Advertisement
Advertisement
Ghatal

ভাগ্যের নিষ্ঠুর পরিহাস! ছিলেন কোটিপতি, এখন বৃদ্ধাশ্রমে ঠাঁই কপর্দকহীন বৃদ্ধ দম্পতির

একমাত্র মেয়ে-জামাইয়ের জন্য সমস্ত সম্পত্তি বিক্রি করেছিলেন তাঁরা।

Old millionaire couple in Ghatal now residing at old age home without wealth | Sangbad Pratidin
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:May 21, 2023 9:27 pm
  • Updated:May 21, 2023 9:28 pm

শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: স্নেহ অতি বিষম বস্তু। আর এই স্নেহ দেখাতে গিয়েই কাল হল ঘাটালের (Ghatal) কোটিপতি দম্পতির। হাওড়ার বাসিন্দা পরেশ বসু ও মিতা বসুর রামরাজাতলায় পেল্লাই দোতলা বাড়ি ছিল। ছিল দামি গাড়ি, সোনাদানা সবই। প্রায় কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক ছিল বসু দম্পতি। ভাগ্যের ফেরে সেই বসু দম্পতিরই ঠাঁই হয়েছে সরকার অনুমোদিত এক বৃদ্ধাশ্রমে (Old age Home)।

পরেশ বসু ছিলেন একটি প্রাইভেট কোম্পানির পদস্থ কর্মচারী। জমানো টাকা দিয়ে দিব্যি স্বচ্ছন্দ্যেই চলে যেত দু’জনের সংসার। কিন্তু কাল হল মেয়ে-জামাইকে নিয়ে। বসু দম্পতির মেয়ে-জামাই ছিলেন ঘাটাল শহরে বাসিন্দা জলি ঘোষ ও দেবাশিস ঘোষ। ঘাটাল শহরের আড়গোড়ার বাসিন্দা দেবাশিসবাবু ছিলেন একটি অনলাইন কোম্পানির ব্যবসায়িক সঙ্গী। কোভিডের (COVID-19) সময় প্রচুর টাকা দেনা হয় তাঁর। একসময় সেই কোম্পানিই উঠে গেলে মাথায় হাত পড়ে যায় দেবাশিসবাবুর। প্রচুর টাকা দেনা হয়ে যাওয়ার ফলে হতাশ হয়ে পড়েন দেবাশিসবাবু ও তাঁর স্ত্রী জলিদেবী। মেয়ে-জামাইয়ের দূরবস্থা দেখে এগিয়ে আসেন পরেশবাবু ও মিতাদেবী। পরেশবাবু বলেন, ‘‘মেয়ে-জামাইয়ের দুরবস্থার কথা ভেবে আমাদের দোতলা বাড়ি, সোনাদানা, গাড়ি সবই বিক্রি করে প্রায় কোটি টাকা তুলে দিই তাঁদের হাতে। কেননা ওঁরাই তো আমাদের শেষ সম্বল। আমাদের অবর্তমানে ওঁদেরই তো সব হবে‌। তাই তাঁদের কথা ভেবেই আমরা সব বেচে ওঁদের হাতে তুলে দিয়েছিলাম।’’

Advertisement

[আরও পড়ুন: গেছো মেয়ে! জামরুল পাড়তে গিয়ে দিব্যি রেলিংয়ে উঠে পড়লেন মিমি চক্রবর্তী]

তারপর পরেশবাবু ও মিতাদেবী দু’জনেই চলে আসেন ঘাটালে, মেয়ে-জামাইয়ের কাছে। দেবাশিসবাবু ছিলেন একটি বহুতল বাড়ির ভাড়াটে। তাঁরই একটি ঘরে পরেশবাবু ও মিতাদেবী থাকতে শুরু করেন। এরপরও দিব্যি চলছিল তাঁদের। কোনও সমস‌্যাই ছিল না। ভাবতেন, এভাবেই তাঁদের বাকি জীবনটা কেটে যাবে মেয়ে-জামাইয়ের কাছে। কিন্তু কোটি টাকা পেয়েও ব‌্যবসায় ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি দেবাশিসবাবু। অনেক চেষ্টা করেও তিনি ব‌্যবসায় সাফল্যের মুখ দেখতে পারেননি।

Advertisement

ইতিমধ্যে দেবাশিসবাবুর দুই মেয়ের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। দুজনেই কলকাতার বাসিন্দা। নিজের একটি পোষ‌্য কুকুর আর শ্বশুর-শাশুড়ি ও স্ত্রীকে নিয়ে সংসার টানতে হিমশিম খেতেন দেবাশিসবাবু। সঙ্গে স্ত্রী জলিদেবীও তাঁকে সাহায‌্য করে এগিয়ে যান। শেষমেশ দেনার পরিমাণ ৫০ লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে যায়। মহাজনদের চাপ সহ‌্য করতে না পেরে গত ১৩ এপ্রিল রাতে দেবাশিসবাবু ও জলিদেবী দু’জনে একসঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত‌্যা (Suicide) করেন। মৃত্যুর আগে তাঁরা সুইসাইড নোটও লিখে যান তাঁরা।

[আরও পড়ুন: ‘বাঁশ-কঞ্চি নিয়ে দৌড় করান’, বসিরহাটের জনসভা থেকে বিজেপিকে হুঁশিয়ারি নুসরতের]

পরদিন ১৪ এপ্রিল তাঁদের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় কেঁপে যায় গোটা ঘাটাল। অসহায় হয়ে পড়েন ৭৫ ছুই ছুই পরেশবাবু ও তাঁর স্ত্রী মিতাদেবী। কপর্দক শূন‌্য পরেশবাবুর চলবে কী করে? বাড়ি ভাড়া দেবেন কীভাবে? কোথায় থাকবেন কী করবেন কিছুরই কুল-কিনারা না পেয়ে অবশেষে ঘাটালের মহকুমা শাসকের দ্বারস্থ হন দুই বৃদ্ধ দম্পতি। কেঁদে আকুল পরেশবাবু ও মিতাদেবী। মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাসের উদ্যোগে বসু দম্পতির ঠাঁই হয় দাসপুরের নিম্বার্ক মঠ বৃদ্ধাশ্রমে। বৃদ্ধাশ্রমে বসে চোখের জল ফেলতে ফেলতে পরেশবাবু ও মিতদেবী বললেন, ‘‘স্নেহ অতি বিষম বস্তু।মেয়ে জামাইয়ের প্রতি অতি স্নেহ দেখাতে গিয়ে আজ আমাদের ঠাঁই হয়েছে এই বৃদ্ধাশ্রমে। এটাই আমাদের কপালে ছিল।’’

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ