মৃন্ময় লাহিড়ী, কোচবিহার: তিন কন্যা। তিনজনই মানসিক ভারসাম্যহীন। বাবা নেই। রয়েছে কেবল বৃদ্ধা মা। এক সময় ঘটিবাটি বেচে দিয়ে চিকিৎসা করলেও বর্তমানে টাকার অভাবে সব চিকিৎসা বন্ধ। তাই মানসিক ভারসাম্যহীন তিনকন্যাকে নিরুপায় হয়ে শিকল দিয়ে বেঁধেই রাখা হয়েছে। গত বেশ কয়েকবছর ধরে এভাবেই শিকল দিয়ে বাধা জীবন কাটাচ্ছে তাঁরা।
ঘটনাটি ঘটেছে কোচবিহারের মাথাভাঙা ২ নম্বর ব্লকের বড়শোলমারী গ্রাম পঞ্চায়েতের সিঙ্গিমালি গ্রামে। এই গ্রামেরই বাসিন্দা বাড়ুই পরিবার। বাড়ির উঠোনেই বাঁধা থাকে তিন মেয়ে পার্বতী, অর্চনা এবং পূরবী। পার্বতীর বয়স ৩০ বছর, অর্চনার বয়স ২৭ বছর এবং পূরবীর বয়স ২৪ বছর। সত্তর বছর বয়সি মা অবলাদেবীই তিন মেয়ের দেখাশোনা করেন। এক ছেলে থাকলেও সে নিজের সংসারের অন্নসংস্থানেই ব্যস্ত। জানা গিয়েছে একটা সময় সবই স্বাভাবিক ছিল। পার্বতী, অর্চনা, পূরবী তিনজনই পড়াশোনা করত। পার্বতী ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত, অর্চনা পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এবং পূরবী সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। তারপরেই নদিয়ায় বিয়ে হয়ে যায় পার্বতীর। কিন্তু বিয়ের কিছুদিন পরেই মানসিক সমস্যা দেখা দেয় তাঁর। শ্বশুরবাড়িতে কিছুদিন চিকিৎসা করলেও কোনও কাজ হয়নি। বছর পাঁচেক আগে এক কন্যা সন্তান–সহ পার্বতীকে বাপের বাড়িতে রেখে যায় তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন।
বড়মেয়ের মানসিক ভারসাম্য হারানোর কিছুদিন পর থেকে প্রথমে অর্চনার তারপর পূরবীরও মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তাঁদের সুস্থ করতে চিকিৎসাও শুরু হয়। প্রয়োজনীয় যে খরচা তার জন্য ঘরের সব কিছুই বিক্রি করে দিতে হয়। বর্তমানে ভিটে ছাড়া অবশিষ্ট আর কিছুই নেই। টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে মাঝপথেই। মানুষকে কামড়ানো, আঁচড়ানোর ঘটনা ঘটতে থাকায় বাধ্য হয়ে তিন মেয়েকেই শিকলে বন্দি করে রেখেছেন মা। মা অবলাদেবী বলেন, তিনি এখনও জীবিত। মরে গেলে এই তিনজনের কী হবে তা ভেবেই ঘুমোতে পারেন না। অন্যের কাছ থেকে চেয়েচিন্তে দিন চলে। চিকিৎসা করাবেন কী করে? গ্রামের অনেকে বলে এদের কোনও ট্রেনে তুলে দিতে। কিন্তু মা হয়ে একাজ করবেন কী ভাবে? এই প্রসঙ্গে বড়শোলমারী গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান উৎপল বিশ্বাস বলেন, গ্রাম পঞ্চায়েত এব্যাপারে কিছু করতে পারবে না। এর জন্য তাঁদের কোনও তহবিল নেই। তারা খুব বেশি হলে চিকিৎসার জন্য যাতায়াত বাবদ কিছু অর্থ সাহায্য করতে পারেন। এদিকে, মাথাভাঙা ২ নম্বর ব্লকের বিডিও মোগপন বি লামা বলেন, বিষয়টি তার জানা ছিল না। তিনি উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেবেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.