দীপঙ্কর মণ্ডল: লকডাউনে হাঁড়িতে চাল নেই। আমফান (Amphan) কেড়েছে মাথার ছাদ। তবু মাধ্যমিকের মেধাবী ছেলেটি স্বপ্ন দেখে ডাক্তার হবে। সুন্দরবনের দুস্থদের সেবা করবে। মাত্র ২ নম্বরের জন্য মাধ্যমিকের (Madhyamik) মেধাতালিকায় প্রথম দশে ঠাঁই মেলেনি। বাবা দিনমজুর। গত কয়েক মাস লকডাউনের কারণে কর্মহীন। মা গৃহবধূ। বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আমফানে ঘরের চাল উড়ে গিয়েছে। এই পরিবারের ছেলে রাখিয়াজ মোল্লা। সুন্দরবনের মথুরাপুরের কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাইস্কুলের এই দুস্থ ছাত্রটি মেধার নিরিখে চমকে দিয়েছে সবাইকে। এবছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৭০০-র মধ্যে ৬৮১ নম্বর (৯৭.৩০%) পেয়েছে সে। উল্লেখ্য, মেধাতালিকায় দশম স্থানাধিকারীদের প্রাপ্ত নম্বর ৬৮৩।
রাখিয়াজ জানে না মাত্র ২ নম্বরের জন্য সে প্রথম দশে ঢুকতে পারেনি। ফল প্রকাশের পর মিষ্টির প্যাকেট এবং কিছু নতুন বই নিয়ে হাজির হয়েছেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক চন্দন মাইতি। তিনি জানালেন, পরিবারের যা অবস্থা তাতে কেউ সাহায্য না করলে রাখিয়াজের পড়াশোনাই হবে না। মেধাবী ছাত্রটির বাবা আলাউদ্দিন মোল্লা জানালেন, “দিনমজুরি করে আমাদের পেট চলে। কিন্তু কয়েক মাস কাজ নেই। দু’মুঠো ভাতই জোগাড় হচ্ছে না তো ছেলেকে কী করে পড়াব?” রাখিয়াজের ছোট ভাইকে কোলে নিয়ে মা বললেন, “করোনা, লকডাউন এবং আমফান ঝড়ের কারণে আমরা আরও গরীব হয়ে গিয়েছি। বাড়িতে পেট ভরে খাওয়ার মতো রসদ নেই। ছেলেকে কী করে পড়াব?”
[আরও পড়ুন: করোনায় মৃত ‘ফ্রন্টলাইনার’দের পরিবারের সদস্যকে চাকরি দেবে রাজ্য]
আর্থিক অসচ্ছলতা তার পড়াশোনায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না বলেই বিশ্বাস করে রাখিয়াজ মোল্লার। হাসিমুখে সে বলে, “কোনও সহৃদয় ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান নিশ্চয়ই আমাকে সাহায্য করবে। আমি বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চাই।” কৃষ্ণচন্দ্রপুর হাই স্কুলেই বিজ্ঞান শাখায় ভরতি হয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায় সে। স্বপ্ন দেখে ভবিষ্যতে ডাক্তার হয়ে সুন্দরবনের গরিব মানুষের পাশে দাঁড়াবে। রাখিয়াজের ডাক্তার হবার স্বপ্নকে বাস্তব করতে ফেরেস্তার মতো এগিয়ে এল ‘আল আমিন মিশন’।