত ঘটনাটি ঘটে গিয়েছে। তাঁর কথায়, “আমরা এর নিন্দা করছি। সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে ডেকে এটা বলে দেওয়া হয়েছে। উনি লিখিতভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করে জানিয়েছেন, এটা অনিচ্ছাকৃত। কাউকে আঘাত করতে বা রাজনৈতিক অভিসন্ধি নিয়ে তিনি এই প্রশ্ন করেননি।”
জয় শ্রীরাম ও কাটমানি সাম্প্রতিককালে বিশেষভাবে আলোচিত দু’টি শব্দ হওয়ার সুবাদেই তা নিয়ে প্রতিবেদন লিখতে দেওয়া হয়েছিল বলে ওই শিক্ষক দাবি করেছেন। যদিও এলাকাবাসী এর মধ্যে অন্য গন্ধ পাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, এই দু’টি প্রশ্নের পিছনে অভিসন্ধি ছিল। কোন ছাত্র কী ভাবে উত্তর লেখে, তা দেখে সেই পড়ুয়ার রাজনৈতিক মানসিকতা যাচাই করতে চাওয়া হয়েছিল। আকনা গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান নির্মল ঘোষের প্রতিক্রিয়া, “নিন্দার ভাষা নেই। কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক। এর ক্ষমা হয় না।” উপপ্রধানের দাবি, ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক যাতে ভবিষ্যতে অন্যরা সাবধান থাকেন।
পুরো কাণ্ডের দায় তৃণমূলের উপর চাপিয়ে নিন্দা করেছে বিজেপিও। দলের হুগলি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সুবীর নাগের বক্তব্য, “ভারতীয় জনতা পার্টিকে সাম্প্রদায়িক দল বলা হত। অথচ আজকে আমরা দেখছি, স্কুলের বাচ্চাদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করছে এই দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারই। স্কুলেও শাসকদলের কিছু সমর্থক শিক্ষক আছেন যাঁরা এই ধরনের প্রশ্নপত্র করছেন। মনে হয়, তাঁদের মতিভ্রম হয়েছে।”