Advertisement
Advertisement

Breaking News

শিকেয় সরকারি সুবিধা, অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাতেও দেদার কালোবাজারি

‘নিশ্চয়যান’ ঘিরে অনিশ্চয়তা।

Patients are being cheated, govt ambulance service under scanner
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:December 14, 2017 2:16 pm
  • Updated:September 19, 2019 2:52 pm

নন্দন দত্ত, বীরভূম: এক অ্যাম্বুল্যান্স। দুই রোগী। যাকে ঘিরে তুলকালাম কাণ্ড সিউড়ি জেলা সদর হাসপাতালে। বিস্তর অশান্তি। কিন্তু কারা হইচই করল। রোগীরা আত্মীয়রা, নাকি অ্যাম্বুল্যান্স চালকেরা। হাসপাতাল চত্বরে যারা নিয়মিত যান তারা জানেন এর রহস্যটা। এর পিছনে লুকিয়ে আছে অ্যাম্বুল্যান্স দুর্নীতির মহাচক্র। অসুস্থ রোগীদের সুস্থ করার স্বপ্ন ঘিরে জেলা জুড়ে অবাধে শুরু হয়েছে এমন অসাধু কাজ।

[কেজি প্রতি ভরতুকি, সার কিনতে গিয়ে প্রতারণার ফাঁদে কৃষকরা]

Advertisement

অ্যাম্বুল্যান্স ঘিরে চক্র

Advertisement

অ্যাম্বুল্যান্স ঘিরে অভিযোগের শেষ নেই। রোগীর আত্মীয়রা শুধু ব্যস্ত থাকেন অসুস্থ মানুষটাকে সুস্থ করার জন্য। সেই আশাটুকু নিয়ে হাসপাতাল থেকে রেফার করা রোগী চলে যাচ্ছে নার্সিংহোমে। মোটা কমিশনে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে অসুস্থ রোগী। সরকার তাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে মাতৃযান চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। যেখানে একটি অ্যাম্বুল্যান্সে একজন রোগী যাওয়ার কথা। কিন্তু সুযোগ বুঝে এক অ্যাম্বুল্যান্স যাত্রায় দুটি ভাড়া আদায় করছে চালকেরা। আবার কোথাও রেফার করা রোগী ছাড়াও চাপছে অন্য রোগী। গ্রামের লোক বিনা পয়সায় অ্যাম্বুল্যান্স পেয়েই খুশি। কিন্তু এই সরল সাহায্যের পিছনেই লুকিয়ে আছে দুর্নীতির থাবা। সরকারি নিয়মে স্বাস্থ্য পরিষেবার জন্য প্রসূতি থেকে ছ’মাস পর্যন্ত মা ও শিশুকে বিনা খরচায় বহন করবে অ্যাম্বুল্যান্স। এছাড়াও এক বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে চিকিৎসার জন্য যেখানে দরকার সেখানে বিনা ভাড়ায় নিয়ে যাবে অ্যাম্বুল্যান্স।

[সরকার পাঠাচ্ছে খাদ্যসামগ্রী, কোন চক্র উধাও করছে রেশনের চাল-গম?]

এক গাড়িতে একাধিক রোগী

তাহলে গণ্ডগোল কোথায়। সরকারি এই সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে এক গাড়িতে দুই ভাড়া আনছে অ্যাম্বুল্যান্স। বীরভূমের লোকপুর থেকে আসা একই অ্যাম্বুল্যান্স দুটি অসুস্থ শিশুকে ঘিরে হইচই হল সিউড়িতে। শিশু দুটির একটিকে চিকিৎসক দেখলেন। অন্যটিকে দেখতে চাইলেন না বলে অভিযোগ। চিকিৎসক অ্যাম্বুল্যান্সের রেফার কাগজ দেখতে চেয়েছিলেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে চালকেরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য তখন রোগীর আত্মীয়দের সামনে লেলিয়ে দেন। আবার কোনও কোনও ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের ভয়ও দেখানো হয়। আবার কোথাও কোথাও চিকিৎসকদের একটা চক্র এই অ্যাম্বুল্যান্স জালিয়াতিতে যুক্ত বলে অভিযোগ। গত অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর প্রতিমাসে দুবরাজপুরে মাতৃযানের গাড়ি ভাড়া নিয়ে তেমনই এক চক্রের হদিশ পায় প্রশাসন। যেখানে প্রতি মাসে মাতৃযান ভাড়া বাবদ চালকদের মেটাতে হয়েছে গড়ে আট লাখ টাকা। যা দেখে চক্ষু চড়ক গাছ হয়ে যায় জেলা স্বাস্থ্য কর্তাদের। তদন্তে নামে জেলা স্বাস্থ্য দফতর। তদন্তের নির্দেশ দেন।  ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের হাত থেকে আর্থিক ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়। তদন্তে নেমে স্বাস্থ্য আধিকারিকরা দেখেন যত না রোগী এসেছে তার থেকে মাতৃযানের বিল এসেছে দ্বিগুন। যার প্রতিটিতে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকের সই থাকলেও দায়িত্বরত কর্মী এ এন এমের সই নেই।

[ঘিতে মিশছে রাসায়নিক-চর্বি, কীভাবে ভেজাল ধরবেন?]

ব্যবস্থা নিতেই কমে গেল গাড়ি

জাতীয় গ্রামীণ পরিষেবার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ টাকায় এভাবে নয়ছয় দেখে  কড়া হাতে মোকাবিলার নির্দেশ দেন মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক । দেখা যায় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে শিশু জন্মের পর তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার যা বিল না হয়েছে তার দ্বিগুন বিল হয়েছে অসুস্থ শিশুকে হাসপাতালে দেখাতে আসার জন্য গাড়ি যাওয়া আসা করায়। স্বাস্থ্য দপ্তর প্রথমেই সমস্ত এএনএমের নমুনা সই দপ্তরে সংগ্রহ করে রাখে।  প্রতিটি গাড়ির বিলে এ এন এমের সই বাধ্যতামূলক করা হয়। সেই বিল সংগৃহীত নমুনার সঙ্গে মিলিয়ে দেখে নেওয়া হয়। তাতেই প্রতিমাসের আট লাখ টাকার বিল নেমে আসে তিন লাখের নিচে। এমনকী অক্টোবর থেকে ২২ লাখ টাকার বিল শেষমেষ ১২ লাখ  টাকায় নেমে আসে। স্বাস্থ্য চক্র ধরা পরতেই খাতায় কলমে নথিভুক্ত থাকা ৩০ টি মাতৃযান বর্তমানে নেমে দাঁড়ায় ১৮ তে।

[দেখতে ছানা টাটকা, দুধ কাটাতে ব্যবহার হচ্ছে ‘বিষ’]

অনিয়মের অন্য পথ

দুবরাজপুরে অনিয়ম ধরা পরতেই এবার অন্য পথ নিয়েছে চালকেরা। তবে শুধু এক গাড়িতে দুজন নয় রোগীর অবস্থা ও ক্ষমতা বুঝে তাদের কাছে ‘বাড়তি’ আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। চালকের দুর্ব্যবহারের শিকার অনেকেই। তাই রোগ ধরা পড়তেই শুরু হল দাওয়াইয়ের খোঁজ। এখন অ্যাম্বুল্যান্সের রোগ সারাতে এবার অন্য চিকিৎসার কথা ভেবছে বীরভূমের স্বাস্থ্য দপ্তর।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ