টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: ফের চিকিৎসার গাফিলতিতে রোগীমৃত্যুর ঘটনা রাজ্যে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীকে স্ক্যান করিয়ে ফের ওয়ার্ডে নিয়ে আসার সময় খুলে যায় মুখ থেকে অক্সিজেনের নল। আর তাতেই কিশোরের মৃত্যু হল। শনিবার দুপুর নাগাদ ঘটনাটি ঘটে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। নবনির্মিত মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ারে চিকিৎসাধীন ওই রোগীকে এক্স-রে করতে নিয়ে যাওয়ার সময় ওই রোগীর সঙ্গে কোনও অ্যাটেনডেন্ট দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। কর্মীর অভাবে এই হাসপাতালে পরিষেবা দিতে না পারায় রাজ্যের দিকে আঙুল তুলছেন এই বাঁকুড়া মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তাব্যক্তিরা। মৃত রোগীর নাম অশোক ধীবর। বয়স ১২। পুরুলিয়ার মানবাজার থানার জিতুজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা ওই কিশোরকে গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ন’টার দিকে পেটে ব্যাথা এবং শ্বাসকষ্ট নিয়ে ভর্তি করা হয় এই বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার হাবে।
জানা যায়, এই ওয়ার্ডটিতে মহিলাদের চিকিৎসা হওয়ায় পুরুষদের যাতায়াতের ওপর বিশেষভাবে নজরদারির জন্য নিরাপত্তা রক্ষীদের কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই কারনে বহু আবেদন নিবেদন করার পরেও ওই ওয়ার্ডে পুরুষদের ঢুকতে দেন না নিরাপত্তারক্ষীরা। বছর বারোর এই কিশোর ভর্তির পর থেকেই এই মাদার অ্যান্ড চাইল্ড কেয়ার হাবের দোতলায় ৪৮ নম্বর বেডে চিকিৎসা চলছিল। চিকিৎসাধীন ওই সপ্তম শ্রেণির ছাত্রের সঙ্গে ছিলেন তার মা মমতা ধীবর আর মাসি তুলসিরানি ধীবর। ছেলের মৃত্যুর পর থেকেই মুর্ছা গিয়েছেন মমতা দেবী। তুলসিদেবী বলছেন, “ওয়ার্ডে পুরুষদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি তাই আমরা দুই মহিলা ওই বারো কেজি ওজনের অক্সিজেন সিলিন্ডার সমেত বছর বারোর সন্তানকে হাতে ঝোলানো স্ট্রেচারে করে সিঁড়ি ভেঙে ওই ওয়ার্ডের দোতলা থেকে নামিয়ে হাসপাতালের এমার্জেন্সি ওয়ার্ড সংলগ্ন স্ক্যান সেন্টারে নিয়ে যাই। স্ক্যান করিয়ে ওয়ার্ডে ফেরার সময় মাঝপথে উঁচু থেকে নিচে নামার সময় সিলিন্ডারটি স্ট্রেচার থেকে পড়ে ফেটে যায়। উচু থেকে দশ–বারো কেজির সিলিন্ডারটি মাটিতে পড়া মাত্রই সিলিন্ডারে থাকা কাচের জার সমেত নলটি ফেটে যায়। রোগীর নাকে মুখে লাগানো নলগুলিও খুলে যায়। ঘটনাস্থল থেকে তাড়াহুড়ো করে ফের সিঁড়ি ভেঙে ওয়ার্ডে নিয়ে যাবার পর কিশোরটিকে মৃত বলে ঘোষনা করেন চিকিৎসকরা।”
অভিযোগ, রোগীকে ওয়ার্ড থেকে নামানো এবং সিলিন্ডার ফেটে অক্সিজেনের নল খুলে যাওয়ার পরেও এই ওয়ার্ডের লিফটে গিয়ে পরিষেবা পাননি এই দুই মহিলা। প্রশ্ন উঠেছে কেন অসুস্থ রোগীকে ওয়ার্ডে রেফার করার সময় কেন সহচর দেওয়া হয়নি? কেন ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রোগীকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার সময় আত্মীয়াকে লিফটের পরিষেবা দেওয়া হয়নি। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ওই কিশোরের মর্মান্তিক এই মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান রোগীর আত্মীয়রা। হাসপাতালে অশান্তির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে চলে আসে বাঁকুড়া সদর থানার পুলিশ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিতে অস্বীকার করার অভিযোগ তুলেছেন মৃত কিশোরের জেঠু গৌতম ধীবর। তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টির অভিযোগ নিয়ে গিয়েছিলাম হাসপাতাল সুপার শুভেন্দু বিকাশ সাহার কাছে। তাঁর কথায়, ওই কিশোরের মৃত্যুতে চিকিৎসা সংক্রান্ত কোন অভিযোগ নেই তার আত্মীয়দের। তবে ঘটনার পর এবিষয়ে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তার দেখা পাওয়া যায়নি। তবে কেন ওই রোগীকে অ্যাটেনডেন্ট দেওয়া হয়নি, ওই দুই মহিলা রোগী এবং অক্সিজেন সিলিন্ডার সমেত স্ট্রেচার হাতে ঝুলিয়ে নামার সময় কেন লিফটের পরিষেবা পেলেন না সেসব উত্তর পাওয়া যায়নি শুভেন্দুবাবুর কাছে। মৃত ওই কিশোরের আত্মীয়রা বাঁকুড়া সদর থানায় লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
ছবি- প্রতিবেদক
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.