Advertisement
Advertisement
Covid-19

করোনা আবহে কাজ নেই, এক প্রকার অনাহারেই দিন কাটছে বাসচালক-কন্ডাক্টরদের

করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সংক্রমণ বৃদ্ধি রুখতে বন্ধ বেসরকারি বাস চলাচল।

Private Bus drivers and Conductors are in trouble as public transport suspended for Corona Pandemic | Sangbad Pratidin
Published by: Abhisek Rakshit
  • Posted:June 23, 2021 8:51 pm
  • Updated:May 29, 2023 5:08 pm

গোবিন্দ রায়, বসিরহাট: প্রায় দেড় দু’মাস হতে চলল বসিরহাটের (Basirhat) ৭২ নম্বর বাস স্ট্যান্ডে সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে বেসরকারি বাসগুলো। চারপাশে ঘুরঘুর করছেন বাসের চালক, কন্ডাক্টর, খালাসিরা। কী করবেন? কাজ তো নেই। বাড়ি থাকলেই অভাব অনটনের সংসারে নিত্য ঝামেলা লেগেই রয়েছে। তাই বাধ্য হয়েই সকাল হতেই বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়েন ওঁরা। বাড়ি ফেরেন একেবারে রাতে। তারপর সেই অশান্তি, এটা নেই, ওটা নেই। নেই আর নেই। এটাই এখন তাঁদের নিত্যদিনের সঙ্গী। বলতে গেলে কাজ হারিয়ে একপ্রকার অনাহারেই দিন কাটাচ্ছেন বাসচালক ও কন্ডাক্টররা।

গতবছর একেবারে অলিখিত ভাবেই হানা দিয়েছিল মারণ ভাইরাস করোনা। সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। রুটিরুজি হারিয়ে এক প্রকার না খেতে পেয়ে অভাব-অনটনে দিন কাটাচ্ছিলেন খেটে খাওয়া মানুষগুলো। চলতি বছরের শুরুতে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় আবার নতুন করে বাঁচার অক্সিজেন পান ওঁরা। কিন্তু কয়েকমাস যেতেই আবার সেই মারণ ভাইরাস করোনার ধাক্কায় একেবারে কোণঠাসা তাঁরা। বছরের শুরুর দিকে কিছুটা ধুঁকতে ধুঁকতে চললেও মে মাসে এসে রাজ্যজুড়ে জারি হওয়া করা বিধিনিষেধের জেরে বন্ধ হয়ে যায় গণপরিবহন ব্যবস্থা। যার ফলে একপ্রকার কাজ হারিয়েই বাড়িতে বসে দিন কাটছে ওঁদের। গতবছর সরকারের তরফে কিছু সুবিধা পেলেও এবার কিছুই জোটেনি। সেরকম কোন সাহায্য না পাওয়ায় ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন বাস চালক, কন্ডাক্টররা।

Advertisement

[আরও পড়ুন: ‘খোঁজ নেই বাবুল সুপ্রিয়র’, সাংসদের নামে পোস্টারে ছয়লাপ জামুরিয়া]

জানা গিয়েছে, সমাজে ‘দিন আনে দিন খায়’ শ্রেণীর মানুষ যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের তালিকায় বাস শ্রমিকদের একটা বড়ো অংশ রয়েছে। রাজ্যে বেসরকারি বাস চলে প্রায় ৪২ হাজার। প্রতি বাসের সাথে কমপক্ষে গড়ে ২-৪ জন করে যুক্ত আছেন। হিসেব বলছে এক লক্ষের বেশি মানুষ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। বসিরহাট মহাকুমা জুড়েও এই সংখ্যাটা কম নয়। দেড় হাজারের মতো শ্রমিকের রুটিরুজি এই বেসরকারি বাসের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। তাঁদের আয়ের ওপর নির্ভর করে থাকে তাঁদের পরিবারও। ফলে রোজগার না হওয়ায় ব্যাপক বিপাকে পড়েছে একটা বড় অংশ। বসিরহাটে স্থানীয় বাস শ্রমিকদের সংগঠনগুলির সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, বসিরহাট থেকে ১৪টি রুটে ৩৫০টি বাস চলে। বসিরহাট থেকে বারাসাত, ধর্মতলা, বনগাঁ, এছাড়াও ন্যাজাট, ধামাখালি, লেবুখালির মতো রুটের বাসের চালক, কন্ডাক্টর খালাসী মিলিয়ে দেড় হাজারের বেশি মানুষ যুক্ত রয়েছেন।কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে যেভাবে বাস পরিষেবা বন্ধ রয়েছে তাতে একদিকে যেমন বিপাকে পড়েছেন বাস শ্রমিকরা। অন্যদিকে দুবেলা-দুমুঠো খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকাই তাঁদের কাছে এখন বড় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বসিরহাট থেকে ন্যাজাট ধামাখালি রুটের বাস শ্রমিকদের সংগঠনের সম্পাদক আশরাফুল মন্ডল জানান, “যাতে কোনো রকমে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকি সে বিষয়ে সাহায্যের হাত বাড়াক সরকার। গত বছর বাস শ্রমিকদের ফান্ড এবং মালিক সংগঠনের তরফ থেকে সামান্য কিছু চাল ডাল ছাড়া আর কোন সাহায্য পায়নি। এবছর তাও জোটেনি। তাই সংসার চালানো এখন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর কিছুদিন গেলে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হবে।”

Advertisement

অপরদিকে বারাসাত থেকে ধর্মতলাগামী বাস রুটের শ্রমিক সংগঠনের সম্পাদক স্বপন দাস জানান, “গত ৪০ বছর ধরে বাস চালাচ্ছি এইরকম দিন কখনও আসেনি। আমাদের যে কীভাবে দিন চলছে, কেউ খোঁজ নেয় না। ভোটের সময় অনেক নেতাদের দেখতে পাওয়া যায় কিন্তু এই পরিস্থিতিতে ঘরে হাঁড়ি চড়ছে না, সে বিষয়ে কেউ খোঁজ নেয় না।” বসিরহাটের আশরাফুল, স্বপনদের মতো একই রকম অবস্থা সারা রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আকবর, রবিউল, প্রতাপ, তপন, রবি, সুমন, সুপ্রভাতদেরও।

[আরও পড়ুন: Corona Virus: একদিনের শিশু ‘পজিটিভ’, মাতৃগর্ভেই কি সংক্রমণ? বাড়ছে আতঙ্ক]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ