দয়াময় মুখোপাধ্যায়, খাতড়া: গান্ধীগিরির অভিনব উদাহরণ রাখল বাঁকুড়ার হীড়বাঁধ-খাতড়া লাগোয়া কুচিয়াড়া। ছবি এঁকে নির্মীয়মাণ মদের দোকান বন্ধের প্রতিবাদ জানাল এলাকার খুদে শিল্পীরা। সোমবার বড়দিনের সকালে অনেকেই যখন শীতকালীন ভ্রমণ কিংবা বনভোজনে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময় খোলা আকাশের নিচে ফাঁকা মাঠে শীতের রোদ গায়ে মেখে ছবি এঁকে প্রতিবাদ জানাল খাতড়া-হীড়বাঁধ এলাকার কুচিয়াড়া, সান্ডি, ভোজদা-সহ বিভিন্ন গ্রামের খুদে শিল্পীরা। ওই খুদেরা অভিভাবকদের সুরেই অভিযোগ, এখানে মদের দোকান খোলা হলে এলাকার পরিবেশের সমূহ ক্ষতি হবে। তাছাড়া, আগামিদিনে অনেকেই বড় হয়ে নেশার শিকার হয়ে পড়বে। এদিন এখানে ছবি এঁকে প্রতিবাদ জানানো এক খুদে শিল্পী বলে, “আমাদের এখানে মদের দোকান খোলা হলে জায়গাটা নোংরা হয়ে যাবে। তাই যাতে এখানে মদের দোকান না খোলা হয় তাই আমরা ছবি এঁকে সেই দাবি জানাতে চাইছি।”
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার থেকে কুচিয়াড়া মোড়ে মদের দোকান খুলতে না দেওয়ার দাবিতে একটানা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন এলাকার মানুষজন। প্রতিদিনই চলছে নির্মিয়মান ঘরটির সামনে বিক্ষোভ। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কুচিয়াড়া মোড়ের কাছে খাতড়া থেকে সুপুর হয়ে হীড়বাঁধ এবং সিমলাবাঁধ যাবার রাস্তার বাঁ-পাশে একটি ঘরে মদের দোকান খোলার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন এলাকার বহু মানুষ। এর আগেও মদের দোকান বন্ধের দাবিতে একাধিকবার পথে নেমেছেন তাঁরা। কখনও প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে মিছিল, কখনও পথ অবরধেও সামিল হয়েছেন এলাকার মানুষজন। এবার এলাকার শিশু শিল্পীদের দিয়ে ছবি আঁকানোর মধ্য দিয়ে অহিংস প্রতিবাদ জানালেন তাঁরা।
তবে এদিন ছবি আঁকার পাশাপাশি প্রায় এক হাজার মহিলা ও এলাকার মানুষজন এই ঘরটির সামনে জড়ো হয়ে ফের বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। এছাড়া তাঁরা প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন নিয়ে একটি মিছিলও করেন। এদিন বিক্ষোভে সামিল হওয়া স্থানীয় বাসিন্দা কল্পনা রায়, বাসন্তী রায়রা বলেন, “এখানে আমরা কোনও মতেই মদের দোকান হতে দেব না। আমরা আগামিদিনেও আন্দোলন চালিয়ে যাব।” যদিও প্রশাসন নিজেদের জায়গাতেই অনড় থেকেছে। কারণ, প্রশাসন স্পষ্ট পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত মদের দোকান তৈরির ক্ষেত্রে বাধা দেওয়া যায় না। তাছাড়া, এই দোকানটির ক্ষেত্রেও সব রকম নিয়ম মানা হচ্ছে বলেও প্রশাসন জানিয়েছে। খাতড়ার মহকুমা শাসক তনয় দেব সরকার এদিনও বলেন, “সরকারি অনুমোদনপ্রাপ্ত মদের দোকান হলে আমাদের কিছুই করার নেই। এর থেকে সরকারি ভাবে রাজস্ব আদায় হবে। তবে মদের দোকানকে কেন্দ্র করে এলাকায় কোনও অশান্তি হলে আমরা অবশ্যই তা ঠেকাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।” তবে এদিন বিক্ষোভের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হয় হীরাবাঁধ থানার পুলিশ। বিকেল নাগাদ এলাকাবাসীর বিক্ষোভ উঠে যায়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.